২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরেই টাকা লাগবে ডিজিভিএম-এর বাজেট তৈরি করার উদ্যোগ নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ডিজিটাল ভোটিং মেশিন (ডিজিভিএম) চালু করার জন্য নির্বাচন কমিশন বেশ জোরেসোরেই কাজ করতে যাচ্ছে। আগামী দেড় বছরের মধ্যে কমিশন এই মেশিন তৈরির কাজ শেষ করতে চায়। ওই মেশিন তৈরি করে সরাসরি জাতীয় নির্বাচনে ব্যবহার না করে তারা স্থানীয় নির্বাচনে পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করবে। এই জন্য তারা আগামী অর্থ বছরেই অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে টাকা পেতে মে মাসের আগে বাজেট তৈরি করতে চায়। আগামী বাজেটে কমিশন যাতে ডিজিভিএম এর পুরো টাকাই পাওয়া যায় সেই চেষ্টা করবে।
নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের শেষ ভাগে কিংবা ২০১৯ সালের প্রথম সপ্তাহে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে হলে ২০১৮ সালের জুন মাসের মধ্যে পুরো টাকা পেতে হবে। আর মেশিন তৈরির কাজও জুলাই-সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ করতে হবে। কারণ ২০১৮ সালের অক্টোবরের পর জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে পারবে কমিশন। কারণ সংসদের মেয়াদপূর্তির ৯০ দিন আগে নির্বাচন করার সুযোগ আছে। সেই হিসাবে অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময় থেকেই ৯০ দিন গণনা শুরু হবে।
কমিশন সূত্র আরও জানায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সব মিলিয়ে ৩০০ আসনে ভোট গ্রহণের জন্য যত সংখ্যক ভোট কেন্দ্র থাকবে সেখানে যতগুলো বুথ থাকবে সব বুথের জন্যই এই মেশিন তৈরি করতে হবে। দেশেই এই মেশিন তৈরি করা হবে। তবে সময় স্বল্পতার কারণে দেশে মেশিন তৈরি না করে জার্মানী থেকে তৈরি করে আনারও পরামর্শ দিয়েছেন সরকারের কেউ কেউ। নির্বাচন কমিশন মনে করছে, এই মেশিন বাইরে তৈরি না করে দেশেই তৈরি করা যাবে। সেই জন্য কতগুলো ভোটিং মেশিন তৈরি করা হবে, এক একটির খরচ কত হবে। ডিজিভিএম এর জন্য কত টাকার প্রয়োজন হবে এর জন্য বাজেট তৈরি করতে হবে। কারিগরি কমিটি রিপোর্ট দিলে এবং মেশিনটি ভালভাবে চালানোর জন্য ও ভোটারদের ভোটের সুরক্ষার জন্য, জাল ভোট প্রতিহত করার ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য যেসব সংযোজন ও বিয়োজন প্রয়োজন তাও দ্রুত শেষ করতে হবে।
এই ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, কমিশন কারিগরি কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পর সেই রিপোর্ট বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিবে। তবে এক একটি মেশিনের জন্য কত খরচ পড়বে সেটাও ঠিক করতে হবে। একটি মেশিনের মূল্য কত পড়েছে এই ব্যাপারে জানতে চাইলে সাবেক নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক বলেন, আমরা ওই সময়ে মেশিন তৈরি করেছিলাম কিন্তু খরচটা তেমনভাবে নির্ধারণ করা হয়নি। খরচটা এই মেশিনটি যারা তৈরি করেছিল তারা সঠিক হিসাব দিতে পারবে। আর যখন তৈরি করা হয়েছিল তখন জিনিসপত্রের দাম কিছুটা কম ছিল। আগামীতে দাম কিছুটা বাড়বে সেই হিসাবে মেশিনের মূল্য নির্ধারণ করতে হবে। এছাড়াও যত সংখ্যক মেশিন তিনশ আসনের জন্য দরকার হবে ঠিক ততটাই তৈরি করতে হবে এমন নয়। কিছু বেশি মেশিন তৈরি করতে হবে। কারণ কোনো মেশিনে সমস্যা তৈরি হলে নির্বাচনের সময়ে সঙ্গে সঙ্গে মেশিন ঠিক করে আবার ভোটগ্রহণ করা সম্ভব হবে না। অন্তত একটি কেন্দ্রের জন্য একটি অতিরিক্ত মেশিন রাখার প্রয়োজন হবে। সেই সব দিকও বিবেচনায় রাখতে হবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা বলেন, নির্বাচনে ডিজিটাল ভোটিং মেশিন চালু করতে হলে সেই জন্য এখন থেকেই আমাদেরকে কাজ শুরু করতে হবে। আমরা দেখি কারিগরি কমিটি আমাদের কাছে কি রিপোর্ট দেয়। তাদের রিপোর্ট পাওয়ার পর যদি দেখা যায় এই মেশিন চালু করা সম্ভব ও কোনো সমস্যা হবে না। আবার সবার কাছেও গ্রহণযোগ্য হবে। এনিয়ে কোনো বিতর্ক হবে না। তাহলে আমরা আগামী নির্বাচনে ডিজিটাল ভোটিং মেশিনের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করতে পারি। এর আগের কাজগুলো কত দ্রুত করা যাবে সেটাও দেখতে হবে। কারণ ২০১৯ সালের জানুয়ারি খুব বেশি সময় নয়। দুই বছরেরও কম সময়। সম্পাদনা: এনামুল হক