দলে ও মন্ত্রিপরিষদে ফিরছেন সৈয়দ আবুল হোসেন!
বিশেষ প্রতিনিধি: পদ্মা সেতু প্রকল্পে এসএনসি লাভালিনকে পরামর্শক নিয়োগের বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ প্রমাণ না পাওয়ায় আওয়ামী লীগে ও মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন। তাকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য পদে নেওয়া হতে পারে। সেই সঙ্গে তাকে একটি মন্ত্রণালয়েরও দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়টি সরকারের নীতিনির্ধারক মহল চিন্তাভাবনা করছে। এখন এই ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি চাইলে এ ব্যাপারে কেউ আপত্তি করতে পারবে না এবং কোনো ষড়যন্ত্রই কাজ হবে না। প্রধানমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে দলে ও মন্ত্রিপরিষদের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে চাইছেন। তবে এ ব্যাপারে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামের তিনটি পদ খালি আছে। এর একটিতে আগামী দিনে শেখ রেহানা, আর একটিকে সজীব ওয়াজেদ জয়ের আসার কথা রয়েছে। তবে তারা এখনই এই পদের দায়িত্ব নিতে চাইছেন না। তারা দূর থেকেই ও দলের বাইরে থেকেই কাজ করতে চাইছেন। এই দুজনের জন্য দুটি পদ খালি থাকবে। আর একটি পদ রাখা হয়েছে সাবেক মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের জন্য। আবুল হোসেনকে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের সময়ে আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদে কিংবা প্রেসিডিয়ামের সদস্য পদে দায়িত্ব দেওয়া হবে এমন কথা হয়েছিল। কিন্তু তিনি দেশে নির্দোষ প্রমাণিত হলেও কানাডার আদালতে মামলাটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ও বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ মিথ্যে প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী তাকে দায়িত্ব দিয়ে সমালোচনার মুখ ফেলতে চাননি । আবার মন্ত্রিপরিষদের সদস্য পদে একবার সম্পৃক্ত করতে চেয়েছিলেন কিন্তু আবুল হোসেন চেয়েছেন পদ্মা সেতুর ঘটনা কানাডার আদালতে মিথ্যে প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত কোনো দায়িত্ব নিবেন না। এখনও তিনি দায়িত্ব নিতে আগ্রহী নন। তার পরিবারের সদস্যরাও তাকে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে দেখতে চান না। কারণ তারা মনে করেন আবুল হোসেনের দোষ না থাকলেও তাকে বার বার সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছে।
সূত্র জানায়, আবুল হোসেনকে টেকনোক্রেট কোটায় মন্ত্রী করা হতে পারে। এছাড়াও তাকে প্রেসিডিয়ামের সদস্য কিংবা আন্তর্জাতিক সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। যদিও আবুল হোসেন এর আগে আন্তর্জাতিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন একবার। নতুন করে ওই পদের দায়িত্ব নিতে চান না।
তাকে মন্ত্রিত্ব দেওয়ার বিষয়ে আইনমন্ত্রীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা যখন দুদক থেকে বিশ্বব্যাংকের অভিযোগের অনুসন্ধান ও এই সংক্রান্ত বিষয়ে কাজ করছিলাম, সেখানে তিনি দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত এমন কোনো প্রমাণ মিলেনি। তাকে আসামি করার জন্য বিশ্বব্যাংকের প্যানেলের তরফ থেকে দুদকের উপর চাপ ছিল। কিন্তু আমরা তা দেইনি। আমরা বলেছি তাদেরকে যেখানে অপরাধ প্রমাণ হয়নি সেখানে তাকে আসামি করা যাবে না। কিন্তু কোনোভাবেই তারা তা মেনে নিচ্ছিল না। এই কারণে সন্দেহভাজন হিসেবে এফআইআরএ নাম লেখা হয়েছিল। পরে তো প্রমাণ হয়েছে তিনি জড়িত নন। আবার কানাডার আদালতেও তার নাম ছিল না মামলায়। সেখানেও কোনো প্রমাণ ছিল না। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ বিশ্বব্যাংক করলেও কোনো প্রমাণ মিলেনি। তিনি বলেন, আমি মনে করি প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী তাকে চাইলে মন্ত্রীও ফিরিয়ে দিতে পারেন। আবার দলেও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিতে পারেন। এ ব্যাপারে তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে।
আইনমন্ত্রী বলেন, সৈয়দ আবুল হোসেন অপরাধ না করেও বিশ্বব্যাংকের কারণে অনেক হেয় প্রতিপন্ন হয়েছেন। এটা ঠিক হয়নি। এটা অন্যায় ছিল বিশ্বব্যাংকের। তাকে মন্ত্রী ও দলেও যেমন ফেরানো যেতে পারে আবার বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে তিনি মামলাও করতে পারেন।
আবুল হোসেনের পরিবারের একজন সদস্য বলেন, আমাদের পরিকল্পনা হচ্ছে, তিনি ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত থাকুন। আবার সরকারে গেলে তাকে নিয়ে বার বার মিথ্যে খবর রটানো হয়েছে। এতে তার সম্মানহানী হয়েছে। এছাড়াও এতে পরিবারেরও অনেক টেনশন বাড়ে। এদিকে আবুল হোসেনের শুভানুধ্যায়ী, বন্ধুরা তাকে আবারও দলের ও মন্ত্রিপরিষদে যাওয়ার জন্যও বলছেন। কিন্তু তিনি তাতে সম্মত নন।
এর আগে একবার এ ব্যাপারে কথা উঠলে তখন কানাডার মামলা শেষ না হওয়ার কারণে তিনি চেয়েছিলেন মামলা শেষ হওয়ার পর আগামী সংসদ নির্বাচন করবেন এবং এরপর আগামী সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে মন্ত্রী হতে চান।
এদিকে বর্তমান মন্ত্রিপরিষদের মন্ত্রীরা অনেকেই তার মন্ত্রিত্ব যাওয়া নিয়ে আফসোস করেছেন। দুঃখ প্রকাশও করেছেন। সাবেক রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে অনেকেই মন্ত্রী মর্যাদাও ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বলেছেন। এই ব্যাপারে জানতে চাইলে সূত্র জানায়, সৈয়দ আবুল হোসেন রয়েছেন বিদেশে। তিনি এখনও দেশে ফিরেননি। আজ তার ফেরার কথা রয়েছে। এদিকে প্রধানমন্ত্রীও দেশে নেই। তিনি জার্মানিতে গিয়েছেন। আজ তারও দেশে ফেরার কথা রয়েছে। সূত্র জানায়, দুজনই দেশে ফেরার পর তাদের দেখা হতে পারে। সেই সময়ে প্রধানমন্ত্রী এই বিষয়ে তার সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন।
সূত্র জানায়, সৈয়দ আবুল হোসেনকে মন্ত্রিপরিষদের কানাডার আদালতে মামলা শেষ না হলে ও সম্পূর্ণভাবে এই মামলাটি শেষ না হলে তাকে কোনো পদে নিয়ে আসা হলে এ নিয়ে সমালোচনা হবে। এতে সরকারের বিরুদ্ধেও কথা বলা হবে। সেটা প্রধানমন্ত্রীও চাননি। এখন সেই বাধা কেটেছে।
সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে মন্ত্রিত্ব ফিরিয়ে দিয়ে তার মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার দাবি জানিয়েছেন বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ও সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। তিনি বলেছেন, সৈয়দ আবুল হোসেন এবং সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীকে দুদক যে হেনস্তা করেছে সেই ব্যাপারে দুদকের ভুল স্বীকার করে বক্তব্য দেওয়াও উচিত।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ভুয়া অভিযোগ তুলে ২০১৩ সালে এই প্রকল্পের অর্থায়ন থেকে ফিরে যায় বিশ্বব্যাংক। তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকেও কথিত এই দুর্নীতি ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়ানো হয়। অভিযোগ উঠার পর যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদকের পদটিও হারান সৈয়দ আবুল হোসেন। বি. চৌধুরী বলেন, যেহেতু ভুল তথ্যের কারণে সৈয়দ আবুল হোসেন মন্ত্রিত্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন সেহেতু পুনরায় মন্ত্রিত্ব দিয়ে তার মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা উচিত বলে আমি মনে করি। দুদক যেভাবে সৈয়দ আবুল হোসেন এবং সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীকে একটি ভুল তথ্যের কারণে হেনস্তা করেছে সে জন্য দুদকের পক্ষ থেকে বক্তব্য দিয়ে ভুল স্বীকার করা উচিত বলে দেশবাসী মনে করে।
নৌপরিবহনমন্ত্রী শাহাজান খান বলেন, পদ্মা সেতুর দুর্নীতির যে অভিযোগ করেছিল বিশ্বব্যাংক, তা এখন অসত্য প্রমাণিত হয়েছে। বিশ্বব্যাংক যে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে পদ্মা সেতুর টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল, সেই কারণে একজন মন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল। একই কারণে এক সচিবকে কারাগারে যেতে হয়েছিল- যা দুঃখজনক। এতে সরকারের পক্ষ থেকে বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে ক্ষতিগ্রস্তরা চাইলে বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করতে পারবে। আর আমি বিশ্বাস করি ক্ষতিগ্রস্তরা অভিযোগ উত্থাপন করবে।