শীতলক্ষ্যা নদী থেকে উদ্ধার প্রাডোর মালিক জাতীয় পার্টির (মঞ্জু) নেতা
সুজন কৈরী: কাপাসিয়ার শীতলক্ষ্যা নদী থেকে উদ্ধার হওয়া আলোচিত সেই বিলাসবহুল প্রাডো গাড়ির মালিকের সন্ধান পাওয়া গেছে। গাড়িটির মালিকের নাম খন্দকার হেফজুর রহমান। জাতীয় পার্টির (আনোয়ার হোসেন মঞ্জু) নেতা। দেড় বছর আগে ঢাকার গুলশান থেকে গাড়িসহ গুম হন তিনি। দেহরক্ষী, গাড়ির চালককে পাওয়া গেলেও খন্দকার হেফজুর রহমানের এখনো সন্ধান মেলেনি। গত সোমবার রাতে হেফজুর রহমানের স্ত্রী সালেহা বেগম সিআইডির সহযোগিতায় কাপাসিয়া থানায় গিয়ে গাড়িটি শনাক্ত করেন।
সালেহা বেগম ও কাপাসিয়া থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক জানান, ২০১৫ সালের ৭ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টার দিকে ঢাকার বাড্ডার ৬৭/৩ নম্বর বাড়ি থেকে নিজস্ব প্রাডো গাড়ি নিয়ে গুলশানের উদ্দেশে বের হন খন্দকার হেফজুর রহমান। তার সঙ্গে ছিলেন দেহরক্ষী অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন শওকত, আবদুল আওয়াল ও চালক শাহ আলম। গাড়িটি গুলশান ১ নম্বরের লিংক রোডের মাথায় পৌঁছালে অপরিচিত সাদা পোশাকধারী কয়েকজন ব্যক্তি গাড়িটি থামায়। তারা অস্ত্র দেখিয়ে অন্যদের নামিয়ে দিয়ে শুধু হেফজুর রহমানকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। এরপর থেকে হেফজুর রহমান ও তার গাড়ির হদিস পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় সালেহা বেগম ২৫ সেপ্টেম্বর গুলশান থানায় মামলা করেন। ওই সময় মামলাটি তদন্ত করেন এসআই মোহাম্মদ আলী হাসান। এরপর মামলার কোনো অগ্রগতি হয়নি। দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর পর গত ১৯ জানুয়ারি কাপাসিয়ার দস্যুনারায়ণপুর বাজারসংলগ্ন শীতলক্ষ্যা নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে জেলেদের জালে একটি গাড়ির সন্ধান পাওয়া যায়। কাপাসিয়া থানার পুলিশ এসে নদী থেকে প্রাডো গাড়ি উদ্ধার করে। কাপাসিয়া থানার ওসি জানান, গাড়ির নম্বর প্লেটে ঢাকা মেট্রো-ঘ ১১-২০২৯ লেখা ছিল।
অনুসন্ধান করে এই নম্বরের বিপরীতে কোনো গাড়ির মালিক পাওয়া যায়নি। পরে থানার এসআই মো. দুলাল মিয়া আদালতের অনুমতি নিয়ে গাড়ির চেসিস ও ইঞ্জিন নম্বর দিয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষে (বি আরটিআই) অনুসন্ধান চালায়। এতে প্রকৃত মালিক ও গাড়ির নম্বর পাওয়া যায়। গাড়ির প্রকৃত নম্বর ঢাকা মেট্রো-ঘ-১১-৫৭৫৬। রেজিস্ট্রেশনের তারিখ ২৭ নভেম্বর ২০০৪। পরে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পান পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ঢাকার গুলশান উত্তর ইউনিটের পরিদর্শক মো. আবদুল কাইয়ুম।
সালেহা বেগম জানান, তার স্বামী খন্দকার হেফজুর রহমান গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি (আনোয়ার হোসেন মঞ্জু) থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনে বাইসাইকেল প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। তার স্বামী জমি বেচাকেনার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বাড়ি কসবা উপজেলার কাইউমপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামে। তিনি বলেন, দেহরক্ষী, গাড়িচালক ও গাড়ি পাওয়া গেলেও এখনো সন্ধান মেলেনি আমার স্বামীর।
সিআইডি গুলশান উত্তর ইউনিটের পুলিশ পরিদর্শক মো. আবদুল কাইয়ুম বলেন, জাতীয় পার্টি নেতা হেফজুর রহমান গুম হওয়া রহস্য এখনো উদঘাটন করা যায়নি। তবে গাড়ি উদ্ধার হওয়ায় এখন রহস্য উদঘাটন সহজ হবে। সম্পাদনা: এনামুল হক