হিলারি ক্লিনটনকে সাথে নিয়ে ড. ইউনূস পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বাতিল করেছিল: বাণিজ্যমন্ত্রী
জাফর আহমেদ ও সাইদ রিপন: বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে দুর্র্নীতির অভিযোগ তুলে আমাদের ঘাড়ে দুর্নীতির কলঙ্ক চাপাতে গিয়ে নিজেরাই চপেটাঘাত খেয়েছে। ষড়যন্ত্রে নোবেল জয়ী প্রফেসর ড. ইউনূস এবং আমেরিকার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের নাম এসেছে। তারা সেতুর অর্থায়ন বাতিল করেছিলেন। গতকাল পৃথক দুইটি অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর একটি হোটেলে জনতা ব্যাংকের বার্ষিক সম্মেলন অপরটি ছিল সচিবালয়ে শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ।
দেশে কিছু লোক আছে যারা উন্নয়নের পথে বাধা সৃষ্টি করতে চায়। ওই সব চক্রান্তকারীই পদ্মা সেতু প্রকল্পে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তাই পদ্মা সেতু নিয়ে যারা চক্রান্ত করেছিলো তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা যখন পদ্মা সেতু তৈরির উদ্যোগ নিয়েছি তখন কিছু লোকের প্ররোচনায় বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন থেকে সরে গেছে। বিশ্বব্যাংকের সাথে তাল মিলিয়েছে আমাদের দেশের কিছু বুদ্ধিজীবী। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের বক্তব্য উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে সব বুদ্ধিজীবীর ক্ষমা চাওয়া উচিত।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতি ষড়যন্ত্রের নামে কলঙ্কের বোঝা চাপানো হয়েছিল। যেখানে কিছু লোক ষড়যন্ত্র করেছেন। এক্ষেত্রে নোবেল জয়ী প্রফেসর ড. ইউনূস, আমেরিকার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের নাম এসেছে।
এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। তবে তারা যে অন্যায় কাজ করেছে এজন্য দেশের মানুষ তাদের ধিক্কার দেবে। ঘৃণা করবে। এটাই তাদের সবচেয়ে বড় শাস্তি।
মন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু হওয়ার কথা ছিল ২০১৫ সালে। এখন এটি ২০১৮ সালে শেষ হবে। আমরা যে এতোদিন পিছিয়ে গেছি। এতে আমাদের অনেক আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এই সেতু হলে প্রতিবছর আমাদের জিডিপিতে ২ শতাংশ যোগ হতো। সেটি থেকে আমরা বঞ্চিত হয়েছি।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অন্যায়ের কাছে মাথানত করবেন না। যে কারণে তিনি নিজ অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ শুরু করেছেন। পদ্মা সেতু নিয়ে চক্রান্তকারীরা এখন আবার বাগেরহাটের রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে চক্রান্ত করছে বলেও মন্তব্য করেন তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে কাজ করছেন। তিনি কখনও পিছু হটবেন না।
২০১০ সালে দেশের বৃহত্তম এই সেতু প্রকল্পের কাজ শুরুর আগে আগে দুর্নীতি চেষ্টার অভিযোগে সরকার দলের নেতারা জড়িত বলে অভিযোগ করে বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন আগেই এই অভিযোগ তদন্ত করে তা গ্রহণ না করলেও এই তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন রয়েই যায়। তবে প্রায় সাত বছর পর গত শুক্রবার কানাডার একটি আদালতের রায় প্রকাশ হওয়ার পর এ নিয়ে বিভ্রান্তি পুরোপুরি কেটে যায়। বিচারক বলেছেন, পদ্মা সেতুকে দুর্নীতি চেষ্টার অভিযোগ গালগপ্প। শোনা কথার ভিত্তিতে এই অভিযোগ আনা হয়েছিল। অথচ বিশ্বব্যাংকের এই অভিযোগের কারণে কার্যত পাঁচ বছর পিছিয়ে যায় এখন পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্পটি। পদত্যাগ করেন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন। তবে ভীষণ চাপে পড়েও নিজ অর্থে সেতুর কাজ এগিয়ে নেয় সরকার।
কানাডার আদালতের রায় প্রকাশের পর সরকারের সমালোচকরা অনেকটাই চুপসে গেছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলছেন, কানাডার আদালতে কী প্রমাণ হয়েছে সেটা তাদের বিবেচনার বিষয় নয়। এই সেতু নিয়ে অভিযোগ উঠেছিল আর তারা সেটা নিয়েই বলেছিলেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান বলেছেন, সেতু প্রকল্প নিয়ে অভিযোগ করায় বিশ্বব্যাংককে এখন প্রশ্ন করা উচিত। তবে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাটিকে দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের বিরুদ্ধে কোনো আইনি পদক্ষেপ নেওয়া যায় না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বব্যাংকের এই অভিযোগ তোলার পেছনে গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মুহম্মদ ইউনূসকে দায়ী করেছিলেন। বাণিজ্যমন্ত্রীও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে ড. ইউনূস পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন বাতিল করিয়ে ছিলেন। সম্পাদনা: হাসান আরিফ