নাগরিক অধিকারসহ তিন বিষয়ে নিশ্চয়তা পেলে ফিরতে চায় রোহিঙ্গারা
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: মিয়ানমারে নির্যাতিত মুসলমানদের মধ্যে যারা পালিয়ে এসেছেন এবং বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন তারা দেশে ফিরতে চায়। এই জন্য তারা তিনটি বিষয়ে নিশ্চয়তা চাইছে মিয়ানমারের সরকারের কাছে। সেই নিশ্চয়তা পেলে তারা ফিরবে। আর না পেলে তারা এখানেই থাকতে চায়। যেসব বিষয়ে তারা নিশ্চয়তা চায় এর মধ্যে রয়েছেÑ ক্ষতিপূরণ প্রদান, নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া ও নিরাপদ পরিবেশ।
মিয়ানমার থেকে আসা নির্যাতিত নাগরিকদের দেশে ফেরার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার কাজ করছে। সেই সঙ্গে কুটনীতিকরা এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সাহায্য সংস্থা কাজ করছে। ইতোমধ্যে কুটনীতিকরা ও সাহায্য সংস্থার উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা টেকনাফ সফর করেছেন। সেখানে তাদেরকে দেখেছেন। তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। আর কথা বলে তারা এটাও জানার চেষ্টা করেছেন এই দেশে আসার পর কেমন আছেন? তাদের জীবন কাটছে কেমন। নির্যাতনের কাহিনীও শুনেছেন। রোহিঙ্গাদের মানবিক বিষয়গুলো তারা বিবেচনা করছে।
বার্নিকাট যখন ওই এলাকা সফর করেন সেখানে মিয়ানমার থেকে বাড়ি, ঘর, সম্পত্তি হারিয়েছেন এমন ব্যক্তিরা আশ্রয় নিয়েছে। কেউ কেউ ধর্ষণের ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এরপর তারা পালিয়ে আসে। এর মধ্যে জামবনিয়া, বুড়া সিকদারপাড়া, ওয়াবেগ এলাকার বেগম বাহার, ছেহেরা বিবি, মোস্তফা বেগম, রশিদা বেগম, জামালিদার তাদের কষ্টের কথা ও নির্যাতনের কথা তাকে জানান। এছাড়াও বেশ কয়েকজন পুরুষের কাছ থেকে মিয়ানমারে অমানবিক এবং লোমহর্ষক নির্যাতনের কথা শোনেন।
সূত্র জানায়, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পাশে রয়েছে। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র অত্যন্ত আন্তরিক। রাষ্ট্রদূতের কাছে অনিবন্ধিত রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে চলমান মানবতাবিরোধী কর্মকা-ের প্রতিবাদ জানান। সেইসঙ্গে ওই দেশের সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানান।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, এখন যেসব রোহিঙ্গারা এখানে এসে আশ্রয় নিয়েছে তাদের মানবিক বিষয়গুলো দেখা হচ্ছে। সব ধরনের সাহায্য সহায়তাও দেওয়া হচ্ছে। যারা এসে গেছে এর বাইরে নতুন করে কাউকে এখানে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। আর যারা নির্যাতিত হয়ে এসেছে তাদেরকে ফেরত দেওয়ার ব্যাপারেও পরিকল্পনা রয়েছে। এই জন্য মিয়ানমানের সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আলোচনা বিভিন্ন পর্যায়ে শুরু হয়েছে। আমাদের সিদ্ধান্ত নতুন করে এখন কোনো রোহিঙ্গাকে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না বিজিবি।
এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর জন্য বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলে জানিয়েছে সেই দেশের রাষ্ট্রদূত। সম্প্রতি মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া ব্লুম বার্নিকাট টেকনাফ সফর করেছেন। সেখানে তিনি রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি কক্সবাজারের টেকনাফে অনিবন্ধিত লেদা রোহিঙ্গা বস্তি ও নয়াপাড়া নিবন্ধিত শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পাশে রয়েছে। মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের সমস্যা সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র অত্যন্ত আন্তরিক।
তিনি রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প পরিদর্শনকালে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার অফিসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। তাদের কাছ থেকে পুরো পরিস্থিতি জানেন। পরে তিনি রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি ঘুরে দেখেন এবং তাদের সঙ্গে কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আমাদের কাজ আমরা করে যাচিছ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদরেকে কতদিনের মধ্যে ও কিভাবে এবং কোন প্রক্রিয়াতে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো যায় সেই ব্যাপারে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাবে। আলোচনা করে সব ঠিক হলে এই ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিজিবিও এই ব্যাপারে কাজ করছে। সম্পাদনা: এনামুল হক