রায়ের কপি পেলে সিদ্ধান্ত নিবে সরকার বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে এখনই ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছে না বাংলাদেশ
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: পদ্মা সেতু প্রকল্পে পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। কানাডার আদালত মামলা খারিজ করে দিয়েছে। আসামিরাও বেকসুর খালাস পেয়েছেন। এতে সরকার সন্তুষ্ট যে, তাদের অবস্থান সঠিক ছিল। বাংলাদেশের উপর অভিযোগ প্রমাণের জন্য নানাভাবে চাপ দিলেও তা শেষ পর্যন্ত টিকেনি বিদেশি আদালতেও। এই মামলা খারিজ করার মধ্যদিয়ে বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ মিথ্যে প্রমাণ হলেও বাংলাদেশ আপাতত বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছে না।
বিশ্বব্যাংকের ওই সময়ের যারা দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছিল সেই সব ব্যক্তির ব্যাপারে কি করা উচিত সেটা ভাবা দরকার। তাছাড়া বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করলে আগামী দিনে বাংলাদেশে তারা অর্থায়ন করছে এমন সব প্রকল্পে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তাই সরকার কানাডার মামলার রায় দেখে তড়িঘড়ি করে কোনো সিদ্ধান্ত নিবে না। এই ব্যাপারে সময় নিতে চাইছে। এছাড়া রায়ের কপি না পেয়েও খুব বেশি আঘাত করতে চাইছে না বিশ্বব্যাংককে। তাছাড়া এই ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীই সিদ্ধান্ত দিবেন কি করা হবে। তবে সরকারের মন্ত্রীরা বিভিন্নভাবে সমালোচনা করে বিশ্বব্যাংককে চাপে রাখতে চাইছে। এছাড়া আইনমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব¦ ব্যাংককে বাংলাদেশের কাছে, প্রধানমন্ত্রীর কাছে এবং এই মামলার আসামিদের কাছে মাফ চাইতে হবে। যদি মাফ না চান, অর্থমন্ত্রীকে বলব, তিনি যেন প্রটেস্ট নোট পাঠান। এ বিষয়টি নিয়ে ঋণদাতা বৈশ্বিক সংস্থাটির কাছে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
সরকারের একজন নীতি নির্ধারক মন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের যে অভিযোগ এনেছিল তারা তা প্রমাণ করতে পারেনি। কানাডার আদালত তাদের কাছে তথ্য প্রমাণের জন্য নথিপত্র চেয়েছিল তারা সেই সব নথিপত্রও উপস্থাপন করেনি। কেন করতে পারবে না এরও ব্যাখ্যা দিয়েছিল। এই অবস্থায় বিশ্বব্যাংক অভিযোগ কানাডার আদালতে ও বাংলাদেশে দুর্নীতি দমন কমিশনে প্রমাণ করতে না পারলেও এতে করে বিশ্বব্যাংকেরই এখন ইমেজ সংকট দেখা দিয়েছে। তাদের মতো এত বড় ও আন্তর্জাতিক একটি প্রতিষ্ঠান কোনো মহলের ফাঁদে পড়েই হয়তো এই ধরনের অভিযোগ করেছে। অভিযোগ তোলার আগে তারা সবদিক বিবেচনা করেনি। করলে হয়তো আরও ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিতো।
বিভিন্ন মহল থেকে কথা উঠেছে বিশ্বব্যাংককে ক্ষমা চাইতে বলার জন্য আবার কেউ কেউ বলছে বিশ্বব্যাংকের কাছে জবাব চাইতে হবে। সরকার এখন বিভিন্ন মহলের প্রতিক্রিয়া দেখছে। সরকার এনিয়ে কোনো ধরনের তড়িঘড়ি করবে না। ধৈর্য্য সহকারেই এই ব্যাপারে পদক্ষেপ নিবে। সেই জন্য বাংলাদেশের তরফ থেকে বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে হলে সেই জন্য কানাডার আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি দরকার। ওই সব কপি পাওয়ার পর সেটা বিবেচনা করতে হবে। পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করতে হবে। পর্যালোচনা করার পর আইনি বিষয়গুলো দেখতে হবে। সেই হিসাবে সরকারের উচ্চপর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সূত্র জানায়, দুদকের তরফ থেকে ও আইন মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে এই ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হবে। আইনমন্ত্রী এনিয়ে কানাডাও সফর করতে পারেন। এর আগে তিনি দুদকের প্রতিনিধিকে নিয়ে কানাডা সফর করেন এবং সেখানে মামলার কপি চান এবং নথিপত্র চান। কিন্তু তারা দিতে আইনি বাঁধা থাকার কারণে অপরাগতা প্রকাশ করেন। এবং জানিয়েছিলেন মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার পর এই ব্যাপারে বাংলাদেশকে তথ্য দিবে। এখন সেই প্রতিশ্রুতির সূত্র ধরে বাংলাদেশ সহায়তা চাইবে। সেই হিসাবে কানাডা থেকে তথ্য, নথি ও মামলার রায়ের কপি পাওয়ার চেষ্টা করবেন আইনমন্ত্রী ও দুদকের সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আনিসুল হক।
আনিসুল হক বলেন, আমরা কানাডার আদালতের মামলার রায়ের কপি আনবো। সেটা পাওয়ার পর পর্যালোচনা করবো। আইনি দিকগুলোও দেখা হবে। এরপর কি করণীয় সেই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত দিবেন। প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত নিবেন সেই হিসাবেই কাজ করা হবে। কেবল মুখের কথা বললে হবে না। আইনি ভিত্তিও দেখতে হবে। সম্পাদনা: এনামুল হক