ষড়যন্ত্রকারীদের তদন্ত করে বের করতে হবে : ব্যারিস্টার শফিক বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করার সুযোগ দেখি না
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেছেন, বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মামলা করার সুযোগ দেখি না। কারণ বিশ্বব্যাংকের আইনে বিভিন্নভাবেই ওই প্রতিষ্ঠানকে প্রোটেকশন দেওয়া হয়েছে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের আইনেই সুরক্ষা দেওয়ায় মামলা করে তেমন সুবিধাও পাওয়া যাবে না বলে মত দেন তিনি। শফিক আহমেদ বলেন, তারা তো এখানে এমন কোনোকিছু করেনি যা অন্যায় কিংবা বেআইনি। অভিযোগ যে কেউ যে কারও বিরুদ্ধে করতে পারে। বিশ্বব্যাংকের কাছে অভিযোগ গেছে। তারা তথ্য পেয়েছে। বিশ্বব্যাংক যেহেতু পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এই জন্য অভিযোগ পাওয়ার পর অনুসন্ধান ও তদন্ত করার জন্য চাপ তৈরি করে। এটা তারা করতে পারে। এটা দোষের কিছু না। কারণ যে অভিযোগ দিয়েছে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে এমন কোনো কারণ আমি দেখি না।
ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, বিশ্বব্যাংক অর্থদাতা প্রতিষ্ঠান হিসাবে যখন অভিযোগ পেয়েছে তারা অভিযোগ দিয়েছে। অভিযোগ দেওয়ার পর এর সুষ্ঠু তদন্ত করে তাদেরকে রিপোর্ট দিয়ে দিলেই হতো। কিন্তু আমাদের দেশে ওই দুর্নীতির অভিযোগের ব্যাপারে এত বেশি প্রচার ও প্রচারণা চালানো হয়েছে, তা ঠিক ছিল না। খুবই খারাপ হয়েছিল। যারা প্রচারণা চালিয়েছে তারা দেশের ইমেজের কথা চিন্তা করেনি। তারা খবর প্রকাশটাইকেই বড় করে দেখেছে।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক অভিযোগ করার পর তা বাংলাদেশ ও কানাডায় প্রমাণ হয়নি। প্রমাণ না হওয়ার কারণে এখন দেখা গেল তাদের অভিযোগ সত্যি নয়। এটা আরও আগেই হতে পারত। কিন্তু হয়নি এটা নিয়ে কোনো কোনো মহল ষড়যন্ত্র করেছে। সেই মহলকে বের করতে হবে। আর বিশ্বব্যাংকের কে বাংলাদেশের কাছে অভিযোগ করেছিল সেই নামও বের করতে হবে। প্রয়োজনে সেই ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনা যেতে পারে। বিশ্বব্যাংকের কে বাংলাদেশকে জানিয়েছিল তার নামও প্রকাশ করা দরকার। তাদের বিরুদ্ধে ব্যক্তি হিসাবে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে। তবে এর আগে তাদের কাছে জবাব চাইতে হবে। কেন এটা করেছিলেন। তাদের সঙ্গে কারা কারা সম্পৃক্ত ছিলেন। কে তাদেরকে তথ্য সরবরাহ করেছিলেন সেটাও দেখতে হবে। ওই সব ষড়যন্ত্রকারী ও মিথ্যে তথ্য সরবরাহকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
ব্যারিস্টার শফিক বলেন, বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে এখন অনেকেই মামলা করার কথা বলছে। এই মামলা করা ঠিক হবে না। কারণ বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ভালো। তারা যে পদ্মা সেতু নিয়ে ভুল তথ্যের ভিত্তিতে অভিযোগ করেছিল। তা বুঝতে পেরে বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। সম্পর্ক ভালো আছে। সহায়তা আরও বাড়াবে। যখন সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে ও তারা বুঝতে পেরেছে সেই হিসাবে সম্পর্ক আরও গভীর করা দরকার। আরও যাতে সহায়তা দেয় সেই হিসাবে সরকারকে কাজ করতে হবে। বৈরিতা তৈরি করা ঠিক হবে না। মামলা করলে বৈরিতা তৈরি হবে।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পের দুর্নীতির অভিযোগ পরিকল্পিত ছিল ও স্বার্থান্বেষী মহলের কাজ ছিল। এখন বাংলাদেশকে মামলার দিকে ঠেলে দেওয়াও একটি ষড়যন্ত্র হতে পারে। যারা এর আগে ষড়যন্ত্র করে সফল হয়নি, এটা তাদের নতুন ষড়যন্ত্র হতে পারে। কারণ বাংলাদেশের উন্নয়ন তারা হয়তো চায় না। এই মহলকে চিহ্নিত করে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। আর নতুন করে বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিলে সম্পর্ক খারাপ হলে তারা সহায়তা প্রদান থেকে বিরত থাকতে পারে।
ষড়যন্ত্রকারীদেরকে বের করার জন্য কমিশন করার প্রয়োজন আছে কি? এই ব্যাপারে সাবেক আইনমন্ত্রী বলেন, কমিশন করার প্রয়োজন পড়বে না। কারণ বিভিন্ন সংস্থা আছে তাদেরকে দায়িত্ব দিলে তারা তদন্ত করে ওই সব ষড়যন্ত্রকারীদের বের করতে সক্ষম হবে। অনুমানের উপর ভিত্তি করে কারও উপর দোষারোপ করা ঠিক হবে না। তিনি বলেন, সরকার যদি মনে করে এই জন্য আলাদা করে কমিশন করবে সেটা করতে পারে। সম্পাদনা: এনামুল হক