ধর্ম দেশপ্রেমের চেতনা জোগায়
সাক্ষাৎকার : প্রিন্সিপাল মাওলানা মনীরুজ্জামান
সাক্ষাৎকার গ্রহণ ওয়ালি উল্লাহ সিরাজ : একজন সাধারণ নাগরিক দেশকে ভালবাসেন শুধু রাষ্ট্রীয় চেতনা থেকে। আর আমরা দেশকে ভালবাসি রাষ্ট্রীয় চেতনা এবং ধর্মীয় অনুভূতি থেকে। আমরাও এ দেশের নাগরিক। এ দেশের সাথে, এ দেশের মাটি ও মানুষের সাথে আছে আমাদের আবেগ ও অনুভূতির সম্পর্ক। সাথে আছে ধর্মীয় চেতনা ও বিশ্বাস বিনিময়ের সম্পর্ক। নাগরিকসত্ত্বা যেমন আমাদের দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ করে তেমনিভাবে ধর্মচর্চা আমাদের দেশকে ভালবাসতে নির্দেশ করে। নিজেদের স্বার্থে, নিজেদের টিকে থাকার স্বার্থে সার্বভৌমত্মবিরোধী অন্যদের প্রভুত্ব মেনে নেয়ার দেশপ্রেম আমাদের মধ্যে নেই। দনিক আমাদের অর্থনীতিকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাত করে এ কথা বলেন, মাদরাসাতুল ইসহাস আর আরাবিয়ার প্রিন্সিপাল, হাফেজ ও মাও. মুনীরুজ্জামান।
তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে মৌলিকভাবে দুই ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা চালু রয়েছে। ক) কওমীধারা যা সর্বসাধারণের সহযোগিতায় উলামায়ে কেরামের পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত। এর নেসাব ও নেজাম ভারতের দারুল উলূম দেওবন্দের আদলে পরিচালিত । খ) আলিয়াধারা: যা সরকারের অর্থায়নে সরকারের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত। এর নেসাব ও নেজাম সরকার নিয়ন্ত্রিত এবং সময়ের তালে অনেকটা পরিবর্তিত। আর আমি আমার মাদরাসায় কওমীধারার শিক্ষাব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। কারণ বর্তমান সময়ের বাস্তবতায় আমার কাছে মনে হচ্ছে ইলম ও আমলে যোগ্য আলেমেদ্বীন কওমী মাদরাসায় তৈরি করা সম্ভব যা আলিয়া মাদরাসায় কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিষয়টি আলিয়া মাদরাসা মহলেও অনেকটা স্বীকৃত। বলার অপেক্ষা রাখে না ইলমে ও আমলে যোগ্য লোক তৈরি করাই আমাদের উদ্দেশ্য। তাই এই ধারাকে গ্রহণ করেছি। তিনি আরো বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানে যথাসম্ভব গুরুত্বের সাথেই মাতৃভাষার চর্চার হয়। প্রথমত আমাদের শিক্ষা কারিকুলামে প্রাথমিক স্তরে পূর্ণভাবে এবং মাধ্যমিক স্তরে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বাংলাভাষা সিলেবাসের অন্তর্ভূক্ত আর দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন সময়ে ভাষা প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠান এর আয়োজন করা হয়। তৃতীয়ত, দেয়ালিকা প্রকাশ ও রোজনামচা লেখার মাধ্যমে ভাষা চর্চা করানো হয়। অনেকেই বলে মাদরাসার শিক্ষার্থীদের মাঝে কোন দেশপ্রেম নেই এবং মাদরাসাগুলোতে দেশাত্ববোধের কোন চর্চাও নেই। তাদের এই কথাটা কতটা বাস্তব সম্মত? আপনি একজন মাদরাসার পরিচালক হিসাবে বিষয়টি কিভাবে দেখেন? এমন পশ্নের উত্তরে মুনীরুজ্জামান বলেন, আপনি দুটি অভিযোগ তুলে ধরলেন, দেশপ্রেম না থাকা এবং দেশাত্ববোধের চর্চা না করা। অভিযোগটি অবান্তর। দেখুন একজন সাধারণ নাগরিক দেশকে ভালবাসেন নাগরিক হিসেবে শুধু রাষ্ট্রীয় চেতনা থেকে। আর আমরা দেশকে ভালবাসি রাষ্ট্রীয় চেতনা এবং ধর্মীয় অনুভূতি থেকে। আমরাও এ দেশের নাগরিক। এ দেশের সাথে, এ দেশের মাটি ও মানুষের সাথে আছে আমাদের আবেগ ও অনুভূতির সম্পর্ক। সাথে আছে ধর্মীয় চেতনা ও বিশ্বাস বিনিময়ের সম্পর্ক। নাগরিকসত্ত্বা যেমন আমাদের দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ করে তেমনিভাবে ধর্মচর্চা আমাদের দেশকে ভালবাসতে নির্দেশ করে। নিজেদের স্বার্থে, নিজেদের টিকে থাকার স্বার্থে সার্বভৌত্ম বিরোধী অন্যদের প্রভুত্ব মেনে নেয়ার দেশপ্রেম আমাদের মধ্যে পাবেন না। চেতনার দিবস পালনের নামে নারীর সম্ভ্রমহানির দেশপ্রেম আমাদের মধ্যে পাবেন না। আর দেশাত্ববোধের চর্চা-কুরআন ও হাদীস চর্চা এবং কুরআন-হাদীস সংক্রান্ত বিষয় চর্চা আমাদের সারা জীবনের সাধনা এই কুরআন-হাদীস আমাদের মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা, জনগণের সেবা, অন্যের প্রতি কল্যাণকামিতা, কল্যাণ রাষ্ট্রের চিন্তা, সর্বোপরি নিজেকে আদর্শমানবরপে গড়ে তুলে একজন সুনাগরিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার দীক্ষা দেয়। আমাদের দৃষ্টিতে এগুলোই প্রকৃত দেশাত্ববোধের চর্চা। বাংলাদেশের প্রচলিত বিভিন্ন ইসলামি শিক্ষাব্যবস্থা এবং বিশ্বের বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশে প্রচলিত ইসলামি শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে যদি কিছু বলুন। এর প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যান্য দেশের ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা আমার জানা মতে বাংলাদেশের মতই। পঠন-পাঠন পদ্ধতি একই। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব কাতার, আরব আমিরাত আফ্রিকার মিশর, লিবিয়াসহ অন্যান্য দেশের ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থায় কিছুটা ভিন্নতা আছে। দেশগুলোতে ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থা সার্বজনীন। এ কারণেই সেখানে দ্বীনী ও দুনিয়াবী ইলমের ব্যাপক সমন্বয় করা হয়েছে। আমাদের দেশেও যদি ইসলামী শিক্ষা প্রধান সিলেবাস সার্বজনীন করা হয় তাহলে এখানেও ব্যাপক সমন্বয় করা যাবে। যতদিন পর্যন্ত ইসলামী শিক্ষা সীমিত পর্যায়ে থাকবে ততদিন পর্যন্ত আমাদের এই সিলেবাসে এভাবেই পঠন-পাঠন করে যেতে হবে। অন্যথায় এর মূল আবেদন হারিয়ে যাবে যার উদাহরণ আপনাদের সামনে আছে।