‘একদিনের জন্য নয়, শহিদ মিনারে জুতা পায়ে ওঠা যাবে না কখনোই’
উম্মুল ওয়ারা সুইটি: একুশে ফেব্রুয়ারি এলেই কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের ধোয়া-মোছা শুরু হয়। একদিনের জন্য শহিদ মিনারকে ঝঁকঝঁকে তকতকে করা হয়। আর অন্য সময় শহিদ মিনার রক্ষণাবেক্ষণে যেন ভাটা পড়ে। প্রতিনিয়ত জুতা-স্যান্ডেল পায়ে দিয়ে উঠে যাচ্ছে মানুষ। মিনারের উপর উঠে সেলফি তোলা চলে।
ভাষা সৈনিক এবং ভাষা গবেষকরা বলছেন, একদিনের জন্য শহিদ মিনারকে সাজানো গোছানো হয়। এটা তো ভিন্ন বিষয়। ২১শে ফেব্রুয়ারির জন্য প্রস্তুতির দরকার আছে। তবে অন্য সময় যেভাবে শহিদ মিনার অবহেলায় থাকে তা মেনে নেওয়ার মতো নয়।
ভাষা সৈনিক আহমেদ রফিক বলেন, মিনারের পাশ দিয়ে আসতে যেতে দেখা যায়, বিভিন্ন বয়সের লোকজন যেভাবে মিনারের উপর এবং আশপাশে বসে থাকে তখন মনে হয় কোনো একটি পার্কে তারা বেড়াতে এসেছে। শুধু কি বাদাম খাওয়া, মাঝে মাঝে খবর পড়ি শহিদ মিনারের চত্বরে বসে গাঁজা আফিমসহ বিভিন্ন নেশাদ্রব্য গ্রহণ করে ছেলেমেয়েরা। আর জুতা পরে তো অনেক শিক্ষিত লোকজন উঠে যায়। মানববন্ধনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আসা গণ্যমান্য লোকরাও জুতা পরেই মিনারের উপরে ওঠেন। তিনি বলেন, এতে নষ্ট হচ্ছে স্মৃতির মিনারের পবিত্রতা। জাতি হিসেবে একে চরম লজ্জার। শহিদদের সম্মান এবং মিনারের পবিত্রতা রক্ষায় এখনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। আহমেদ রফিক বলেন, শহিদ বেদিতে নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও জোরদার করতে হবে। যেন কেউ চাইলেই জুতা পরে বেদীতে ওঠতে না পারে। শহিদদের প্রতি অন্তত এই সম্মানটুকুর নিশ্চয়তা সরকারের কাছে দাবি করাই যায়।
ভাষা সৈনিক কামাল লোহানী বলেন, জুতা পায়ে শহিদ বেদীতে ওঠা চরম অসম্মানের। একুশ আমাদের সংস্কৃতিতে, মননে, গড়নে সদা ক্রিয়াশীল। বাঙালির অগ্রযাত্রার প্রথম সোপান এবং পাথেয় একুশ। তাই শহিদদের স্মৃতি রক্ষায় রাষ্ট্রীয় এবং ব্যক্তি পর্যায়ে আরও সচেতন হওয়া দরকার। তিনি বলেন, সন্ধ্যা নেমে এলেই শহিদ মিনার এলাকা অন্ধকার হয়ে পড়ে। দিনের আলোতেও মনে হয়, কোনো পার্ক। কেউ বাদাম খাচ্ছে, কেউ বেদীতে উঠে সেলফি তুলছে। কেউ যেন খেয়াল করছে না। রাতে তো নেশাগ্রস্তদের আড্ডায় পরিণত হয়। তিনি বলেন, শহিদ মিনারের ভাবগাম্ভীর্য বজায় রাখতে ২৪ ঘণ্টায়ই সেখানে আলো এবং তদারকির ব্যবস্থা রাখতে হবে। এই শহিদ মিনার আর বাংলা ভাষা আমাদের স্বাধীন শব্দের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল। এটা এই প্রজন্মের মগজের মধ্যে ভালো করে গেঁথে দিতে হবে।