অযতœ-অবহেলায় পড়ে আছে বিশ্বকবির শিলাইদহের কাচারি বাড়ি
আব্দুম মুনিব, কুষ্টিয়া : কুষ্টিয়ার শিলাইদহে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত কাচারি বাড়িটি অযতœ আর অবহেলায় হারিয়ে যেতে বসেছে। ধ্বংসের মুখে রয়েছে কাচারি বাড়ির অদূরে অবস্থিত কবিগুরুর দাতব্য চিকিৎসালয়টিও। ১৮৯১ সাল থেকে ১৯০১ সাল পর্যন্ত শিলাইদহের কাচারি বাড়িতে জমিদারি দায়িত্ব পালন করেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সময়ের প্রবাহে সেই জমিদারি এখন আর নেই, নেই খাজনা দেয়ার লোকও। তবে এই শিলাইদহেই যখন সমাদৃত হচ্ছে রবি ঠাকুরের তৎকালীন আবাসস্থল কুঠিবাড়ি, তখন অনাদরে অবহেলায় পড়ে থাকছে কবিগুরুর স্মৃতিবিজড়িত কাচারি বাড়ি। আর কাচারি বাড়ি থেকে মাত্র আধা কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কবিগুরুর দাতব্য চিকিৎসালয়টিও রয়েছে অবহেলায়। খসে পড়েছে ইট, পলেস্তারা। চুরি হয়ে গেছে দরজা-জানালাওসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র। পরিত্যক্ত ও জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে আছে আচার্য কবির এই স্মৃতিচিহ্নসমূহ। কুষ্টিয়ার শিলাইদহে এসে যে কাচারী বাড়িতে বসে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জমিদারীর খাজনা আদায় করতেন ইতিহাস ঐতিহ্যের প্রতিক সেই বাড়িতে এখন ঘুটে (গোবর) শুকানো হচ্ছে। অযতœ-অবহেলায় ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে কবির স্মৃতি বিজড়িত কালের সাক্ষী কাচারি বাড়ি। রবীন্দ্র স্মৃতি বিজড়িত শিলাইদহ কুঠিবাড়ির পরিচিতি সারা দেশ, এমনকি বিশ^ব্যাপী। সরকারের প্রতœত্বত্ত্ব বিভাগ কুঠিবাড়িকে বেশ যতেœই আগলে রেখেছে। তবে কুঠিবাড়ির খুব কাছেই বিশ্বকবির স্মৃতিধন্য আরেক স্থাপনা কাচারী বাড়ি, যার খোঁজ রাখেনা কেউ। কাচারী বাড়িটি অনেকটা লোক চুর অন্তরালেই রয়েছে গেছে। অযতœ-অবহেলায় দিন দিন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এই বাড়িটি। অথচ এই বাড়িটিকে সংরক্ষণ ও সংস্কার করলে পর্যটনের এক দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠতে পারে। স্থানীয় রবীন্দ্র গবেষক কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক ড. সরওয়ার মুর্শেদ জানান, ১৮৯১ সাল থেকে প্রায় ৩০ বছর এই বাড়িতে বসে রবীন্দ্রনাথ জমিদারির খাজনা আদায় করেছেন। তিনি জানান, পূর্ববঙ্গে (বর্তমান বাংলাদেশ) মূলত শিলাইদহই ছিল রবীন্দ্রনাথের কেন্দ্রবিন্দু। কবি এখান থেকেই শাহাজাদপুর, পতিসর যাতায়াত করতেন। তাই সব কিছুর বিচারে রবীন্দ্রনাথের শিলাইদহের কাচারী বাড়ি বাঙ্গালীর জন্য এক অনন্য সম্পদ। জানা গেছে, কিছুদিন আগেও এখানে স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কাজ চলতো। তবে ইউনিয়ন পরিষদ ভবন নির্মাণের ফলে ইউনিয়ন ভূমি অফিস এখন সেখানে বসানো হয়েছে। এ কারণে কাচারী বাড়িটি এখন পরিত্যক্ত। অপূর্ব কারুকাজ সমৃদ্ধ দোতলা কাচারী বাড়িটি আগাছা আর বন্য লতা ছেয়ে গেছে। পাইক পেয়াদা আর বরকনদাজদের হাঁক ডাকে একদিন মুখরিত থাকতো যে বাড়ি আজ সেখানে সুনসান নিরবতা। স্থানীয় ঘুটে ব্যবসায়ীরা এই বাড়ির দেওয়াল ও দোতলার মেঝেকে ঘুটে শুকানোর (কাঁচা গোবর) আদর্শ স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছে। কাঁচারী বাড়ির ৫ একর জমির বেশ কিছুটা ইতোমধ্যে দখল করে নিয়েছে প্রভাবশালীরা।
স্থানীয়রা বলেন, রবীন্দ্রাথের জন্মতিথিতে প্রতি বছর শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে উৎসবরে আয়োজন করা হয়। দেশের নানা প্রান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ এই উৎসবে যোগ দেয়। এখানে এসে কবির স্মৃতি চিহ্ন ছুঁয়ে দেখেন রবীন্দ্র প্রেমীরা। এছাড়া সারা বছর কুঠিবাড়িতে বেড়াতে আসেন হাজার হাজার মানুষ। এতে সরকারের বিপুল পরিমান রাজস্বও আদায় হয়। কবির কাচারী বাড়িটি সংরক্ষণ ও সংস্কার করলে এটিও দর্শনীয় স্পটে পরিনত হবে, বাড়বে সরকারের রাজস্ব। এদিকে মুঠোফোনে শিলাইদাহ কুঠিবাড়ির কাস্টোডিয়ান মোখলেসুর রহমান জানালেন, কাচারি বাড়ি ও দাতব্য চিকিৎসালয়ের বর্তমান পরিস্থিতি জানিয়ে তা সংস্কারের জন্য একটি প্রতিবেদন প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। সম্পাদনা : মুরাদ হাসান