এর আগে দরকার সব দলের ঐকমত্য টাকা পেলেই আগামী নির্বাচনে ই-ভোটিং চালু করতে পারবে নির্বাচন কমিশন
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: নতুন নির্বাচন কমিশন আগামী ২০১৮ সালের শেষভাগে কিংবা ২০১৯ এর শুরুতে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ই-ভোটিং সিস্টেম চালু করতে চাইছে। এই ভোট হবে ডিজিটাল ভোটিং মেশিনের মাধ্যমে। ভোটারদেরকে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে হবে। ভোটাররা মেশিনে ভোট দেওয়ার পাশাপাশি যে পরিমাণ ভোট সেখানে জমা পড়েছে, তা দেখতে পারবেন। ভোটের সংখ্যা নিয়ে যদি কেউ প্রশ্ন তুলে তাহলে সেই ব্যক্তির আপত্তির কারণে ভোট মেশিনে যে ভোট পড়েছে এর সংখ্যাও দেখানো সম্ভব হবে। এই ব্যাপারে গত কমিশন অনেক দূর কাজ এগিয়ে রেখেছে। বর্তমান কমিশন সেখান থেকেই কাজ করতে চাইছে। এই জন্য নির্বাচন কমিশন এই বিষয়ে আলোচনা করবে। এর আগে কমিশন ডিজিটাল ভোটিং মেশিন সংক্রান্ত বিষয়ে যে কারিগরি কমিটি করেছে ওই কমিটির রিপোর্টও দেখতে চাইছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার জানান, এর আগের দুটি কমিশনের সময়ে দুটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এর একটি হলো ইভিএম। আর একটি ডিজিটাল ভোটিং মেশিন। একটিতো আগেই বাতিল করা হয়েছে। ডিজিটাল ভোটিং মেশিনের বিষয়টি নিয়ে এর আগের কমিশন কাজ করেছেন। আমরা জানতে পেরেছি এই রকম একটি প্রকল্প এর আগের কমিশন বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নিয়েছিল। মেশিনও তৈরি করা হয়েছিল। আমরা ওই মেশিনটিও দেখবো। ওই মেশিনটি আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ করে এর যে সব সমস্যা হতে পারে তা দূর করেই তারা এটাকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়া যেতে পারে। তবে এই জন্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে হবে।
সরকারের ও আওয়ামী লীগের লক্ষ্য ও দাবি আগামী নির্বাচনে ই-ভোটিং চালু করা হোক। তবে বিএনপি এতে রাজি নয়। বিএনপির অভিযোগ এই সিস্টেম চালু করা হলে মেশিনের মাধ্যমে ভোট কারচুপি করা হবে। আর ভোট কারচুপি করা হলে ধরা সহজ হবে না মনে করছে। এতে করে ভোট চুরির সুযোগ আরও বাড়বে। এখন ষড়যন্ত্র চলছে, ভোট কারচুপির জন্য ডিজিটাল ভোটিং মেশিনের মাধ্যমে এই ভোট হবে।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, ডিজিটাল ভোটিং মেশিন তৈরি করা হয়েছে। এখন এই ব্যাপারে কমিশন সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করলে পরবর্তী কাজ এগুনো যাবে। সেই জন্য এই সংক্রান্ত প্রস্তাবটি হাতে আসার পরই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তাছাড়া কেবল সিদ্ধান্ত নিলে হবে না। এই জন্য একটি বাজেটও লাগবে। আগামী অর্থ বছরে সরকার বাজেট বরাদ্দ দিলে প্রয়োজনীয় ভোটিং মেশিন আগামী দেড় বছরের মধ্যে তৈরি করা হবে। সেই মেশিন দিয়েই আগামী নির্বাচন গ্রহণ করা হবে।
নির্বাচন কমিশন সূত্র আরও জানায়, এই জন্য যে টাকা দরকার সেই টাকা দেওয়া হলে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করার জন্য বেশি দিন সময় লাগবে না। অর্থমন্ত্রীর উপর বিষয়টি অনেকাংশে নির্ভরশীল। তিনি অর্থ বরাদ্দ দিতে সম্মতি দিলে তা করা যাবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা বলেন, এই নির্বাচন পদ্ধতি সব দল মেনে নিবে কিনা সেটাও দেখতে হবে। এই জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও আলোচনার দরকার হবে। এছাড়াও এই জন্য নির্বাচন আইনেও সংশোধনী আনতে হবে। সব দিক মিলিয়ে ও সবার ঐকমত্যের ভিত্তিতে এটা করতে পারলে ভাল হবে।
কমিশন সূত্র জানায়, শুরুতে পুরো নির্বাচনেই এই মেশিনের ভোটের পদ্ধতি চালু করা হবে নাকি আংশিক করে এরপর করা হবে সেটাও দেখতে হবে। এ সংক্রান্ত কারিগরি কমিটি রয়েছে তারা এই ব্যাপারে মতামত দিবে। তাদের মতামত নিয়েই কাজ করা হবে। যদিও ওই কমিটির সদস্যরা মনে করেন, ডিজিটাল মেশিনে ভোট গ্রহণ করা হলে ভোট গ্রহণে স্বচ্ছতা বাড়বে। জাল ভোটের সুযোগও বন্ধ হবে। এছাড়া ভোটারদের অধিকারও সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে। কারণ ভোটারদের আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের আইরিশও থাকবে। এতে করে একজন আর একজনের ভোট দিতে পারবে না। ভোটের সংখ্যাও সঙ্গে সঙ্গে দেখা যাবে।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক বলেছেন, আমরা মনে করি ডিজিটাল ভোটিং পদ্ধতি চালু করা দরকার। আমরা ডিজিভিএম আমরা অনেক দূর এগিয়ে ছিলাম। এই কমিশন চাইলে সেটা করতে পারে। আর করলে সুবিধা হবে। কারণ আমরা কাজ যেখানে রেখে এসেছিলাম তাতে বেশি কাজ করতে হবে না। এছাড়া কারিগরি কমিটির ওই মেশিনে আরও কী কী সংযোজন, বিয়োজন করা দরকার সেটাও যাচাই করে দেখছে। কমিটি নির্বাচন কমিশনের কাছে এই ব্যাপারে রিপোর্ট দিবে। ওই রিপোর্টের প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন মতামত দিবে। ই-ভোটিং চালু করতে হলে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত দিলে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধনী আনার প্রয়োজন হবে। আইনও সংশোধন করতে হবে।
আবদুল মোবারক আরও বলেন, আমরা যে কমিটি করে দিয়েছিলাম ওই কমিটির প্রধান জামিলুর রেজা চৌধুরী। তার নেতৃত্বে কমিটি কাজ করছে। ওই কমিটি ডিজিটাল মেশিনটি আরও পর্যালোচনা করছে। সেটা করে তারা রিপোর্ট তৈরি করবে। সেই রিপোর্টের প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন মত দিলে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। আবার কমিশন কেবল সিদ্ধান্ত নিলে হবে না, আইন সংশোধন করলেই হবে না। জনমত গঠন করাও জরুরি। ভোটারদের মধ্যে বেশিরভাগই গ্রামেগঞ্জে থাকেন তারা ওই মেশিনে ভোট দিতে পারবেন কিনা সেটাও দেখতে হবে। সম্পাদনা: এনামুল হক