মামলা করবেন না আবুল হোসেন, আবুল হাসান ও মোশাররফ হোসেন
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে দেশ হিসাবে সরকার কিংবা দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলা করার সুযোগ নেই। কেউ কেউ মামলা করার জন্য উস্কে দিচ্ছে। কিন্তু তারা না জেনেই কথা বলছে। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে যে চুক্তি করেছিল সেখানেও মামলা করার কোনো সুযোগ রাখা হয়নি। কোনো কারণে প্রকল্পে টাকা না দিলে কিংবা সরে গেলে মামলা করা যাবে এমন কোনো কথা থাকলে সরকারের ও দুদকের মামলার সুযোগ থাকতো। তবে করতো কি করতো না সেটা ভিন্ন ইস্যু। তবে ব্যক্তিদের মামলা করার সুযোগ আছে বলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক মত দিয়েছে। তিনি সেই বিষয়ে আইনি পরামর্শও দিতে পারেন। তবে ক্ষতিগ্রস্ত প্রধান তিন ব্যক্তিও বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করতে চাইছেন না।
বিশ্বব্যাংকের ওই সময়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষোভ ও আক্রোশ ছিল সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে। তাদের পদত্যাগ করানো ও তাকে মামলায় আসামি করার চাপ ছিল। সেই সঙ্গে তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করারও চাপ দিয়েছিল বিশ্ব্যাংক। বিশ্বব্যাংক আবুল হোসেন পদত্যাগ না করা পর্যন্ত কোনোভাবেই দুদকের তদন্ত সুষ্ঠু হয়েছে মেনে নিতে পারেননি। এই কারণে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করার জন্য চাপ দিচ্ছিল। সেই সব দিনের কথা স্মৃতি চারণ করে সৈয়দ আবুল হোসেন বলেন, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট, ইন্ট্রিগ্রিটি বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা এবং ওই সময়ে এই সংক্রান্ত কাজের সমন্বয়ক (যিনি পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ছিলেন)। তিনি বিরোধিতা করেছেন। এছাড়াও কাজ করেছেন বিশ্বব্যাংকের ওই সময়ের কান্ট্রি ডিরেক্টর গোলেন্ডন স্ট্যাইন।
আবুল হোসেন বলেন, বিশ্বব্যাংকর প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আমার বিদেশে এক অনুষ্ঠানে দেখা হয়েছে। কথা হয়েছে। তিনি মিথ্যে অভিযোগ করার জন্য দুঃখপ্রকাশ করেছেন। ক্ষমাও চেয়েছেন। তিনি ভুল বুঝতে পেরেছেন। আমাকে বলেছেন, আমরা ওই ঘটনার জন্য খুবই দুঃখিত। তিনি দুঃখ পেলেও আমাকে নিয়ে যেসব ঘটনা ঘটেছে তাতো আর ভুলে যেতে পারি না। আবার আমার যা ক্ষতি হয়েছে তাও ফিরে পাব না। ওই ক্ষতি অপূরণীয়। আমি ক্ষতিপূরণও চাইতে যাব না। ওরা আমাকে কি ক্ষতিপূরণ দিবে। আমাকে যা দেওয়ার আল্লাহই দিবে। যারা আমার সম্মানহানী করেছিল এখন তাদের মুখ কোথায় লুকাবে। আমি তো ঠিকই দেশে বিদেশের আদালতে নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছি। তিনি বলেন, আমি মামলাবাজ লোক নই তাই মামলা করবো না।
আবুল হোসেন বলেন, তাহলেও আমি বিশ্বব্যাংকের কারও বিরুদ্ধে মামলা করার কথা চিন্তা করছি না। মামলা আমি করতে যাব না। কারণ মামলা করার অভ্যাস আমার নেই। তবে সরকার কি করবে সেটা এখনো বলতে পারি না। তিনি বলেন, তারা যে মিথ্যে অভিযোগ করেছে এই জন্য সরকারের কাছে তাদেরকে ক্ষমা চাইতে হবে। সেটা আনুষ্ঠানিকভাবেই। দেশের যে ক্ষতি করেছে সেই ক্ষতিপূরণও পারলে আদায় করা উচিত। ক্ষতিপূরণ চাওয়া প্রয়োজন।
এদিকে সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীও বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করতে চাইছেন না। তাকে বাংলাদেশের মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে রাখা হয়। কানাডার মামলায়ও তাকে রাখা হয়। পরে তার বিরুদ্ধে মামলা চলতে পারে না বলে কানাডার আদালত তাকে অব্যাহতি দেয়। তিনিও ঠিক করেছেন কোনো মামলা করবেন না। তবে তারা মামলা না করলেও বিশ্বব্যাংকের ভূমিকা, তাদের অদক্ষতা, শোনা কথার ভিত্তিতে নিজেদের বাংলাদেশের প্রকল্প থেকে সরিয়ে নেওয়াকে বোকামিই মনে করছেন। তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু জানান, আবুল হাসান চৌধুরী মামলা করবেন না। কারণ মামলা করলে যে ক্ষতি হয়েছে ও যেভাবে হেনস্তা করা হয়েছে তা ভুলতে পারবেন না। তবে সরকারের তরফ থেকে তাদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করানো, ক্ষমা চাওয়ানোর ব্যবস্থার পাশাপাশি ক্ষতিপূরণ চাওয়া দরকার।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বিশ্বব্যাংক আইনের ঊর্ধ্বে নয়। তবে চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে না। ওই ঘটনায় যারা ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তারা বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারেন। সেটা কেমন করে পারেন, কী পারেন এ ব্যাপারে আইনি পরামর্শ নিতে পারেন।
এদিকে ক্ষতিগ্রস্তদের একজন সাবেক সেতু সচিব ও বর্তমান শিল্প সচিব মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া বলেন, বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে আমি মামলা করব না। যারা ষড়যন্ত্র করেছিল তাদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিতে পারে। ওই সব ষড়যন্ত্রকারীদের বের করাও সম্ভব। এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। সরকার কি করবে তাতো আমি এখনই বলতে পারছি না। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করার পক্ষে নই। কোনো ব্যবস্থা নেওয়ারও পক্ষে নই। অভিযোগ মিথ্যে প্রমাণ হওয়ার মধ্য দিয়ে তাদের একটি শিক্ষা হয়েছে। সম্পাদনা: এনামুল হক