পদ্মায় ফেঁসে যেতে পারেন ড. ইউনূসসহ ষড়যন্ত্রকারীরা
উম্মুল ওয়ারা সুইটি: পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগের পেছনের ষড়যন্ত্রকারী নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসসহ কুশীলবরা ফেঁসে যাচ্ছেন। বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধ কোনো ধরনের মামলা না করলেও দেশের ভেতর থেকে যারা ইন্ধন দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষে দাবি জোরালো হচ্ছে।
কানাডার আদালত এ সংক্রান্ত অভিযোগ নাকচ করে দেওয়ায় এ নিয়ে সরব হয়ে উঠেছেন সরকারের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা। এজন্য তারা ইতোমধ্যেই এ ষড়যন্ত্রের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত থাকতে পারেনÑ এমন ব্যক্তিদের নাম যেমন সামনে আনছেন, তেমনি সেই ষড়যন্ত্রের কুশীলবদের নিয়েও কথা বলছেন বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র মতে, পদ্মা সেতু নিয়ে ষড়যন্ত্রকারী ও পেছনের কুশীলবদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে ভুক্তভোগীরা। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এই মামলার কারণে যাদের সম্মান ক্ষুণœ হয়েছে তাদের মামলার প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। এর মধ্যে যারা মামলা হওয়ার পর বিরোধিতা করেছে তাদের না জড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন। তবে পদ্মা সেতু না হওয়ার জন্য যারা উঠেপড়ে লেগেছিল তাদের বিষয়টি খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
পদ্মা সেতুর দুর্নীতির অভিযোগের পেছনের কুশীলবদের ব্যাপারে ইতোমধ্যেই খোঁজখবর নিতে শুরু করেছে সরকার। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বলেছেন, সে সময় যারা এই দুর্নীতির অভিযোগের পক্ষে সরব ছিলেন এবং এ বিষয়ে পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে উসকানি দিয়েছেন, তারা ফেঁসে যেতে পারেন। সরকারের পক্ষ থেকে এদের ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তারা। এমনকি সে সময়কার বিভিন্ন পত্রপত্রিকা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এই ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষে বিশিষ্টজনরাও।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, যদি প্রমাণিত হয় পদ্মা সেতু বানচালের জন্য দেশীয় কোনো কুশীলবের হাত ছিল, তাহলে সে ব্যক্তি যেই হোক না কেন, যাদের অপপ্রচারের কারণে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœœ হয়েছিল তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় এনে শাস্তির মুখোমুখি করা উচিত। কারণ সমাজের এসব মুখোশধারীদের মুখোশ উন্মোচিত না করা হলে দেশের মানুষ জানতে পারবে না তারা দেশের জন্য কতটা ভয়ংকর।
সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, রুল হয়েছে। সেখানে কমিটি করতে বলা হয়েছে। তার মানে আইনগত প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কমিশনে যদি কারও নাম পাওয়া যায়, তা হলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। বাংলাদেশের বাইরেও যদি কোনো শক্তিশালী পক্ষ থাকে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এমনকি এই কমিশনের বাইরে চাইলে সরকারও নিজে কমিশন করে এসব কুশীলবের চিহ্নিত করতে পারে। সেটা করা উচিত। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও বিদেশি দূতাবাসের সাহায্য নিতে পারে। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র হিসেবে মামলা করা যাবে না।
এদিকে আওয়ামী লীগের একটি বিশেষ সূত্র জানিয়েছে, এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যারাই জড়িত ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষে সব তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করতে বলেছেন। গতকাল জার্মানের মিউনিখের সম্মেলনে সেখানকার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদেরও প্রধানমন্ত্রী ইউনূসের জড়িত থাকার বিষয়টি স্পষ্টভাবে বলেছেন। আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন, এবার ড. ইউনূসকে ছাড় দেওয়া হবে না।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ড. ইউনূসের বিষয়টি অনেক জায়গা থেকেই আলোচনায় আসছে। আর সরকার এটা কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে করছে না। যারা দেশের উন্নয়নের বিরুদ্ধে থাকবেন এবং উন্নয়ন কাজে বাধা দেবেন, ষড়যন্ত্র করবেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই হবে। তা হলে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে সরকার আইনগত ব্যবস্থা নেবে কি নাÑএমন প্রশ্নের উত্তরে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রী যে তথ্য দিয়েছেন সেই তথ্যের ওপর ভিত্তি করে আমি বলতে পারি, ড. ইউনূস পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধের পরিকল্পনার ষড়যন্ত্রে জড়িত। সব কিছুরই যে বিচার করতে হবে তা নয়। সব কিছুতে আইন নয়। এর বিচার দেশবাসী করবে। আর ১৪ দলের মুখপাত্র ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আমরা স্পিকারের কাছে আবেদন করেছি, তাকে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় ডেকে জবাবদিহি করা হোক। আমরা মনে করি, ইউনূসসহ সব ষড়যন্ত্রকারীর বিষয়ে দেশের জনগণের জানার অবকাশ আছে।
জানা গেছে, ব্যক্তি হিসেবে কেবল ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম এসেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরই বলে আসছেন, পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ তোলা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ এবং এতে বাংলাদেশিরাও জড়িত ছিলেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পদ্মা সেতুর কাজে বিশ্বব্যাংকের আজগুবি অভিযোগ ইস্যুতে সরকার যখন কিছুটা বেকায়দায় তখন কেবল বিএনপি নয়, সুশীল সমাজের কয়েকজন প্রতিনিধিও রয়েছেন এই তালিকায়। সে সময় নিজের গুলশান অফিসে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছিলেন, দেশ স্বাধীনের পর এই প্রথম বিশ্বব্যাংক তার দেওয়া বরাদ্দ দুর্নীতির কারণে বাতিল করল। এই সরকার পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি করেছে। দলের বর্তমান মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে তা প্রমাণিত। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছিলেন, আবুল হোসেন দেশপ্রেমিক নয়। সে একজন নির্লজ্জ ব্যক্তি, যে বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতির অভিযোগ আনার পরও ১০ মাস ক্ষমতা ধরে রেখেছিল। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এএসএম হান্নান শাহ বলেছিলেন, শেখ হাসিনা দুর্নীতিগ্রস্ত এক প্রধানমন্ত্রী এবং তারও পদত্যাগের মাধ্যমে একটি উদাহরণ প্রতিষ্ঠা করা উচিত। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের মধ্যে অবশ্য আগের নেতিবাচক অবস্থান থেকে সরে এসেছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।এ ছাড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান, নাগরিক ঐক্যর আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না ও সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদারসহ আরও কয়েকজনও নেতিবাচক মন্তব্য করেন।
জানা গেছে, যারা সেতুর দুর্নীতি মামলা ও বিশ্বব্যাংক মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার পর মন্তব্য করেছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই।