এক সময়ের স্রোতস্বিনী ‘নবগঙ্গা’ এখন ধানক্ষেত
মো. ইমরান হোসেন, নড়াইল : নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত এককালের খরস্রোতা নবগঙ্গা নদী শুকিয়ে শীর্ণকায় খালে পরিণত হয়ে পড়েছে। নদীর বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে জেগে উঠেছে অসংখ্য ছোট-বড় চর। স্থানীয় ভূমিদস্যুরা ভূমিহীন সেজে নামে-বেনামে চর দখল করে ধান চাষ ও বসতবাড়ি তৈরি করে বসবাস করছে। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে পলি মাটি পড়ার দরুণ নদী ভরাট হয়ে জেগে উঠেছে ছোট-বড় অসংখ্য চর। নাব্যতা সংকটের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে নৌ যোগাযোগ
নড়াইল জেলার মধ্যে সমৃদ্ধ ও সম্ভাবনাময়ী জনপদ লোহাগড়ার ওপর দিয়ে মধুমতি, নবগঙ্গা ও বানকানা নদী প্রবাহিত। এ ছাড়াও রয়েছে অসংখ্য খাল, বিল ও বাওড়। বানকানা নদীর কোন অস্থিত্বই আজ আর লোহাগড়ায় নেই। ৫০ বছর আগেই সমতল ভূমিতে পরিণত হয়ে পড়েছে এক সময়কার বানকানা নদী। নবগঙ্গা নদীও আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। নবগঙ্গা নদীতে বর্ষা এলে নৌকা বাইচ উপভোগ করেন হাজারো মানুষ । একসময়ের স্রোতস্বীনি নদীর তীরে গড়ে উঠেছিলো হাট-বাজার-বন্দর। জেলার সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক বাজার লোহাগড়া, লক্ষ্মীপাশা ও মহাজন বাজারও গড়ে উঠে এই নদীর তীরে । সেসময় ঘাটে ঘাটে স্ট্রিমার চলতো , তখন কোলকাতা থেকে স্টিমার নিয়ে বনিকেরা খুলনা হয়ে নড়াইলে আসতেন বাণিজ্য করতে লোক আর পসরা নিয়ে । সেবই এখন কেবলই স্মৃতি। কালের আবর্তে নবগঙ্গা নদী তার রূপ যৌবন সবই হারিয়েছে। তবে তার জন্য যতটা প্রাকৃতিক কারণ দায়ী তার চেয়ে মানুষের তৈরি কারন অনেক বেশি দায়ী বলে মনে করেন সচেতন নাগরিকরা। নবগঙ্গা নদীটি লোহাগড়া উপজেলার অন্যতম প্রধান নদী ও যাতায়াতের তখনকার একমাত্র মাধ্যম। এই নদীতে আশির দশকেও অসংখ্য লঞ্চ চলতো এবং পাল তোলা নৌকায় গুণ টেনে পণ্য নাব্যতা সংকট ও কালের বিবর্তনে নবগঙ্গা নদীর সেই জৌলুস আর নেই। নেই সেই আগ্রাসী রূপ। এককালের খরস্রোতা নবগঙ্গা নদী শুকিয়ে খালে পরিনত হয়ে পড়েছে। নবগঙ্গার কুন্দশী এলাকা থেকে মহাজন এলাকা পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিলোমিটারের অবস্থা এতটাই সঙ্গীন, অনেক এলাকায় নবগঙ্গা শুকিয়ে পায়ে চলা সরু পথে পরিণত হয়ে পড়েছে। এমনকি নদীতে বাঁধ দিয়ে মৎস্য শিকারীরা মাছ শিকার করছে । সম্প্রতিকাল হতে শীত মৌসূম শুরুর সাথে সাথে নবগঙ্গা নদীর নাব্যতা অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়। নদী শুকিয়ে যাওয়ার কারণে লোহাগড়া-নড়াইল ভায়া খুলনা রুটে নৌ যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে অনেক আগেই। ফলে নৌ পথে পণ্য পরিবহণে চরম সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে ব্যবসা বাণিজ্যে নেমেছে ধস। অনুসন্ধানকালে আরও জানা গেছে, নবগঙ্গা নদীর প্রায় ৩৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে জেগে উঠেছে ছোট-বড় অসংখ্য চর। স্থানীয় ভূমি দস্যূরা নামে-বেনাম ভুয়া কাগজ পত্র তৈরী করে চর দখল করে ধানের চাষাবাদ করছে। লোহাগড়ায় চর দখলের ঘটনা প্রতি বছরই বাড়ছে। সেইসঙ্গে বাড়ছে মামলা-মোকদ্দমা। মৃতপ্রায় নবগঙ্গার নাব্যতা ফিরিয়ে আনার জন্য বিগত ২০১১-১২ অর্থ বছরে ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে মল্লিকপুর থেকে মহাজন পর্যন্ত খনন কাজ করা হলেও তা কোন কাজে আসেনি বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রতি বর্ষা মৌসুমে পলি পড়তে পড়তে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। সম্পাদনা: মুরাদ হাসান