আস্থা ভোটেও জিতলেন তামিলনাড়–র মুখ্যমন্ত্রী পালানিসামী
ইমরুল শাহেদ: প্রায় পাঁচ ঘণ্টা প্রচ- হট্টগোলের পর অনুষ্ঠিত আস্থা ভোটে জয়ী হয়েছেন গত বৃহস্পতিবার তামিলনাড়–র মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়া এআইএডিএমকে দলের দ্বিতীয় নেতা ইদাপ্পাদি পালানিসামী। তিনি ১৩৩ জনের মধ্যে ১২২ জন বিধায়কের ভোট পেয়েছেন। ও পনিরসেলভম পেয়েছেন ১১ ভোট। পালানিসামীই এখন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। আস্থা ভোটের আগে তিনি গভর্নর বিদ্যাসাগর রাওয়ের কাছে হস্তান্তর করা একটি চিঠিতে বলেছেন, ১৪ ফেব্রুয়ারি দলের বিধায়করা তাকেই তাদের নেতা নির্বাচন করেছে। কিন্তু এখানে নেতা হওয়ার কথা ছিল শশীকলার। তিনি বর্তমানে দুর্নীতির দায়ে কর্নাটকের জেলে আছেন। জেলে গিয়েও তিনি জেলের নিয়ম-কানুন মানছেন বলে গণমাধ্যমগুলোতে বলা হচ্ছে। জেলের নিয়ম অনুসারে তাকে সাদা শাড়ি পরতে দেওয়া হলে ম্যাচিং করা ব্লাউজ নেই বলে তিনি সেটা পরেননি। পক্ষান্তরে গত ৫ ডিসেম্বর জয়ললিতার মৃত্যুর পর শশীকলা শিবিরের তিনিই একমাত্র নেতা যিনি দলের সমর্থন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হলেন। কিন্তু জয়ললিতার মৃত্যুর পর মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে রাজ্যটির তাৎক্ষণিকভাবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন পনিরসেলভম। আস্থা ভোটে তিনি জিততে পারেননি। কিন্তু ডিএমকে এবং কংগ্রেস গোপন ব্যালটে ভোট গ্রহণ করার দাবি জানিয়েছিলেন। সে দাবি স্পিকার পি ধনপাল বাতিল করে দেন। বিরোধী দলের নেতা এমকে স্ট্যালিনকে আস্থা ভোট শুরুর আগে বক্তব্য দিতে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, আস্থা ভোট দিন পিছিয়ে দেওয়া উচিত। হই-হট্টগোলে সংসদের কার্যক্রমে ব্যাঘাত হয়েছে। সংসদের কার্যক্রম দুইবার মুলতবি হয়েছে। এ সময় ডিএমকের বিধায়করা স্পিকারকে কথাই বলতে দিচ্ছিলেন না। স্ট্যালিনকে দেখা যায় ছেঁড়া শার্ট পরিহিত অবস্থায়ই সংসদের বাইরে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে দেখা গেছে। বিকাল তিনটার দিকে আবার সংসদের কার্যক্রম শুরু হলে কংগ্রেস তা বর্জন করে। আইইউএমএলের বিধায়করাও সংসদ বর্জন করে এবং ডিএমকে বিধায়কদের বের করে দিয়েই সংসদের কার্যক্রম শুরু হয়। আস্থা ভোটের আগে সংসদের বাইরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গৃহীত হয়। উল্লেখ্য, পালানিসামী বলেছিলেন শপথ নেওয়ার পর তিনি কর্নাটকে শশীকলার সঙ্গে দেখা করতে যাবেন। সে সময় এখন সমাগত।
অন্যদিকে আনন্দবাজার জানিয়েছে, বেঙ্গালুরুর পরাপ্পনা অগ্রহরা সেন্ট্রাল জেলের ১০৮ নম্বর সেলে রয়েছেন শশীকলা নটরাজন। জেলে গিয়ে প্রথম কয়েক দিন কথা না বলা আর আত্মমগ্নতাতেই সীমাবদ্ধ রয়েছেন শশীকলা নটরাজন, এমনটা ভাবলে কিন্তু ভুল হবে। জেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তিনি খানিক অসহযোগিতাই করছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। জেলের বিভিন্ন নিয়ম-কানুন মানতেও তার ঈষৎ আপত্তিই রয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। কয়েদিদের জন্য নির্দিষ্ট সাদা শাড়ি দেওয়া হয়েছিল শশীকলাকে। তিনি নাকি সে শাড়ি পরতে অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, ম্যাচিং ব্লাউজ নেই, তাই ওই শাড়ি পরবেন না। তাকে যে সেলটি দেওয়া হয়েছে সেটি একেবারেই সাধারণ মানের। সেলের মধ্যেই আধখানা দেওয়ালের আবডাল, তারও পরে শৌচাগার। বুধবার ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আত্মসমর্পণ করেই নিজের জন্য প্রথম শ্রেণির সেলের দাবি জানিয়েছিলেন শশীকলা। পত্রপাঠ খারিজ হয়ে যায় সে দাবি। জেল চত্বরে তিনি পা রাখার পরেই সেই অসন্তোষের আঁচ মেলে। শশীকলার জন্য যে সেল বরাদ্দ হয়েছে, জেলের গেট থেকে তার দূরত্ব খুব কম নয়। জেলের নিয়ম অনুযায়ী মেন গেট থেকে সেল পর্যন্ত যাওয়ার জন্য শশীকলাকে জিপে উঠতে বলা হয়। এতেই ঝাঁঝিয়ে ওঠেন শশীকলা। বলেন, ‘আমি কোনো ছিঁচকে চোর নই। আমি ওই জিপে বসে যাব না। জেলের সেলে গিয়ে বসব। কিন্তু একজন অপরাধীর মতো ওই খোলা জিপে বসে যাব না।’ শশীকলাকে জানানো হয়, মেন গেট থেকে তার সেলের দূরত্ব অনেকটা, জিপে করেই যেতে হবে। কিন্তু অনড় শশীকলা জানিয়ে দেন, যত দূরই হোক, তিনি হেঁটেই যাবেন। শশীকলাকে কিছুতেই জিপে তুলতে পারেনি জেল কর্তৃপক্ষ। শেষে তাকে হাঁটিয়েই সেল পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়। সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, আনন্দবাজার