জাকাত দিবেন কেন?
তাশফিক মুহাম্মদ
ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ জাকাত। জাকাত সুদবিহীন দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ বিনির্মাণের বাহন এবং নিজের অর্জিত সম্পদ পবিত্র করার মাধ্যম। পবিত্র কুরআনে নামাজের পরই সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে জাকাতকে। মোট ৩২ বার জাকাত শব্দ উল্লেখ রয়েছে কুরআনে। মহান আল্লাহ জাকাতকে ‘বঞ্চিত ও মুখাপেক্ষীর অধিকার’ হিসেবেও উল্লেখ করেছেন। প্রিয়নবী সা. বলেছেন, জাকাত হচ্ছে ধনীদের কাছ থেকে সম্পদ গ্রহণ করে দরিদ্রদের মধ্যে বণ্টন করা।
জাকাত বিষয়ে মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা সোনা-রূপা সঞ্চয় করে এবং তা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে না তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।’ [তওবা : আয়াত- ৩৪-৩৫]। এ আয়াত নাজিলের পর প্রিয়নবী সা. বলেন, ‘ধ্বংস হোক স্বর্ণ, ধ্বংস হোক রৌপ্য।’ তিরমিজি শরিফে এসেছে, প্রিয়নবী সা বলেছেন, ‘হে নারী সমাজ। তোমরা তোমাদের অলংকারের জাকাত দাও। কেননা, আমি তোমাদের অধিকাংশকে জাহান্নামি দেখেছি।’
আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, একদা রাসুল সা. আমার হাতে রূপার কারুকাজ করা একটি কম্বল দেখে জিজ্ঞেস করলেন, এর কি জাকাত দেয়া হয়েছে? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, এটাই তোমার জাহান্নামে যাবার জন্য যথেষ্ট।’ [মুস্তাদরাক]
হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করিম সা. বলেন, ‘যাকে আল্লাহ ধন-সম্পদ দান করেছেন, কিন্তু সে এর জাকাত আদায় করেনি, কিয়ামতের দিন তার সম্পদকে (বিষের তীব্রতার কারণে) টেকো মাথা বিশিষ্ট বিষধর সাপের আকৃতি দান করে তার গলায় ঝুলিয়ে দেয়া হবে। সাপটি তার মুখের দু’পাশ কামড়ে ধরে বলবে, আমি তোমার সম্পদ, আমি তোমার জমাকৃত মাল। তারপর রাসুলুল্লাহ সা. তিলাওয়াত করেন, ‘আল্লাহ যাদেরকে সম্পদশালী করেছেন অথচ তারা সে সম্পদ নিয়ে কার্পণ্য করেছে, তাদের ধারণা করা উচিত নয় যে, সেই সম্পদ তাদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে, বরং তা তাদের জন্য কিয়ামত দিবসে, অচিরেই অকল্যাণকর হবে যা কার্পণ্য করছে তা দিয়ে তাদের গলদেশ শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হবে। [বুখারি : হাদিস নং-১৩২১]। অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘যে সম্পদের জাকাত দেয়া হয়নি তাকে বিষধর সাপে রূপান্তর করে ওই সম্পদের মালিকের গলায় জড়িয়ে দেয়া হবে এবং সাপটি তাকে ছোবল দিতে দিতে বলবে, আমি তোমার প্রিয় সম্পদ, গুপ্তধন।’ [বুখারি]
জাকাত দিলে সম্পদ বৃদ্ধি ও পবিত্র হয়। তাছাড়া মানবিক বিবেচনায়ও জাকাত দেয়া উচিত। আপনি হয়তো অনেক টাকার মালিক, দামি গাড়িতে চড়েন, সুন্দর বাড়িতে থাকেন, খবার খান সব সুস্বাদু। কিন্তু আপনার-ই পাশের বাড়ির লোকটি অর্থের অভাবে দু’বেলা খেতে পারে না, রাতে ঘুমোতে পারে দু’চালা একটি ঘরের অভাবে। ফুটপাত তাদের ঘর, ডাস্টবিন তাদের ডাইনিং টেবিল! এসব চিত্র নিত্যদিনের। এদের জন্য সমাজের বিত্তবানরা কী করে থাকেন? অনেকে সহযোগিতার ইচ্ছা করলেও নানা কারণে হয়ে ওঠে না। অথচ অর্জিত সম্পদের চল্লিশ ভাগের এক ভাগ নিয়মিত জাকাত দিলে সহজেই এ চিত্র দূর হয়ে যাবে! পাশের বাড়ির গরীব লোকটিকে হয়তো আর না খেয়ে থাকতে হবে না। দ্বারে দ্বারে হাত পাততে হবে না। পড়ে থাকতে হবে না রাস্তার মোড়ে কিংবা ফুটপাতে। আর সমাজের চিত্র এমনই হওয়া উচিত। কারণ আমরা সবাই মানুষ। মানুষ মানুষের পাশে থাকবেÑ এটাই মানবতার মহান শিক্ষা।