আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট ১৫ বছরেও পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট ভবনটি হওয়ার কথা ১২ তলা বিশিষ্ট। কাজ হয়েছে ছয় তলা পর্যন্ত। ছয়তলার সব কাজও শেষ হয়নি গত ১৫ বছরে। সামনে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এই দিবসটি উপলক্ষে সেখানে ধোঁয়া মোছা ও চুনকাম করার কাজ চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২১ এর অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন। এবারের একুশের অনুষ্ঠানকে বড় পরিসরে করতে চাইছেন ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক অধ্যাপক জীনাত ইমতিয়াজ আলী। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডেপুটেশনে আছেন। আগামী বছর তার বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরির মেয়াদ শেষ হবে। তিনি ’১১ সাল থেকে দায়িত্ব নেওয়ার পর কাজ করে যাচ্ছেন। ২০০১ সালের ১৫ মার্চ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট ভবনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনান উপস্থিত ছিলেন। ২০০১ সালে ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করার পর ২০১০ সালের ওই ভবনের উদ্বোধন করা হয়।
তিনি বলেন, আমি যখন দায়িত্ব নিই, তখন একটি ল্যাপটপও ছিল না। সেখান থেকে আজ আমরা এখানে এনে প্রতিষ্ঠানটিকে দাঁড় করিয়েছি। আমাদের পরিকল্পনার মধ্যে বড় একটি কাজ হলো বিভিন্ন ভাষার প্রকাশনা প্রকাশ করা। সফটওয়্যার তৈরি করা। প্রশিক্ষণ দেওয়া। বাংলা ভাষাকে বিদেশিদের কাছে আরও ব্যাপকভাবে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা। একটি লাইব্রেরি করা, জাদুঘর করা। এছাড়াও আরও অনেক কাজ চলছে।
তিনি কাজ করতে গিয়ে নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছেন। কারণ যে লোকবল দরকার তা নেই। যেই ধরনের লোকবল দরকার তাও নেই। এই কারণে লোকবল নিয়োগের জন্য আগে আইনে যে বিধান করা হয়েছিল সেখানে পরিবর্তন আনতে চাইছেন। ইতোমধ্যে তাদের কোনো কোনো ক্যাটাগরিতে এবং যেসব কাজের জন্য অভিজ্ঞ লোকবল প্রয়োজন সেগুলো চিহ্নিত করেছেন এবং লোকবল কাঠামোও তৈরি করছেন।
এদিকে তিনি দ্রুত লাইব্রেরি ও জাদুঘরের কাজও শেষ করতে চাইছে। এই জন্য বিভিন্ন সøাইডও তৈরি করাচ্ছেন। ৯৩টি দেশের ভাষার সøাইডও ইতোমধ্যে তৈরি করিয়েছেন। জায়গা সংকুলান না হওয়ার কারণে মূল লাইব্রেরির পাশাপাশি ভার্চুয়াল লাইব্রেরি করতে চাইছেন। ই-বুক করতে চাইছেন লাইব্রেরির জন্য। বিভিন্ন দেশ থেকে এই সংক্রান্ত নথিপত্র সংগ্রহ করা হচ্ছে।
মহাপরিচালক জিনাত ইমতিয়াজ আলী বলেন, আসলে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের ভবনটি এমনভাবে নকশা করা হয়েছে, তাতে একটি আন্তর্জাতিক মানের লাইব্রেরি কিংবা জাদুঘর করার মতো না। কেবল এক একটি করে রুম রাখা হয়েছে এই জন্য। আসলে একটি জাদুঘরের রুমের উচ্চতা কত হয়? কেমন জায়গায় ও কেমন রুমে ইনস্টিটিউটে জাদুঘর হয় সেটা আমার মনে হয় ওই সময়ে যারা দায়িত্বে ছিলেন তাদের ধারণা ছিল না। থাকলে লাইব্রেরি আর জাদুঘরের জন্য কেবল একটা করে রুম দিয়ে রাখা হতো না। বিশ্বের এই ধরনের ইনিস্টিটিউটে এমনভাবে লাইব্রেরি আর জাদুঘর হয় না।
তিনি জানান, একটি করে রুম রাখার কারণে জায়গা সংকট রয়েছে। আর বিশ্বের সব দেশের একটি করে কর্ণার রাখা হলে সেখানে জায়গাও হবে না। আবার জাদুঘরে আমরা ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন, এই সময়ে বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম, পরবর্তীকালে এর সংরক্ষণ ও প্রসারের জন্য যেসব কাজ হয়েছে আমরা সেগুলো জাদুঘরে সর্বসাধারণের জন্য প্রদর্শনী করতে চাইছি। কিন্তু সেখানেও জায়গা সমস্যা।
মহাপরিচালক মনে করছেন, তখন যারা ওই ভবনের নকশা বাছাই করেছিলেন আসলে তাদের আন্তর্জাতিক মানের ভাষা ইনস্টিটিউট, জাদুঘর, লাইব্রেরি এগুলো করার ধারণা ছিল। বসতী নামের একটি আর্কিটেক্ট প্রতিষ্ঠান এর ডিজাইন করেছে। আসলে ডিজাইন দেখে মনে হয় তাদের আগে এই ধরনের কাজের কোনো অভিজ্ঞতাই ছিল না। তাছাড়া এই কাজে দক্ষ নয়। এমন প্রতিষ্ঠানে নকশা আমি হলে নিতাম না। তারা কাজ করে চলে গেছে, যারা নকশা পছন্দ করেছে তারা কেবল বাইরের দিকটাই দেখেছে, ভেতরের দিকটা দেখেনি। মনে করেছে, এক একটা করে রুম দিলেই হবে। ভবনটির বাইরে নান্দনিকা আছে কিন্তু ভেতরে অনেক রুমেই সমস্যা রয়েছে। গ্যালরি যেমনটা করা দরকার তা করা হয়নি। জাদুঘরের জন্য এশিয়া ও ইউরোপের ফাইল তৈরি করা হয়েছে।
তিনি এই সমস্যা সমাধানে এখন কি করা যায় তা চিন্তা করছেন। বলেন, মূল ভবনের সঙ্গে লাইব্রেরি ও জাদুঘর না করে আলাদা করে দিলে ভালো হতো। কিন্তু এখন সেটা করা যাচ্ছে না। তাই যেভাবে ভবনটি করা হয়েছে তা রেখেই কেমন করে কি করব তা ঠিক করছি।
জনবল সংকটের কথা বলতে গিয়ে বলেন, আসলে এই ধরনের একটি প্রতিষ্ঠান আগে ছিল না। তাই এই সংক্রান্ত কাজ করারও মানুষের অভিজ্ঞতা নেই। এই ধরনের প্রতিষ্ঠানে ভাষা সংক্রান্ত বিষয়ে কাজ করার জন্য, সফটওয়্যার তৈরি করার জন্য, বিদেশি বিভিন্ন ভাষায় সফটওয়্যার তৈরি করে কাজ করার জন্য যে ধরনের অভিজ্ঞতা লাগে ওই রকম লোক আমরা পাচ্ছি না। আমার সঙ্গে অনেকেই যোগাযোগ করে। কিন্তু পরে কাজ পারে না। ওই ধরনের লোকবল তৈরি করতে হবে। আমরা দশটি বিদেশি ভাষা আমাদের বাংলাদেশিদের সেখানে চাই। আবার বিদেশিদেরও বাংলাদেশি ভাষা শেখাতে চাই। সেগুলো কিভাবে সহজ করে শেখানো যায় ও তাদেরকে ভাষা শিখতে উৎসাহিত করা যায় সেই চেষ্টা করা হবে। ভাষা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করা হবে। এছাড়াও আরও বিভিন্ন পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। সব কিছুরই কাজ চলছে। সম্পাদনা: বিশ্বজিৎ দত্ত