মাদক পাচার, চাঁদাবাজি ও অনৈতিক কর্মকা-ে পুলিশের চিহ্নিত সদস্যরা
আজাদ হোসেন সুমন: বেপরোয়া হয়ে উঠেছে পুলিশ বাহিনীর চিহ্নিত সদস্যরা। গত এক সপ্তায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্নস্থানে মাদক পাচার, চাঁদাবাজি অনৈতিক কর্মকা-ে জড়িত থাকার অভিযোগে কমপক্ষে ১০ পুলিশ সদস্যকে বিভিন্ন দ-ে দ-িত করা হয়েছে।
জানাগেছে, গত সোমবার আসামির কাছ থেকে টাকা নেয়ার অভিযোগে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) উপ-পরিদর্শক (এসআই) ওবায়দুর রহমানকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ২৬ জানুয়ারি এটিএন নিউজের সাংবাদিক এহসান বিন দিদার ও চিত্র সাংবাদিক আব্দুল আলিমকে মারধর করায় শাহবাগ থানার এএসআই এরশাদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে শিল্প কারখানায় চাঁদা দাবির ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশের দুই এসআইকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। সোমবার সকালে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ লাইনে তাদের প্রত্যাহার করে। দুই এসআইকে প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলার সহকারী পুলিশ সুপার (খ অঞ্চল) সাজিদুর রহমান। তিনি জানান, এসআই আমিনুল ও আব্দুল লতিফের বিরুদ্ধে চাঁদার অভিযোগে তাদের প্রত্যাহার করা হয়।
গত বছর ভাসানটেক থানার ওসি তদন্ত আবুল বাশার আসাদুজ্জামানকে ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে ডিএমপি সদর দফতরে সংযুক্ত করা হয়েছে। দাবিকৃত ঘুষ না দেওয়ায় ঐ ব্যবসায়ীকে মিথ্যা মামলায় জড়ানোর অভিযোগের প্রমাণ পায় পুলিশ সদর দফতর। এছাড়া আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ ঐ বছর এক ডেভেলপারের কাছ থেকে টাকা নিয়ে জমির মালিকের আত্মীয়কে থানায় এনে তিনি নির্যাতন করেছেন। পরে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের নজরে আসে।
এছাড়া চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার দেবকরা মারগুবা ড.শহীদুল্লাহ মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র সাগর ইসলামকে পরীক্ষা কেন্দ্রের সামনে থেকে তুলে নেয়ার ঘটনায় কামাল উদ্দিন নামে পুলিশের এক এসআইকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে নেয়া হয়েছে। পরে সাগরকে ছেড়ে দিয়ে পরীক্ষার অনুমতি দেওয়া হয়। গত ১১ ফেব্রুয়ারি যশোরের নড়াগাতি থানার বাঐসোনা থেকে ৩৪০ পিস ইয়াবাসহ সোহেল রানা (৩২) নামে এক পুলিশ কনস্টেবলকে আটক করেছে পুলিশ। সোহেল রানা ঢাকায় রিজার্ভ পুলিশ (আরআরএফ) হিসেবে কর্মরত এবং বাঐসোনা গ্রামের আইয়ুব আলীর ছেলে। পুলিশ কনস্টেবল সোহেল রানা তার ভগ্নিপতি বাবু ও স্থানীয় এক ইউপি সদস্যের সহযোগিতায় দীর্ঘদিন ধরে নড়াগাতি এলাকায় মাদকের ব্যবসা করে আসছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, পুলিশ বাহিনী যখন এগিয়ে যাচ্ছে-যখন তারা জঙ্গি দমন, মাদক নিয়ন্ত্রণ তথা দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যারপর নাই চেষ্টা করছে। এ অবস্থায় পুলিশের কতিপয় চিহ্নিত সদস্য অনৈতিক কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়ায় পুলিশ সদর দফতর বিষয়টি নিয়ে বিব্রত। এ ব্যাপারে ডিআইজি (মিডিয়া এন্ড প্লানিং) শহীদুর রহমান বলেন, পুলিশ বাহিনী এখন তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি বাহিনী। জঙ্গি দমন ও মাদক নির্মূলে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সাফল্যের কথা বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হয়েছে। দেশে মানুষের মনেও আস্থার জায়গা করে নিয়েছে পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রসার ঘটছে।
বিদেশিরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করছে। আমাদের এ অর্জন কতিপয় সদস্যের জন্য ম্লান হতে দিতে পারিনা। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আইজিপি মহোদয়ের বক্তব্য স্পষ্ট। আর সেটা হচ্ছে ব্যক্তির দায় বাহিনী নিবে না। পুলিশ বাহিনীর কোনো সদস্য দায়িত্বে অবহেলা বা অনৈতিক কর্মকা-ে জড়িত অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হয়। বর্তমান পুলিশের শীর্ষ পর্যায়ের নীতি হচ্ছে ভাল কাজের পুরস্কার আর মন্দ কাজের তিরস্কার। ফলে পুলিশ বাহিনী এখন তুলনামূলকভাবে অনেক গতিশীল। অনেক শ্রম, সাধনা, ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত ভাবমূর্তি কোনো ব্যক্তি বিশেষের জন্য ম্লান হতে দেওয়া হবে না। সম্পাদনা: এনামুল হক