বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে এখনই মামলা করার উদ্যোগ নিচ্ছেন না প্রধান ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় এবং কানাডা আদালতে মামলা করার কারণে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তারা আইনি ব্যবস্থা নিতে পারে। মিথ্যা অভিযোগ এনে মামলায় জড়ানোর চেষ্টা করায় ক্ষতিগ্রস্তরা বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে অবশ্যই মামলা করতে পারেন। প্রধানমন্ত্রী জামার্নী এই কথা বলার পর এখনই ওই ঘটনায় যারা প্রধান ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি তারা মামলা করার জন্য উদ্যোগ নিচ্ছেন না। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী ও সাবেক সেতু বিভাগের সচিব মোশরাররফ হোসেন ভুইয়া। এছাড়াও রয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান। এর বাইরে ছিলেন আরো ক্ষতিগ্রস্ত আট ব্যক্তি। তারা কেউ মামলা করবেন কিনা সেই বিষয়েও কোনো সিদ্ধান্ত নেনি।
ক্ষতিগ্রস্তদের একটি সূত্র জানায়, বাংলাদেশের তরফ থেকে ও সরকারের তরফ থেকে তাদেরকে সব রকমের সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হলে ও আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হলে তারা এই বিষয়ে এগুতে পারেন। সেই ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নিতে চান। কারণ তারা মনে করছেন বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা শুরুতে করা হলেও পরে আইনি খরচ চালানো ও অন্যান্য যে সহায়তা দরকার সেটা কারো একার ব্যক্তিগতভাবে করা সম্ভব হবে না। এই কারণে তারা সরকারের সহায়তাও লাগবে। তবে এই ব্যাপারে সরকার সহায়তা করবে কিনা এমন কোনো সিদ্ধান্ত না হলেও আইনমন্ত্রী ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা কিভাবে মামলা করতে পারেন বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে সেই ব্যাপারে পরামর্শ দিতে চেয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের কেউ এখনও মামলা করার পরামর্শ নিতে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। কিংবা তার যে আইনি পরামর্শ প্রদান প্রতিষ্ঠান আছে সেখানেও যোগাযোগ করেননি। ক্ষতিগ্রস্তরা অনেকটা ঝামেলা মনে করেই এগুচ্ছেন না। তারা মনে করছেন, এখন মামলা করা হলে পরে সেই অভিযোগ প্রমাণ করা ও ক্ষতিপূরণ আদায় করা না গেলে সময় ও শ্রম দুটোই নষ্ট হবে। এই কারণে তারা ভাবার জন্য সময় নিচ্ছেন। একজন জানান, প্রধানমন্ত্রী মামলা করার ব্যাপারে সব ধরনের আশ্বাস দিয়ে মামলা করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেছেন, মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাচ্ছি যে, দীর্ঘ যন্ত্রণার পর কানাডিয়ান আদালতের রায়ে আমরা ন্যায় বিচার লাভ করেছি।
এদিকে ক্ষতিগ্রস্তরাও বলেছেন একই কথা। সৈয়দ আবুল হোসেন বলেছেন, বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ কানাডার আদালতে টিকেনি। মিথ্যে প্রমাণ হয়েছে। এটা টিকবে না। এটা আমি আগেও জানতাম। এখন আনুষ্ঠানিকভাবে হয়েছে, এটা স্বস্তির জায়গা। কারণ কোনো অভিযোগ বিশ্বব্যাংক প্রমাণ করতে পারেনি। তাদের মতো একটা প্রতিষ্ঠানের আরও দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন। মামলা করে এখন কি হবে। তাদের শিক্ষা হয়েছে। তাছাড়াও আমার মামলা করা বড় কথা নয়। আমি খুশি হবো বিশ্বব্যাংক যদি ক্ষমা চায় এবং বাংলাদেশের যে ক্ষতি হয়েছে তা দিলেই আমি খুশি হবো। আমার ব্যক্তিগত চাওয়ার কিছু নেই। আমার চাওয়া হচ্ছে তাদের কারণে পদ্মা সেতুর যে কাজ দেরি হলো এই জন্য আমাদের যে ক্ষতি হলো সেটা আদায় করতে পারলে আমার বড় পাওনা হবে।
মোশাররফ হোসেন ভুইয়া বলেন, বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ মিথ্যে প্রমাণ হওয়ায় তাদের শিক্ষা হয়েছে। আর সত্যি তা দেশে বিদেশে সবাই জেনেছে। আগামী দিনে তারা এই ধরনের কোনো অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে এই ব্যাপারে অভিযোগ করবে না।