ইমরান এইচ সরকার ও নাদিয়ার ভালবাসার গল্প
আশিক রহমান: ফাগুন এসেছে ধরায় আবারও। পহেলা ফাল্গুন এবার আমরা উদযাপন করেছি একসঙ্গে। এ বছর আমার বসন্ত উদযাপন ছিল একটু ভিন্ন। কারণ এতদিন একা একা বসন্ত উদযাপন করলেও এ বছর তার ব্যতিক্রম হয়েছে। এ বছর একজন প্রিয় মানুষ আমার জীবনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। নিঃসন্দেহে এ বছরের পহেলা ফাগ্লুন, ভালবাসার দিনটি আমাদের জন্য অন্যরকম আনন্দের। ভালবাসার। ভাললাগার। মজারÑ দৈনিক আমাদের অর্থনীতির সঙ্গে আলাপকালে প্রেম, ভালবাসা ও বিয়েসহ অনেক অজানা কথাই বললেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার।
তিনি বলেন, পহেলা ফাল্গুনের প্রথম প্রহরে নন্দিতা শুভেচ্ছা জানিয়েছিল। উপহারও পেয়েছি। কাপল রিং ছিল সেটি। দুজনের জন্যই ছিল এই রিং। একই রকম কালার। ফাল্গুনের প্রথম দিনটিতে সকালের নাস্তায়ও ব্যতিক্রম ছিল। নাস্তায় একটা মিক্সড ভেজিটেবল ছিল, বসন্তের রঙে রাঙানো ছিল তা! নন্দিতা নিজে রান্না করেছে। সকালের নাস্তায়ও যেন বসন্তের ছোঁয়া থাকে এ রকম একটা প্রচেষ্টা ছিল তার। সে যে সব রান্না করতে পারে এমনটি নয়, তবে সে চেষ্টা করে রান্নার মধ্যে যেন কিছুটা ভিন্নতা থাকে। অন্তত একটা মেন্যু যেন তার নিজের হাতে করা রান্না থাকে। এমনটি সে নিয়মিতই করে।
তিনি আরও বলেন, আগে হয়তো ভালবাসা দিবস বা পহেলা ফাল্গুন নিয়ে ওভাবে ভাবতাম না কিন্তু এবার এ বিষয়ে ভাবতে হয়েছে। যার ফলে একসঙ্গে বাসন্তি পোশাক পরে বের হওয়া, ঘুরতে যাওয়া, মজা করার পরিকল্পনা করেছি। তার বাস্তবায়নও করেছি পহেলা ফাল্গুনে। বসন্ত এবার নতুন এক অভিজ্ঞতা নিয়ে আমার জীবনে এসেছে।
আপনার কাছে প্রেম ও ভালবাসার মানে কীÑ জবাবে ডা. ইমরান এইচ সরকার বলেন, প্রেম হচ্ছে একটা প্রতিশ্রুতি। আর ভালবাসা হচ্ছে নিঃস্বার্থ। সেখানে প্রতিশ্রুতির কোনো ব্যাপার নেই, পাওয়ার কোনো ব্যাপার থাকে না। আপনি যেকোনো কিছুকেই ভালবাসতে পারেন। মানুষকে ভালবাসতে পারেন, দেশকে ভালবাসতে পারেন, সমাজকে ভালবাসতে পারেন, বই ভালবাসতে পারেন। এটা একপাক্ষিক। আর প্রেম হচ্ছে দ্বিপাক্ষিক। সেখানে প্রতিশ্রুতি আছে, দুজনের দায়বদ্ধতা আছে।
ভালবাসা আসলে কোনো দিবস দিয়ে বন্দী করা যায় না। প্রতিটি মুহূর্তেই যদি আপনি কোনোকিছুর প্রতি ভালবাসা বোধ করেন, সেটা মা-বাবা, দেশ, মানুষ তা আপনাকে প্রতি মুহূর্তেই ভালবাসতে হবে। আপনি একদিন ভালবাসবেন আর সাতদিন বাসবেন না তা ভালবাসার কোনো সংজ্ঞার মধ্যেই পড়ে না।
এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, সারাজীবন আমি আমার মায়ের হাতের রান্না খেয়ে এসেছি। সবসময়ই মনে হতো পৃথিবীর সকল কিছুর শ্রেষ্ঠ হচ্ছে মায়ের হাতের রান্না। এখন মায়ের হাতের রান্না সবসময় খাওয়া হয় না। নন্দিতা যে রান্না করছে তার মধ্যেও একটা ভিন্নতা আছে। সে রান্না করছে সেটা বড় ব্যাপার নয়, বড় হচ্ছে তার এ প্রচেষ্টার মধ্যে একটা ভালবাসা আছে। কারণ সে নিজের আগ্রহে, নিজের ভিতরের একটা বোধ থেকে এই রান্নাটা করছে।
প্রেম কি আপনার উপর পড়েছিল, নাকি আপনি প্রেমে পড়েছিলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. ইমরান এইচ সরকার বলেন, আমি প্রেমে পড়েছিলাম নাকি প্রেম আমার উপর পড়েছে তা অত্যন্ত কঠিন প্রশ্ন। তবে দুটিই হয়েছে। আমিও প্রেমে পড়েছি, প্রেমও আমার উপরে পড়েছে। শুধু আমার উপরই নয়, আমাদের দুজনের উপরই প্রেম পড়েছিল, আমরাও প্রেমে পড়েছিলাম।
প্রেম-পরিচয়ের দিনটির কথা কি বলবেন। কবে থেকে দুজনের প্রেমযাত্রা শুরু হয়েছিল?
আমার প্রেমের শুরুটা একদম দিনক্ষণ মেনে শুরু হয়নি। কারণ আমাদের পরিচয় ছিল আগে থেকে। কাজের মধ্যে দিয়েই আমাদের আরও কাছাকাছি আসার সুযোগ হয়েছে। আমাদের পরিচয়ের দিন তারিখ বলা কঠিন। তবে ২০১২-২০১৩-র দিকে। তারপর ধীরে ধীরে কাজের মাধ্যমে আমাদের পরিচয়ের ব্যপ্তি বাড়ে। যেদিন প্রথম পরিচয় হয় সেদিন খুব কম সময়ের ছিল। খুব বেশি কথা হয়নি দুজনের মধ্যে। পরবর্তীতে কথা হয়েছে বিভিন্নভাবে। পাশাপাশি কাজ করতে গিয়ে ধীরে ধীরে আমাদের ভালবাসা গভীর হয়। একে অপরকে ফিল করি।
দুজনের কে প্রথম বলেছিলেন ভালবাসা, ভাললাগার কথাÑ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের দুজনের ভাললাগা, ভালবাসার কথা আসলে ওইভাবে আয়োজন করে বলতে হয়নি। দুজনের মধ্যেই আসলে ঘনিষ্ঠতা ছিল। পারস্পরিক বোঝাপড়া ভালো ছিল। এ কারণে তৃতীয় পক্ষের কোনো প্রয়োজন পড়েনি।
ভালবাসার মানুষের কোন জিনিসটি সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে? ডা. ইমরান বলেন, নন্দিতা খুব যতœশীল আমার প্রতি। এটা আমার খুব ভালো লাগে। আর সে খুবই পরিশ্রমী একজন মানুষ। যেকোনো কাজের দায়িত্ব যদি তার উপর দেওয়া হয় বা তার উপর পড়ে তাহলে খুব দায়িত্ব নিয়ে, অনেক যতœসহকারে তা করার চেষ্টা করে। আমার পরিবারের সদস্যদের প্রতি, পরিচিত বন্ধু সবার প্রতি একটা রেসপন্সিবল ফিল করে। এটা তার বিশেষত্ব বলা যায়।
ভালবেসে বিয়ে করে কি সুখী হওয়া যায়। কী উপলব্ধি আপনার?
ভালবাসা ছাড়া কি একসঙ্গে বসবাস করা সম্ভব? একজন আরেকজনকে যদি ভালোই না বাসে তাহলে একসঙ্গে থাকা যায় না। ভালবেসেই একসঙ্গে থাকা সম্ভব। ভালবাসলে নানারকম সংকট তৈরি হতে পারে। যদি ত্যাগের মানসিকতা থাকে যে, আমরা একসঙ্গে থাকব তাহলে অনেক সংকটই কাটানো যায়। সবসময়ই ত্যাগের মানসিকতা মাথায় রাখতে হবে।
প্রিয় মানুষের কাছ থেকে কী পেতে কিংবা দিতে পছন্দ করেন?
নন্দিতা সবসময়ই আমার কাছ থেকে সম্মান আশা করে। সে চায় যেন তার কাজগুলোর প্রতি প্রদর্শন করি। তার কাছে আমার প্রত্যাশা হলো, আমার স্বাধীনতা, আমার ভাবনা, দর্শনÑ যা নিয়ে আমি কাজ করতে চাই তা যেন থাকে। সবসময়ই যেন আমার কাজের প্রতি তার সমর্থন থাকে। সম্পাদনা: এনামুল হক