২ মার্চ থেকেই পাকিস্তান সরকার নিয়ন্ত্রণ হারাতে থাকে
উম্মুল ওয়ারা সুইটি: ১৯৭১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারিতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বুঝতে পারেন পাকিস্তানি শাসক মহল কোনোভাবেই পূর্ব পাকিস্তানের নেতৃত্ব মানবে না। তারা যেকোনো একটি ষড়যন্ত্র করছিল সেটি বুঝেই বঙ্গবন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদকে ২ মার্চ অসহযোগ আন্দোলন শুরু করতে বলেন। সেদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশ অনুযায়ী স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিচালনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। আর তখন থেকেই নিয়ন্ত্রণ হারাতে থাকে। বঙ্গবন্ধু তার ধানমন্ডির বাসায় সেই সময়কার ছাত্র নেতাদের বলেন, ছাত্রদের পক্ষ থেকে আন্দোলন জোরাল হতে হবে। তিনি যেকোনো উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে দেশব্যাপী ছাত্রদের সংগঠিত করার নির্দেশ দেন।
নজরুল গবেষক অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম’ ও ড. ওয়াজেদ মিয়ার ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ নামক গ্রন্থ থেকেই এই তথ্য পাওয়া যায়। গ্রন্থ থেকে পাওয়া গেছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের পর বাংলাদেশের মুক্তিকামী সাধারণ মানুষ স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিতে সর্বত্র আন্দোলন সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তখন থেকেই এখানে চলছিল একমাত্র বঙ্গবন্ধুরই হুকুমত।
এসব গ্রন্থে বলা হয়, ১৫ মার্চ ছাত্র ইয়াহিয়া খান পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর প্রায় সমুদয় জেনারেলকে নিয়ে কঠোর প্রহরায় ঢাকা আগমন করেন। সেই দিনই ‘স্বাধীন বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’ বায়তুল মোকাররমে এক জনসভার আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন নূরে আলম সিদ্দিকী।
ওই জনসভায় আ ম স আব্দুর রব ঘোষণা করেন, বাংলাদেশ আজ স্বাধীন। আমাদের উপর সামরিক বিধি জারি করার ক্ষমতা কারও নেই, বাংলাদেশের জনগণ একমাত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নির্দেশই মেনে চলবে। বাংলার সকল নর-নারী ও যুবক-যুবতীকে সৈনিক হতে হবে। গণশত্রুরা আমাদের দেশকে ভিয়েতনাম ও হিরোশিমার মতো বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার পায়তারা করছে। এই সর্বাত্মক যুদ্ধ প্রতিরোধ করতে হবে।
আব্দুল কুদ্দুস মাখন বলেন, বাংলাদেশে যদি কোনো আইন জারি করতে হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই করবেন। এ সভায় শাজাহান সিরাজ বলেন, প্রতিপক্ষ এখনো নিশ্চুপ রয়েছে, তবে চরম আঘাত হানার জন্য অপেক্ষা করছে। তাদের প্রতিহত না করলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা রক্ষা করা যাবে না।
সভাপতির বক্তৃতায় নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, গত ২৩ বছর ধরে যারা সোনার বাংলাকে শ্মশ্মানে পরিণত করেছে, তাদের সঙ্গে আমাদের আপস নেই। ৬ দফা ও ১১ দফা দিয়ে সংহতির ফুটো কলসিতে আমরা সিমেন্ট লাগাতে চেয়েছি।
এর আগে ১৪ মার্চ ‘স্বাধীন বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নির্দেশে ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি চেকপোস্ট বসানো হয়, যাতে পশ্চিম পাকিস্তানে কোনো সম্পদ পাচার না হয় বা সামরিকবাহিনীকে কোনো রসদ সরবরাহ করা না হয়। ঢাকা শহর নিয়ন্ত্রণও হচ্ছিল তখন এ পরিষদ দ্বারা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৪ মার্চের এক বিবৃতি ১৯৭১ সালের ১৫ মার্চের দৈনিক পাকিস্তান প্রচার করে, তাতে বঙ্গবন্ধু বলেন, বাংলাদেশের মুক্তির উদ্দীপনা নিভিয়ে দেওয়া যাবে না, আমাদের যাবে না পরাজিত করা। কারণ আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধররা যাতে স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে স্বাধীন হয়ে মর্যাদার সঙ্গে বাস করতে পারে, তার নিরাপত্তা বিধান করার জন্যে আমরা প্রত্যেকে প্রয়োজন হলে মরতেও কৃতসংকল্প। অতএব আমাদের মুক্তির লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা নতুন উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে আমাদের সংগ্রাম চালিয়ে যাব। সম্পাদনা: এনামুল হক