একুশে পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি ও অবমাননা করছেন
পদক পেলেন ১৭ গুণীজন
উম্মুল ওয়ারা সুইটি: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া যে বক্তব্য দিয়েছেন তা পাকিস্তানের সুরে কথা বলা। এই মন্তব্য করে খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করছেন।
গতকাল সোমবার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে একুশে পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করতে পাকিস্তান এখনো নানা অপপ্রচার করছে এবং বাধার সৃষ্টি করছে। বিএনপি নেত্রী ৩০ লাখ শহীদের বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তার এই বক্তব্য পাকিস্তানিদের এই অপপ্রচার আর তার (খালেদা জিয়া) এই বক্তব্যে কোনো সূত্র আছে কি না- আমি জানি না। কিন্তু মনে হচ্ছে ওই একই সুরে যেন তিনি কথা বলার চেষ্টা করছেন এবং এটা শহীদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা ও অবমাননা করা ছাড়া আর কিছুই না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানিদের ষড়যন্ত্র এখনো শেষ হয়নি এবং কিছুদিন আগেও তারা ইতিহাস বিকৃত করে বই প্রকাশ করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, একাত্তরে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে মিলে তাদের এদেশীয় দোসরদের গণহত্যায় লিপ্ত হয়েছিল। ২৫ মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস হিসেবে’ গ্রহণ করে আন্তর্জাতিকভাবে এর স্বীকৃতি পাওয়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের স্বাধিকারের প্রত্যাশাকে ১৯৭১ সালে অস্ত্রের মুখে রুদ্ধ করার চেষ্টা করেছিল পশ্চিম পাকিস্তানিরা। সেই চেষ্টায় ২৫ মার্চ মধ্যরাতে ঢাকায় শ্বাপদের হিংস্রতা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে শুরু হয় তাদের গণহত্যা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২৫ মার্চ থেকে দিনের পর দিন হত্যা করেছে। ৩০ লাখ শহীদ জীবন দিয়েছে। দুই লাখ মা-বোন ইজ্জত দিয়েছে। এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য। দুর্ভাগ্য যে আমাদের দেশে কোনো কোনো রাজনৈতিক নেতা, বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়া কিছুদিন আগে বলেছিল, ৩০ লাখ শহীদ মৃত্যুবরণ করে নাই, নিহত হয় নাই। এই সংখ্যা নাকি ঠিক না। তিনি এ ঘটনাকে লজ্জার ও জঘন্য বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভাষার দাবিতে বাঙালির সংগ্রামের ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে ঘোষণা এবং মাতৃভাষা সংরক্ষণে আওয়ামী লীগ সরকারের ভূমিকা সবাই জানে। ভাষা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ছয় দফা আন্দোলন পার হয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে উপনীত হওয়ার প্রেক্ষাপটও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১৭ বিশিষ্ট নাগরিক এবার একুশে পদক পেয়েছেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী মনোনীত ও তাদের প্রতিনিধিদের হাতে পদক তুলে দেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরও বক্তব্য দেন।
একুশে পদক পেলেন যারাÑ ভাষা আন্দোলনের জন্য অধ্যাপক ড. শরিফা খাতুন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী, গবেষণায় সৈয়দ আকরম হোসেন এবং শিক্ষায় ইমিরেটাস অধ্যাপক ড. আলমগীর মোহাম্মদ সিরাজুদ্দীন, ভাষা ও সাহিত্যে প্রয়াত কবি ওমর আলীর সঙ্গে এবার একুশে পদক পেয়েছেন ছড়াকার সুকুমার বড়ুয়া। ভাস্কর্যে শিল্পকলায় আবদুল্লাহ খালেদ, চলচ্চিত্রে তানভীর মোকাম্মেল, নাটকে সারা যাকের ও নৃত্যে শামীম আরা নীপা একুশে পদক পেয়েছেন। সংগীতে সুষমা দাস, জুলহাস উদ্দিন আহমেদ, ওস্তাদ আজিজুল ইসলাম ও উদীচীর সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ সেলিম পেয়েছেন। সাংবাদিকতায় এবার এ পদক পেয়েছেন আবুল মোমেন ও স্বদেশ রায়। সমাজসেবায় অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হাসান।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় গত ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ সালের একুশে পদকের জন্য মনোনীতদের নাম ঘোষণা করে। পদক বিজয়ী প্রত্যেকে পেয়েছেন ১৮ ক্যারেট মানের ৩৫ গ্রাম সোনার একটি পদক এবং দুই লাখ টাকা। পদক অনুষ্ঠানে প্রত্যেকের পরিচিতি তুলে ধরা হয়।