পদ্মা সেতু ষড়যন্ত্রকারীরা আমার পরিবারকে হয়রানির চেষ্টা করেছে : প্রধানমন্ত্রী
আনিসুর রহমান তপন: পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ কানাডার আদালতে প্রমাণ না হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছে মন্ত্রিসভা। এটি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের স্বচ্ছতা ও দায়িত্বশীলতার প্রমাণ বলেও দাবি করেন মন্ত্রিসভার সদস্যরা।
গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে উপস্থিত সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য জানান, মন্ত্রিসভার শুরুতে প্রধানমন্ত্রী বেশ ফুরফুরে মেজাজে থাকলেও শেষ দিকে কিছু তিক্ত ঘটনা মনে করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী জানান, পদ্মা সেতু নিয়ে ষড়যন্ত্রকারীদের অন্যতম ছিলেন ড. ইউনূস। তার সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়া এবং আরো অনেকেই আঁতাত করে বিশ্বব্যাংকের অভিযোগকে পুঁজি করে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করেছে। বিশেষ করে আমার পরিবারের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিল। এখন সেটা প্রমাণিত হয়েছে যে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাদের সব অভিযোগই ছিল ষড়যন্ত্র।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতি হয়েছে এমন অভিযোগে প্রভাবশালী এই ব্যাংকের এমন কিছু আবদার ছিল যা আমি মানতে পারিনি। শেষ পর্যন্ত মানি নাই। কিন্তু তারপরও অনেক সিদ্ধান্ত আমাকে নিতে হয়েছে যেটা ঠিক হয়নি। আমি নিজে যা ভেবেছিলাম পরবর্তীতে সেগুলোই ঠিক হয়েছে। তখন পর্যন্ত বিশ্বব্যাংক এই প্রকল্পে কোনো টাকাই ছাড় করেনি। তারপরও দুর্নীতির অভিযোগ করেছে। এমন কি অর্থমন্ত্রী এবং আমার একজন উপদেষ্টা বিশ্বব্যাংকের হয়ে আমার কাছে সুপারিশ করে তাদের কথা শুনতে। বিশ্বব্যাংক দাবি করল, মন্ত্রীকে প্রত্যাহার করেন, উপদেষ্টাকে প্রত্যাহার করেন, সচিবকে প্রত্যাহার করেন। তারপর আবার বলে, মন্ত্রীকে গ্রেফতার করেন, উপদেষ্টাকে গ্রেফতার করেন, সচিবকে গ্রেফতার করেন। আমি তখন তাদের জানালাম অন্যায়ভাবে আমি এটা কেন করব? সেসময় আমি সত্যের ওপর থাকলেও একটা সময় কিছু অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটে গেল। আবুল হোসেনকে সরানো হল। আর সচিবকে গ্রেফতার করে প্রায় একবছর জেলখানায় আটকে রাখা হল। মিথ্যা অভিযোগে আটক রেখে এই যে তার সময়টা নষ্ট করল, সচিবের ভাবমূর্তিটা নষ্ট করল এর ক্ষতিপূরণ কে করবে, কিভাবে এর বিচার হবে? মোশারফের জেলে যাওয়ার বিষয়টা আমার মনে হলে এখনও গিল্টি ফিল করি। কারণ এটা হওয়া উচিৎ ছিল না। অথচ দুর্ভাগ্যক্রমে মোশারফের ভাগ্যে তাই জুটে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের পাশাপাশি আমার পরিবারকেও টার্গেট করে ষড়যন্ত্রকারীরা। তাদের প্ররোচণায় আমার সন্তানদের যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যা- সিকিউরিটির মাধ্যমেও হেনস্থার চেষ্টা করে। অথচ পদ্মা সেতুর ষড়যন্ত্রকারী এই ইউনূসের জন্য আমার সরকার কত কি করেছে। আগেরবার যখন ক্ষমতায় ছিলাম তখন টাকার অভাবে গ্রামীণ ব্যাংক ঋণ দিতে পারছে না। সেসময় আমার সরকার নিজে থেকে উদ্যোগ নিয়ে গ্রামীণ ব্যাংককে ৪শ কোটি টাকা দিয়ে তার উপকার করি। ব্যাংকের এমডি পদে তাকে রাখার জন্য যখন হিলারিসহ কয়েকটি দেশের সরকার প্রধানরা সরাসরি আমাকে অনুরোধ করে। তাদের দাবি বা প্রস্তাবটি ব্যাংক আইনে সমর্থন করে না বিধায় আমরা ইউনূসকে ব্যাংকের উপদেষ্টা করার প্রস্তাব দেই। কিন্তু ইউনূস সাহেব কি করল? এমডি পদে থাকার জন্য কোর্টে গিয়ে মামলা করে দিল।
এর আগে সাংবাকিদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বর্তমান সরকারের অবস্থান ছিল পদ্মা সেতুতে কোনো দুর্নীতি হয়নি এবং ওয়ার্ল্ড ব্যাংককে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল, যদি তারা দুর্নীতির কথা বলে সেটা তাদের প্রমাণ করতে হবে। তারা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এ ব্যর্থতার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ় হয়েছে, বাংলাদেশ সরকারের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিক পরিম-লে অনেক উজ্জ্বল হয়েছে। এজন্য মন্ত্রিসভা প্রধানমন্ত্রীকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
শফিউল আলম বলেন, এতোদিনে সেতুটা আমরা বাস্তবে পেয়ে যেতাম, স্ক্যান্ডালের কারণে আমাদের এ উন্নয়নটা অনেক পিছিয়ে গেছে। সম্পাদনা: এনামুল হক