ড. ইউনূস কেন, পদ্মা সেতু ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত সবার বিরুদ্ধেই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত
আমাদের অর্থনীতিকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড.এম শাহ্ নওয়াজ আলি
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আশিক রহমান
দুর্নীতির অভিযোগ তুলে পদ্মা সেতু থেকে অর্থায়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছিল বিশ্বব্যাংক। এতে বাংলাদেশ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সারাবিশ্বে নেতিবাচক প্রচারণার ফলে ইমেজ সংকট সৃষ্টি হয়। ড. ইউনূসই কেন, পদ্মা সেতু ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যারই সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া যাবে তার বিরুদ্ধেই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিতÑ দৈনিক আমাদের অর্থনীতিকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড.এম শাহ্ নওয়াজ আলি।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতু দুর্নীতির অভিযোগের ফলে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। সেই ক্ষতি পূরণে আমাদের রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে কি ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায় তা ভেবে দেখা দরকার। বিচার বিশ্লেষণ করে দায়ী কে বা কারা, এর পেছনে কারা জড়িত ছিল, কাদের ষড়যন্ত্রের কারণে আমাদের বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়েছিল তা উদঘাটন করে বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে প্রচার করা উচিত। বাংলাদেশে এখন উন্নয়নের যে সুবাতাস বইছে, সঠিক পথেই এগোচ্ছে, সমৃদ্ধির দিকে এগোচ্ছে তা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বঙ্গবন্ধুকন্যা যে একজন দক্ষ প্রশাসক এবং দেশকে সঠিক নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা রাখেন তা বারবার প্রমাণিত হয় বিভিন্ন কর্মকা-ের মাধ্যমে। কানাডার আদালতের রায়ের ফলে বিশ্ব জানবেÑ সঠিক পথে, সঠিকভাবেই এগোচ্ছে বাংলাদেশ।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে দুর্নীতিতে বেশ কয়েকবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ! দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে অনেক মূল্য দিতে হয়েছিল। দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকার প্রথম সারি থেকে নিচের দিকে নিয়ে আসার প্রাণান্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বর্তমান সরকার। বিশেষ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার একজন মানুষ। কোনোভাবেই যেন দুর্নীতি বাংলাদেশকে গ্রাস করতে না পারে সে চেষ্টা তিনি করে যাচ্ছেন। তার সরকার করে যাচ্ছে। কিন্তু জনকল্যাণকামী এই সরকারকে বিব্রত করার প্রয়াসে কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী সবসময়ই তৎপর ছিল এবং এখনো তাদের নানা অপতৎপরতা রয়েছে। ষড়যন্ত্র রয়েছে সরকারকে বিপদে ফেলার। তা না হলে ঠুনকো অভিযোগে, কোনো নিশ্চিত তথ্য-উপাত্ত না থাকা সত্ত্বেও বিশ্বব্যাংক কেন পদ্মা সেতু থেকে তাদের অর্থায়ন ফিরিয়ে নিবে? বিশ্বব্যাংকের এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশকে ছোট করেছে বিশ্বের কাছে। যা ছিল একেবারে অন্যায়, আপত্তিকর।
ড. এম শাহ্ নওয়াজ আলি বলেন, একটি উন্নয়নকামী, সম্ভাবনাময় রাষ্ট্রের পাশের থাকার চেয়ে প্রভাবশালী কোনো রাষ্ট্রের স্বার্থসিদ্ধির জন্য কাজ করছে কি না কেউ তা দেখা দরকার। যথেষ্ট যৌক্তিক কারণও আছে। পদ্মা সেতুতে মিথ্যা অভিযোগে অর্থায়ন বন্ধ করে বিশ্বব্যাংক একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। পদ্মা সেতুতে কোনো দুর্নীতি হয়নি বলে কানাডার আদালত যে রায় দিয়েছে এতে প্রমাণিত হয়েছেÑ বাংলাদেশ সরকার দুর্নীতিকে কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেয় না, আশ্রয় পায় না দুর্নীতিবাজরা। দুর্নীতি হয়নি বলে সরকারের পক্ষ থেকে যে কথা বলা হচ্ছিল বারবার তা প্রমাণিত হলো এই রায়ের মধ্যে দিয়ে।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা শুধু এদেশের প্রধানমন্ত্রী নন, তিনি জাতির জনকের কন্যা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ়তা, চেতনা, যোগ্যতা, স্বকীয়তা, তার স্থির রাজনীতি এবং দেশপ্রেমিক হওয়ার কারণে তিনি মিথ্যা অভিযোগকে অগ্রাহ্য করে আমাদের আর্থিক সামর্থ্যরে সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ঘোষণা করেছিলেন, নিজস্ব অর্থায়নেই হবে পদ্মা সেতু। সেটাই হয়েছে বাস্তবে। প্রায় একচল্লিশ ভাগ কাজ হয়ে গেছে এই সেতুর। পদ্মা সেতু এখন আর কোনো স্বপ্ন নয়, বাস্তবতা। শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন, অতীতে এদেশে দুর্নীতি হলেও এখন দুর্নীতির কোনো জায়গা নেই কোথাও। সমাজ বা রাষ্ট্র হয়তো সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত হবে না, কিন্তু শেখ হাসিনা সরকার এ বিষয়ে অত্যন্ত কঠোর। যার ফলে বাংলাদেশে এখন একটি সুন্দর, সুষ্ঠু রাজনীতির ধারা এগিয়ে চলছে এবং বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ একটি প্রগতিশীল, শান্তিপূর্ণ, বসবাসের জন্য উপযুক্ত স্থান ও কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের যে আর্থিক প্রবৃদ্ধি এখন, তা দেখে বিশ্ব অবাক। আমরা কোথায় ছিলাম, আর কোথায় এসেছি এখন? এদেশের সাধারণ জনগণ এবং বিশ্ববাসী অবাক বিস্ময়ের সঙ্গে দেখছে আমাদের এগিয়ে যাওয়ার বাস্তব দৃশ্য। ১৯৭১ সালে এই দেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলেছিল পরাশক্তিরা। সেই পরাশক্তিদের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, বাংলাদেশ ন্যায়পরায়ণ কল্যাণকামী একটি রাষ্ট্র। এখানে অন্যায্য, ঠকবাজ ও মানবাধিকারের প্রশ্নেই এক হয়েছিল একাত্তরে এদেশের জনগণ। ন্যায্যতার প্রশ্নে এখানে কোনো আপোস হয় না। অন্যায়, অপবাদ এই রাষ্ট্রের মানুষ মেনে নেয় না। সেই তাদের বিরুদ্ধেই দুর্নীতির অভিযোগ করেছিল বিশ্বব্যাংক। তাদের অভিযোগ যে ঠুনকো ছিল তার প্রমাণ তো আদালত দিল। আবারও প্রমাণিত হলো এদেশের মানুষ অন্যায় করে না। অন্যায়কে তারা সহ্যও করে না।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংককে আমাদের সম্মানহানির দায় নিতে হবে। এই জাতির ভাবমূর্তি অক্ষুণœ রাখতে বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি আমরা। এটাই ১৬ কোটি মানুষের দাবি হওয়া উচিত। সরকারের উচিতÑ মানুষের দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তাদের কাছে জবাবদিহি বা ক্ষতিপূরণ চাওয়া। সবাই জানে, পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগে সেই সময় একজন সচিবকেও জেল খাটতে হয়েছিল। অথচ তিনি একজন সৎ ও নির্ভীক মানুষ। এই মানুষটির যে ক্ষতি হয়েছে, তা কি কেউ পূরণ করতে পারবে? এই যে তার সম্মানহানি হলো তার কী হবে? একজন মন্ত্রীকেও আমরা দোষারোপ করেছিলাম। তাকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তার ভাবমূর্তির নষ্টের দায় নিবে কে? দুর্নীতির মুখরোচক কাহিনী সেদিন যারা তৈরি করেছিল, তাদের বিরুদ্ধেও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
পদ্মা সেতু বাংলাদেশকে আর্থিকভাবে বদলে দেবে বলেও মনে করেন এই শিক্ষাবিদ। তিনি বলেন, পদ্ম সেতু সম্পন্ন হলে দেশের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী এতে সরাসরি উপকৃত হবে। আমরা জানি, পদ্ম সেতু এমন একটি সেতু যেটা সেতু শুধু সেতু নয়Ñ একটি অঞ্চলের আর্থিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির একটি বড় সোপান। খেয়াল করলে দেখা যাবেÑ বঙ্গবন্ধু সেতু (যমুনা সেতু) নির্মিত হওয়ার পরে উত্তরবঙ্গে যে সমৃদ্ধি, যোগাযোগ ব্যবস্থায় যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে, সেটা তো দৃশ্যমান। পদ্ম সেতু সমৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত সহায়ক হবে বলে মনে করি।
তিনি আরও বলেন, সরকারের চেয়ে তো কেউ শক্তিশালী নয়। দেশের জনগণ যখন একটি সরকারের প্রতি আস্থাশীল হয়, তখন সরকারের পক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হয়। দেশ পরিচালনায় সরকারের সক্ষমতা, সার্বিক যোগ্যতা দিয়ে অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি, অনাচারগুলো খুঁজে বের করতে পারে। অন্যায়কারীর উপযুক্ত শাস্তির বিধানও নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। অন্যায়ের বিচার হলে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। সঠিকভাবে এগোবে দেশ।