
সহায়ক সরকারের রূপরেখা নিয়ে বিএনপির যত পরিকল্পনা
বিশ্বজিৎ দত্ত ও নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিতে চায়। তার আগেই সরকারের কাছে প্রস্তাব রাখতে চায় একটি নির্বাচনকালীন সরকারের। বিএনপি নেতৃবৃন্দ এই সরকারে নাম দিয়েছে সহায়ক সরকার। যার কাজ হবে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করে একটি সর্বদলীয় নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সহায়তা করা। এই সহায়তার রূপ কী হবে তা নিয়ে গতকাল বিএনপির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। তারা বলেন, এখনো বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি। তবে সহায়ক সরকার সম্পর্কে সাধারণ কিছু ধারণা তারা বলেন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের প্রধান হতে হবে একজন নিরপেক্ষ ব্যক্তিকে। বর্তমান সরকার থাকবে না। নিরপেক্ষ ও নিদর্লীয় সরকার গঠন করার জন্য প্রয়োজনে ও ওই সময়ের জন্য আওয়ামী লীগের ও তাদের জোটের দেওয়া প্রস্তাবিত নাম থেকে এবং বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের প্রস্তাবিত নেতাদের নাম নিয়ে দশজনের সরকার গঠন করা যেতে পারে।
আর সরকার প্রধান হবেন দুই জোটের ও অন্যান্য দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে। ওই সরকার নির্বাচনকালীন রুটিন কাজ করবে। সেখানে নীতি নির্ধারণী কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়সহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থাকবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে। তাদের উপর সরকার কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করবে না। কমিশনকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। এই ধরনের একটি সরকারই চাইছে বিএনপি। নির্দলীয় সরকারের রূপরেখা বিএনপি তৈরি করছে। প্রয়োজনে সরকারের কাছে ওই সময়ের সরকার গঠন করার জন্য সংবিধানও সংশোধন করতে বলবে। বিএনপি কি চায় সেই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর সঙ্গে আলোচনা করতে চায়। ঐকমত্যের ভিত্তিতে তা করার জন্য প্রস্তুত। এই রকম একটি প্রস্তাব বিএনপির নেতাদের অনেকেই বলেছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সূত্র জানায়, নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা তৈরির কাজ চলছে। সেটা করা হচ্ছে সরকারের সঙ্গে ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করার জন্যই। কারণ বিএনপির লক্ষ্য নির্বাচন কমিশনের কমিশনারদের ব্যাপারে তারা আপত্তি না জানালেও তারা প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে মেনে নিতে পারছেন না। তবে তারা দেখতে চান কি করে নির্বাচন কমিশন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান বলেন, নির্বাচন কমিশন যে রকম করা হয়েছে তাতে করে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। এই কমিশনের অধীনে গত ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন হবে। আর ফলও একই হবে। এই অবস্থায় বিএনপির নির্বাচনে যাওয়ার সুযোগ সরকার তৈরি করছে না। সেটা যদি না করে তাহলে দেশের গণতন্ত্র ব্যাহত হবে। এখনও গণতন্ত্র নেই। আগামীতে পুরোটাই শেষ হয়ে যাবে। তিনি বলেন, আমাদের দলের পক্ষ থেকে নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা তৈরি হচ্ছে। সেই রূপরেখা আনুষ্ঠানিকভাবে খুব শিগগিরই মিডিয়ার সামনে প্রকাশ করা হবে। আর সরকার ও আওয়ামী লীগকেও বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় বসা দরকার। তারা বিএনপিকে বাদ দিলে এবার নির্বাচন করার পরিকল্পনা করলে ভীষণ ভুল করবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুুবুর রহমান বলেন, ম্যাডাম দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। পরামর্শ নিচ্ছেন। সেখানে নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়েও আলোচনা হচ্ছে। সেই আলোচনায় ঠাঁই পাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের বিষয়। কেউ কেউ বলছেন, নাম ভিন্ন হলেও কেয়ারটেকারের আদলেই নির্বাচনকালীন সরকার দাবি করতে হবে। তেমন রূপরেখা করাই ঠিক হবে। আবার কেউ কেউ বলছে, প্রধানমন্ত্রী দশম সংসদ নির্বাচনের আগে সর্বদলীয় সরকারের কথা বলেছিলেন। সেই সময় স্বরাষ্ট্র ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ও ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেছিলেন। এবারও তিনি হয়তো করলে সেটাই করতে চাইবেন। এর বেশি চাইবেন না।
বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, তিনিও লন্ডনে বসে নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা তৈরি করার কাজে সহায়তা করছেন। তার একটি সেলও এই ব্যাপারে কাজ করছেন। বিএনপির দাবি অনুযায়ী সরকার গঠন করানোর জন্য, সরকারের উপর কিভাবে চাপ তৈরি করতে হবে তা ঠিক করছে। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক মহলেরও চাপ বাড়াতে চাইছে। এগুলো করানোর জন্য বিএনপিকে কি করতে হবে তারা সেই পরিকল্পনাও করছেন। তবে সেটি সরকার না মেনে নিলেও সমঝোতা না হলে কি হবে এই বিকল্পও ভাবছেন। সম্পাদনা: বিশ্বজিৎ দত্ত
