নড়াইলে বিজয় সরকারের জন্মজয়ন্তীতে দুইদিনের কর্মসূচি
ইমরান হোসেন, নড়াইল : পোষা পাখি উড়ে যাবে সজনী/ একদিন ভাবি নাই মনে…। এই পৃথিবী যেমন আছে/ তেমনি ঠিক রবে/ সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে/ একদিন চলে যেতে হবে…। তুমি জানো নারে প্রিয়/ তুমি মোর জীবনের সাধনা’…এ ধরনের অসংখ্য জনপ্রিয় গানের রচয়িতা ও সুরকার, একুশে পদকপ্রাপ্ত উপমহাদেশের প্রখ্যাত লোককবি কবিয়াল বিজয় সরকারের ১১৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দু’দিনব্যাপী জন্মজয়ন্তী উৎসব আজ শুক্রবার ডুমদী গ্রামে শুরু হবে।
জন্মজয়ন্তী উদযাপন পর্ষদ সূত্রে জানা যায়, দিনটি পালন উপলক্ষে কবির জন্মভিটা সদর উপজেলার ডুমদীতে অনুষ্ঠিত হবে দু’দিনব্যাপী লোকউৎসব ও বিজয় ভক্তদের মিলন মেলা। বিজয় সংসদের আয়োজনে দু’দিন ব্যাপী এ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।উৎসব সফল করতে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।অনুষ্ঠানে ভারতসহ দেশ-বিদেশের বরেণ্য কবি,সাহিত্যিক,গবেষক ও লোকজ সংষ্কৃতির পুরোধাগন অংশগ্রহণ করবেন। বিজয় সংসদের নির্বাহী কমিটির সদস্য সুলতান মাহমুদ জানান, দু’দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালায় রয়েছে- লোক কবি বিজয় সরকারের জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা সভা, বিজয় গীতি পরিবেশন, জারিগান ও কবিগানের আসর।
আজ শক্রবার বিকাল ৩টায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শেখ হাফিজুর রহমান।অন্যান্যের মধ্যে পুলিশ সুপার সরদার রকিবুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজামউদ্দিন খান নিলু,সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা শরীফ হুমায়ুন কবীর, সমাজসেবক ও শিক্ষানুরাগী প্রকৌশলী শৈলেন্দ্রনাথ সাহা, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের ডেপুটি কমান্ডার অ্যাডডভোকেট এসএ মতিন উপস্থিত থাকবেন। আগামীকাল শনিবারের (২৫ ফেব্রুয়ারি) আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন নড়াইল-১ আসনের সংসদ সদস্য কবিরুল হক মুক্তি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস,নড়াইল জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট সোহরাব হোসেন বিশ্বাস,লোহাগড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সৈয়দ ফয়জুল আমীর লিটু ও কালিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খান শামীমুর রহমান। প্রসঙ্গত, অসাম্প্রদায়িক চেতনার সুরস্রষ্টা, গীতিকার ও গায়ক, চারণকবি বিজয় সরকার ১৯০৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি নড়াইল সদর উপজেলার বাঁশগ্রাম ইউনিয়নের ডুমদি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।ত ার বাবার নাম নবকৃষ্ণ অধিকারী এবং মার নাম হিমালয়া দেবী। তার শৈশবকাল এবং জীবনের বেশির ভাগ সময় কেটেছে প্রিয় জন্মভূমি ডুমদিসহ নড়াইলের বিভিন্ন এলাকায়।ছেলেবেলা থেকেই তিনি (বিজয় সরকার) কবিতা, গান রচনা ও সূরের মধ্যে ডুবে থাকতেন। তিনি একাধারে গানের রচয়িতা ও সুরকার ছিলেন।তিনি প্রায় এক হাজার ৮০০ গান রচনা করেছেন। তিনি অনেক ইসলামী গান ও কবিতা রচনা করেন। কবিগানের আসরেও মাতিয়ে তুলতেন দর্শকশ্রোতাদের । কোন কোন মঞ্চে তৎক্ষণাৎ নিজের রচিত আধ্যাতিœক গান পরিবেশন করে তিনি উপস্থিত শ্রোতাদের মুগ্ধ করতেন। তার প্রকৃত নাম বিজয় অধিকারী হলেও সুর, সঙ্গীত ও অসাধারণ গায়কী ঢঙের জন্য তিনি চারণকবি ও ‘সরকার’ উপাধি লাভ করেন। ১৯৮৫ সালের ৪ডিসেম্বর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কেউটিয়ার তার মৃত্যুর হয়। সেখানেই তাকে সমাহিত করা হয়।শিল্পকলায় অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০১৩ সালে একুশে পদকে (মরণোত্তর) ভূষিত হন উপমহাদেশের প্রখ্যাত এই চারণ কবি। সম্পাদনা: মুরাদ হাসান