রিকু আমির ও মোমেনা খাতুন: ভাল নেই শফিক রেহমান। বিশ্ব ভালবাসা দিবসের প্রচলনকারী এ মানুষটির ভালবাসা দিবস কাটছে নি:সঙ্গতার মধ্যদিয়ে। চিকিৎসার জন্য স্ত্রী লন্ডনে। ক’দিন আগে পৃথিবী থেকে চির বিদায় নিয়েছেন সহোদর। আর এ কারণে বিষণœœতা তাকে ঝেঁকে ধরেছে।
গতকাল দুপুরে ইস্কাটন গার্ডেনের বাসায় শফিক রেহমানের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানতে পেরেছে দৈনিক আমাদের অর্থনীতি। ১৯৯০ সালে তিনি বাংলাদেশে ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালবাসা দিবসের প্রচলন করেন।
নিজের স্ত্রী সম্পর্কে শফিক রেহমান বলেন, ৬৫ বছরের পরিচয়, ৬০ বছরের সংসার আমাদের। অথচ আমাদের বিবাহ বার্ষিকীর দিনই রিপোর্ট হাতে আসে, ওর ক্যান্সার ধরা পড়েছে। এখন ও ল-নে, আর আমি দেশে পড়ে আছি, ভাইটাও সেদিন মারা গেল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যার ষড়যন্ত্রের মামলায় আপিল বিভাগ থেকে গত ৩১ আগস্ট জামিন পাওয়ার পাঁচদিন পর কারামুক্ত হন শফিক রেহমান।
জামিনের শর্ত ছিল পাসপোর্ট জমা রাখা। সেজন্যে তিনি স্ত্রীর সঙ্গে বিদেশে যেতে পারেননি। তবে এরই মধ্যে আইনি পথে হেঁটে স্ত্রীর কাছে যাওয়ার জন্য পথ তৈরি প্রায় করে ফেলেছেন।
আগামী ১১ নভেম্বর ৮৩ বছর বয়স হতে যাওয়া শফিক রেহমান বলেন, স্ত্রী ল-নে, আমি বাংলাদেশে, ওকে ছাড়া বিশ্ব ভালবাসা দিবসের দিন যাবে, ভাবতেই পারি না। আইনগত কাজ শেষে পাসপোর্ট পাবার পর ওর কাছে যাবো, মনটা একেবারেই টিকছে না আমার। যায়যায়দিন পত্রিকার সাবেক এই সম্পাদকের ছেলে সুমিত রহমান ল-ন প্রবাসী, সেখানে আছেন তালেয়া।
বিশ্ব ভালবাসা দিবস প্রচলন করার সময়কার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ধর্মীয় মৌলবাদী, সাংস্কৃতিক মৌলবাদীরা আমাকে নিয়ে নেতিবাচক অনেক কিছুই করেছে। কিন্তু আমি মানুষকে বোঝাতে পেরেছি ভালবাসা দিবস কী, কেন এটা করা প্রয়োজন। ভালবাসা মানেই শুধুমাত্র প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে ভাবের আদান-প্রদান নয়। এটা স্বামী-স্ত্রী, পিতা-মাতা-সন্তান, ছাত্র-শিক্ষক, তথা মানুষের প্রতি মানুষের ভালবাসা। ভালবাসা তো একটা প্রাণীর প্রতিও থাকে।
তিনি বলেন, প্রতিদিন পত্রিকায় খুন, ধর্ষণ, নির্যাতন-নিপীড়নের কত ভয়াবহ-বীভৎস খবর পড়তে হয়, দেখতে হয়, শুনতে হয়। মানুষের প্রতি তো মানুষের ভালবাসা জাগিয়ে তুলতে হবে। থাক না, একটা দিন ভালবাসার জন্যে। অন্ততঃ ভালবাসা দিবসের দিন মানুষ ভালবাসার কথা স্মরণ করবে, এর উছিলায় এই একটা দিন অন্ততঃ ভয়াবহ-বীভৎস ঘটনা খুব কম হবে।
কারাবাসের সময়ই শফিক রেহমান শারীরিকভাবে বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েন। সম্পাদনা: এনামুল হক