৯০ ভাগ পাটবীজ আমদানি নির্ভরশীল বাংলাদেশ
ফারুক আলম: বাংলাদেশে প্রতিবছর ৪ হাজার ৫শ টন পাটবীজের প্রয়োজন হলেও মাত্র ১ হাজার ২শ টন পাটের বীজ বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) ও স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে আসছে। আর বাকি ৩ হাজার ৩শ টন ভারতের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। বহুকাল থেকে এ দেশের পাট চাষিরা ভারতের পাট বীজের ওপর নির্ভরশীল বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সূত্র জানিয়েছে, সোনালী আঁশ বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান অর্থকরী ফসল ছিল। উর্বর জমি ও অনুকূল আবহাওয়ার কারণে বাংলাদেশ ঐতিহ্যগতভাবে বিশ্বের সেরা মানের পাট উৎপাদন করে আসছে। অথচ পাটের বীজ ভারত থেকে আমদানি করা হচ্ছে এটি বড় লজ্জার।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক সূত্রে জানা যায়, পাট চাষের ধরন বদলে গেছে। আগে দেশি জাতের পাট শতকরা ৮০ এবং তোষা জাতের পাট শতকরা ২০ ভাগ চাষ হত। তখন দেশে তৈরি বীজে চাহিদা মিটত। এখন শতকরা ৯০ ভাগ পাটের বীজ ভারত থেকে আমদানি করতে হচ্ছে।
ভারত থেকে পাটের বীজ আমদানির বিষয়ে আমাদের অর্থনীতিকে বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম বলেন, আমরা পাটের বীজ শতভাগ উৎপাদন করতাম। কোনো দেশের ওপর নির্ভরশীল ছিলাম না। ১৯৭৫-এর পর সামরিক-স্বৈরাচার সরকার ক্ষমতায় আসায় এদেশের পাটের ওপর বিদেশি হস্তক্ষেপ ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র হয়েছে। যারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিলেন তারা মেরুদ-বিহীন ছিলেন। বর্তমানে ৯০ ভাগ বীজ ভারতের ওপর নির্ভরশীল করতে হচ্ছে। আর ১০ ভাগ বীজ নিজেরা উৎপাদন করছি। অন্যের ওপর নির্ভরশীলতা দূর করতে এখন বীজ উৎপাদনে কৃষকদের প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের উৎকৃষ্টমানের পাট উৎপাদন করত। আর সেই পাটের বীজ যদি ভারত থেকে নিয়ে আসতে হয় তাহলে বাংলাদেশ কিভাবে উৎকৃষ্ট থাকলো?
ইতিমধ্যে ১৭টি পণ্যের মোড়কীকরণে বাধ্যতামূলকভাবে পাট ব্যবহার হচ্ছে। পাট দিয়ে এখন সূতা উৎপাদন ছাড়াও কাপড় তৈরি, বস্তা ফিল্ম কাগজ, জুতা, ব্যাগ জিন্সের কাপড় ছাড়াও দেড়শ রকমের পণ্য তৈরি করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, আগের দিনে চাষি তার প্রয়োজনীয় পাট বীজ নিজে উৎপাদন করত। সে বীজ ঘরে ঘরে যতœ করে রাখত এবং পাট চাষ করত। দেশ স্বাধীনের পর ভারত থেকে কিছু পরিমাণ পাট আসতে শুরু করে। যতই দিন যেতে থাকে ভারতীয় পাটের বীজ আসা বাড়তে থাকে। বিগত শতকের ৯০-এর দশকের মধ্যে ভারতীয় পাট বীজের উপর নির্ভর হয়ে পড়ে এ দেশের পাট চাষিরা। বর্তমানে বৈধভাবে ভারত থেকে পাটের বীজ আমদানি করা হচ্ছে। সম্পাদনা: এনামুল হক