কানাডার ফেডারেল কোর্ট, সন্দেহ প্রকাশ করেছে বিএনপি বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে অভিহিত করেছে
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: কানাডার ফেডারেল কোর্ট এক আদেশে বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে অভিহিত করেছে। বিএনপির সদস্য পরিচয়ে জুয়েল নামে এক বাংলাদেশি নাগরিকের রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন নাকচ করে আদালত এ মন্তব্য করেন। জুয়েলের বিরুদ্ধে দায়ের করা জুডিশিয়াল রিভিউর আবেদন নিষ্পত্তি করতে গিয়ে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তার সিদ্ধান্ত বহাল রেখে কানাডার ফেডারেল কোর্ট বিচারক বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন করে মন্তব্য করে। কানাডা সরকার বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেনি বলে আবেদনকারীর বক্তব্যের সাথে একমত পোষণ করেও আদালত বলেন, তালিকাভুক্তির বিষয়টি সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। এটি কানাডার গভর্নর কাউন্সিল ঠিক করে। তার সাথে রাজনৈতিক ইস্যু জড়িত থাকে। আমি এই যুক্তি গ্রহণ করছি না। কানাডা তালিকাভুক্ত করেনি বলেই ইমিগ্রেশন অফিসার বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করে ইমিগ্রেশন অফিসার সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না- এমন কোনো যুক্তিও এই মামলায় আসেনি।
ফেডারেল কোর্টের বিচারক হেনরি এস ব্রাউন গত ২৫ জানুয়ারি এই রায় দেন। জুডিশিয়াল রিভিউ আবেদন নিষ্পত্তি করতে গিয়ে তিনি বাংলাদেশের রাজনীতি, বিএনপির পরিচালিত লাগাতার হরতাল এবং হরতালকে কেন্দ্র করে পরিচালিত সন্ত্রাসী তৎপরতা সম্পর্কে নিজের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন। সম্প্রতি এই রায়ের লিখিত কপি প্রকাশ পেয়েছে। কানাডা থেকে নতুনদেশ ডটকম এই বিষয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। সেখানে তারা এটাও বলেছে, কানাডার ফেডারেল কোর্টের আদেশের কপিও তারা সংগ্রহ করেছে।
এদিকে কানাডার আদালতের ওই রায়ের পর বিএনপি এখনও পর্যন্ত এর সত্যতার নিশ্চিত হতে পারেনি। বিএনপির একাধিক নেতা বলেছেন, এটা সত্যি কিনা আমাদের জানা নেই। তবে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান এই বিষয়ে খোঁজ নিতে বলেছেন। তারা ওই আদালতের রায়ের কপি সংগ্রহ করে তা পর্যালোচনা করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিবেন। তবে আপাতত বিএনপির তরফ থেকে দলটি যে কোনো সন্ত্রাসী সংগঠন নয় ও রাজনৈতিক দল। রায়ের কপি পাওয়ার পর প্রয়োজন হলে বাংলাদেশে একাধিকবার ক্ষমতাসীন একটি রাজনৈতিক দলকে সন্ত্রাসী দল হিসেবে অভিহিত করতে পারেন না এ ব্যাপারে কানাডার আদালতে ও ওই বিচারকের কাছে এবং ওই দেশের সরকারকে চিঠি দিবে।
বাংলাদেশের সরকারের তরফ থেকে ও সরকারের মন্ত্রিপরিষদের তরফ থেকে বার বারই বলা হয়েছে বিএনপি সন্ত্রাসী কর্মকা- করেছে। মানুষ হত্যা করেছে। জানমালের ক্ষতি করেছে। দেশের অর্থনীতিতেও বিরূপ প্রভাব পড়েছে। আর এই কারণে রাষ্ট্রপক্ষ বাদী হয়ে বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতাদেরকে এবং দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। দলের প্রধানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকা-, জ্বালাও-পোড়াও, নাশকতা, সহিংসতা ও মানুষ হত্যার অভিযোগ এনে একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলাসহ মোট ২৯টি মামলা হয়েছে। ওই সব মামলার তদন্ত চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বার বার বিএনপির বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকা-সহ বিভিন্ন নাশকতার ঘটনার অভিযোগ এনেছে।
বিএনপির সূত্র জানায়, যে আদালত ওই রায় দিয়েছে সেই আদালতে চিঠি দিবে। কারণ যার আবেদনের প্রেক্ষিতে ও যার ইমিগ্রেশনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে গিয়ে আদালত এই বিশেষণে বিএনপিকে অভিহিত করেছে তার ব্যাপারেও তথ্য দিবে। জুয়েল হোসেন কানাডাতে ইমিগ্র্যান্ট হওয়ার জন্য আবেদন করে। কিন্তু তার ইমিগ্রেশন হয়নি। বিষয়টি আদালতে নিষ্পত্তির জন্য অপেক্ষায় ছিল।
সূত্র জানায়, এই অবস্থায় বিএনপি কিছুটা বিপাকে পড়েছে। এখন সরকার এ রায়ের সূত্র ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিএনপির বিরুদ্ধে প্রচার-প্রচারণাও চালাবে। এতে করে দেশের জনগণ ও আন্তর্জাতিক মহলেও বিএনপির বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানো হতে পারে। বিএনপি সেটা হতে দিবে না।
সূত্র জানায়, কানাডার আদালতে বিষয়টি আইনি দিক বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নিবেন। এর বাইরে কানাডার সরকারকেও তারা চিঠি দিতে পারে। ঢাকায় কানাডিয়ান হাইকমিশনেও বিষয়টি অবহিত করবেন। কারণ বিএনপিকে ওই দেশের আদালত সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে অভিহিত করার পেছনে আদালতের কাছে ভুল তথ্য রয়েছে বলে তারা ধারণা করছেন। সেই ধারণা বদলানোর জন্য ওই বিচারকের বরাবরেও চিঠি দিতে চাইছেন। ওই চিঠির সঙ্গে সিডিও দিতে পারে। এর আগে কূটনীতিকদের কাছে যেসব নথি ও সিডি দেওয়া হয়েছিল সেই কপি দেওয়া হতে পারে।
কানাডার ফেডারেল আদালতে এটাও অবহিত করা হবে যে ব্যক্তির আবদনের প্রেক্ষিতে এই ধরনের রায় এসেছে তিনি যে বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী বলে দাবি করলেও তিনি যে দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন সেটাও জানানো হবে।
কানাডার আদালতের রায়ের বিষয়ে নতুন দেশ ডট কম তাদের সংবাদে প্রকাশ করেছে, মোহাম্মদ জুয়েল হোসেন গাজী নামে ঢাকার মীরপুরের স্বেচ্ছাসেবক দলের একজন কর্মীর রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন নাকচ হওয়ার পরি তিনি ফেডারেল কোর্টে এই জুডিশিয়াল রিভিউর আবেদন করেন।
জুডিশিয়াল রিভিউর নিষ্পত্তি করতে গিয়ে বিচারক হেনরি এস ব্রাউন বলেন, ‘বিএনপি সন্ত্রাসী কাজে লিপ্ত ছিল, আছে বা ভবিষ্যতে লিপ্ত হবে’- ইমিগ্রেশন অফিসারের এই ভাবনা যৌক্তিক কী না তা পর্যালোচনা করতে এই জুডিশিয়াল রিভিউর আবেদন করা হয়েছে। ‘বিএনপি সন্ত্রাসী কার্যলিপ্ত ছিল, আছে বা লিপ্ত হবে’ তা বিশ্বাস করার যৌক্তিক কারণ আছে- এই মর্মে ইমিগ্রেশন অফিসার যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন তা যৌক্তিক বলে আমি মনে করি। কানাডার আইনে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের যে সংজ্ঞা দেওয়া আছে তার আলোকে যথেষ্ট তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতেই তিনি এই উপসংহারে পৌঁছেছেন।
‘বাংলাদেশের সব সন্ত্রাসীই বড় দুটি দলের সাথে সম্পৃক্ত, তারা হয় আওয়ামী লীগ না হয় বিএনপি’- আবেদনকারীর এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে আদালত বলেন, বিএনপি সন্ত্রাসী সংগঠন কী না এই প্রশ্নে অফিসার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী সংগঠন কী না- সেই প্রশ্ন বিবেচনার জন্য আদালতের সামনে নেই। সম্পাদনা: এনামুল হক