এম রায়হান চৌধুরী চকরিয়া(কক্সবাজার) :কক্সবাজারের চকরিয়ায় ফের তামাকের আগ্রাসন শুর হয়েছে। চলতি মৌসুম থেকে তামাক আবাদে নিরৎসাহিত করতে মাঠপর্যায়ের চাষিদের নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা র্যালি ও মানববন্ধসহ সচেতনতামূলক নানা কার্যক্রম পরিচালনা করলেও তা কোন কাজে আসেনি। প্রতিবছরের মতো এবারও রেকর্ড পরিমাণ জমিতে তামাক উৎপাদনে জোরেসোরে মাঠে নেমেছে চাষিরা।
ব্যক্তি মালিকানাধীন কৃষি জমির পাশাপাশি তামাক আবাদের ভয়াবহ আগ্রাসন শুর হয়েছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও মাতামুহুরী নদীর দুই তীরের খাস জমিতে। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সংরক্ষিত বনের ভেতর ও নদীর তীরে তামাক চাষে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। এমনকি সরকারী খাস জমিতে তামাক চাষ বন্ধে প্রশাসনেরও কোন পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছেনা। এতে অনেকটাই নির্বিঘেœ চাষাবাদ চলছে পরিবেশের বারোটা বাজিয়ে। সরকারী নির্দেশ উপেক্ষা করে চকরিয়া উপজেলার বমুবিলছড়ি ইউনিয়নের বমু বনবিট ও সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নের মানিকপুর বনবিটের সংরক্ষিত বনাঞ্চলে এবং উপজেলার মাতামুহুরী নদী তীরের বমু বিলছড়ি, সুরাজপুর-মানিকপুর, কাকারা, কৈয়ারবিল, বরইতলী ও চিরিঙ্গা ইউনিয়নের অন্তত এক হাজার একর খাস জমিতে তামাকের আবাদ শুর হয়ে গেছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ এলাকায় ইতিমধ্যে রোপন করা তামাকের চারা বড় হতে শুর করেছে। মাস দু’য়েকের মধ্যে শুর হবে তামাক শোধনের কাজ। এজন্য বনাঞ্চলের আশপাশে ও লোকালয়ে কয়েক হাজার তামাক চুল্রি নির্মাণকাজও চলছে। অসংখ্য তামাক কোম্পানি চাষিদের প্রলোভনে ফেলে পরিবেশ বিধ্বংসী তামাক চাষে মাঠে নামিয়েছে।
বিভিন্ন সূত্র জানায়, কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের আওতাধীন বমু বনবিটের প্রায় ২ হাজার ২শ একর বনভূমি যথাযথ রক্ষণাবেক্ষনের জন্য ২০০৫ সালে লামা বনবিভাগের কাছে হস্তান্তর করে। বর্তমানে এ বনবিটটি লামা সদর রেঞ্জের নিয়ন্ত্রণাধীন। এছাড়া বেশ কয়েক বছর ধরে তামাক চাষের পর তা শোধনের জন্য নির্বিচারে বনজ সম্পদ উজাড়ের কারণে এই বনবিটে এখন আর অবশিষ্ট কিছুই নেই বললেই চলে। তামাকের বিরদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা উন্নয়ন বিকল্পের নীতি নির্ধারণী গবেষণার (উবিনীগ) কক্সবাজারের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী রফিকুল হক টিটো জানান, চকরিয়া উপজেলার অন্তত ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে কম করে হলেও ১০ হাজার একর জমিতে তামাকের আগ্রাসন চলছে। তন্মধ্যে সংরক্ষিত বনের কিছু অংশ এবং মাতামুহুরী নদীর দুই তীরের খাস জমি মিলিয়ে আরো অন্তত এক হাজার একর জমিতে তামাকের আবাদ শুর হলেও প্রশাসনের কোন নজরদারী নেই। রফিকুল হক টিটো বলেন, ‘মূলত তামাক কোম্পানীগুলোর মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা প্রান্তিক কৃষকদের প্রলোভনে ফেলে তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ করে আসছে। এমনকি বিনাসুদে ঋণ দেওয়া ছাড়াও তামাক ক্রয়ের সময় ভাল দাম দেওয়ার কথা বলায় প্রতিবছর খাস জমিতেও তামাকের আবাদ বাড়ছে। মাঠপর্যায়ের চাষিদের সাথে কথা বলে এই চিত্র পেয়েছি আমরা। সম্পাদনা : মুরাদ হাসান