সহায়ক সরকারের রূপরেখা স্পষ্ট করতে হবে বিএনপিকে
উম্মুল ওয়ারা সুইটি: নির্বাচন কমিশন গঠনের পর বিএনপির পক্ষ থেকে নতুন গঠিত কমিশন নিয়ে আপত্তির পাশাপাশি বিএনপি জাতীয় নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবি জানাচ্ছে। কিন্তু বিএনপির পক্ষ থেকে এই সরকারের রূপরেখা নিয়ে কোনো প্রস্তাব এখনো স্পষ্ট করা হয়নি। বিশিষ্টজনদের বক্তব্য, গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির পক্ষ থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তোলা হয়েছিল। কিন্তু সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় শেষ পর্যন্ত বিএনপির এই দাবি ব্যর্থ প্রমাণিত হয়। বিপরীতে রাজনৈতিক সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতির মুখে পড়ে দেশ।
তারা বলেছেন, এবারও যদি বিএনপি সহায়ক সরকার নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো রূপরেখা না দেয় এবং নির্বাচন বর্জন ও নির্বাচনকালীন সরকারের ইস্যুতে অস্পষ্ট থাকে তাহলে পরিস্থিতি আগের মতোই হবে। তারা বলেন, এরই মধ্যে সহায়ক সরকার বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিএনপির দাবির সমালোচনা করছে আওয়ামী লীগ ও ক্ষমতাসীন জোটের অন্যান্য দলের নেতারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, আসলে সহায়ক সরকার বলতে বিএনপি হয়ত একটি অবাধ, সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার পরিবেশ তৈরির কথাই বলছে। এখন প্রশাসনে যারা রয়েছেন, তারাও ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক। নির্বাচনকালীন সময়ে প্রশাসনের এসব পদে নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের বসাতে হবে। নির্বাচনকালীন সময়ে কমিশনের অধীনে প্রশাসন থাকলেও তাদের কথা শুনবে না। প্রশাসন সরকারের কথাই শুনতে বাধ্য হয়। আর সে ভাবনা থেকেই বিএনপি সহায়ক সরকার ফর্মূলার কথা বলছে। তবে এখন বিএনপিকে গ্রহণযোগ্য একটি প্রস্তাব দিতে হবে। না হয়, নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়াই ভালো।
জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমান বলেন, নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার চাওয়ার পেছনে মূল কারণটা হলো নিরপেক্ষ নির্বাচন। বিএনপি মনে করছে, বর্তমান ইসি ও রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে না। তাই তারা এমন ব্যবস্থা চাইছে যার মাধ্যমে নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করা যায়। তিনি বলেন, সহায়ক সরকার বলতে বিএনপি কি বোঝাতে চাইছে, সেটি স্পষ্ট নয়। এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক আরো বলেন, নির্বাচন কিভাবে হবে, সেটি সংবিধানে বলা আছে। আওয়ামী লীগও চাইলে এমন ব্যবস্থা দিতে পারবে না। কারণ সংবিধান অনুমোদন দেবে না। সুতরাং সহায়ক সরকার প্রবর্তন করা মানেই সংবিধানের লঙ্ঘন। সরকার আইনি জটিলতায় পড়বে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক নুরুল আমিন বেপারি বলেন, বিএনপির সহায়ক সরকারের দাবি যেন বাস্তব সম্মত হয়। আর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগেরও বিষয়টি আমলে নেয়া উচিত। তিনি বলেন, সহায়ক সরকারের দাবি নিয়ে রাজনৈতিক মাঠ কতটা সরগরম রাখবে তা বিএনপির উপর নির্ভর করে।
উল্লেখ্য, গত ১৮ নভেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তার গুলশানের অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে এই নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখার কথা জানান। সেখানে বলা হয়, ‘নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার’-এর মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছেÑ হস্তক্ষেপমুক্ত অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। এই সহায়ক সরকার হবে তিন মাস মেয়াদের। রাষ্ট্রপতির অধীনে নির্বাচনকালীন এই সরকারের মন্ত্রিসভায় টেকনোক্রেট কোটায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সংস্থাপনসহ গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের দায়িত্ব দেওয়ার প্রস্তাব থাকছে। রাষ্ট্রপতি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের কাঠামো চূড়ান্ত করতে পারেন।