যে কাজে সুখ আসে দাম্পত্য জীবনে
হাফসা ইসলাম
ঘরে জামাই-বৌয়ের হরদম ঝগড়াঝাটি। একে অপরকে বকাবকি করছে রীতিমতো। শশুর-শাশুড়ির যন্ত্রণা তো আছেই। দেবর, ননদের হুমকিধামকি তার ওপর বাড়তি পাওনা বৌয়ের। এসব শুনছে, বুঝছে ছোট্ট ফুটফুটে সন্তানটি আমাদের। রাগে-গোস্বায় ঘরকর্তা কখনো বা বড়গলায় ঠেলে দিচ্ছেন স্ত্রীকে দূরে। অহেতুক ‘তালাক! তালাক!’ বলে ঘরসংসার ভাঙছেন দিনের পর দিন। করছেন পরিবার, সমাজে দুজনেরই বদনাম। এদিকে সন্তান কখনো বা বাবা-মায়ের কাউকে জিজ্ঞেস করছে, ‘বাবা! তালাক কি?’ রোজ বাবা-মায়ের এসব ঝগড়ায় সন্তানের মনেও একটা খারাপ দাগ কাটতে শুরু করে। স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের কলহের কারণে সন্তানটি আর সুন্দর আদব শিখতে পায় না। বনে যায় একরোখা, বদস্বভাবের। অথচ ইসলাম নরনারীর দুজনকেই উত্তমভাবে জীবনযাপন করার পদ্ধতি শিখিয়েছে। উভয়কেই ভিন্ন ভিন্ন বিশেষ মর্যাদায় ভূষিত করেছে। পুরুষকে যেমনিভাবে বাইরের যাবতীয় দায়িত্ব দিয়েছে, তেমনি নারীকেও ঘরসংসার সামলাতে বলেছে। নারীকে তার দায়িত্বটি পালন করতে হয় একজন মা হিসেবে, স্ত্রী হিসেবে, কখনো বা একজন বড় বা ছোট বোন হিসেবেও। পুরুষকেও বাবা বা স্বামী হিসেবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হয়। কিন্তু ঘরের ভেতর নারীদের দায়িত্বের মাত্রাটা একটু বেশিই থাকে। তাদের দায়িত্বটা পুরুষের তুলনায় তাৎপর্যপূর্ণও বটে। কারণ নারী মা হিসেবে সন্তানের অনেক কাছাকাছি থাকে। অনেক বেশি ঘনিষ্ট হয়। পুরুষের চেয়ে অনেক বেশি সন্তানের প্রতি মমতাময়ী হতে হয় তাকেই। কন্যাসন্তান হিসেবে বাবাদেরও যথেষ্ট ভালবাসা থাকে তাদের প্রতি। আল্লাহ তায়ালা নারীদের বিশেষ একটা গুণ দিয়েছেন, সহজেই আমরা বুঝতে পারি আমাদের সন্তানের প্রতিটা পদক্ষেপ; তাদের কখন কি প্রয়োজন বা কখন তারা কি চাইছে। তাই মাকে সর্বদাই সন্তানের পাশে থাকা চাই। ঘরে এবং পরিবারে যদি নিরবচ্ছিন্নভাবে সময় দেয়া যায়, তাহলে নিজের ওপর দায়িত্ব যথাযথ আদায় করতে পারবে নারীরা। শরয়ি আইনে স্ত্রীর ওপর যেসব অধিকার আছে, তার মাঝে কিন্তু স্বামীর খাবারদাবার প্রস্তুত করা, কাপড় ধোয়া, ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত নয়। স্ত্রী যদি স্বামীর জন্য এসব করে, তাহলে এটা তার স্বামীর জন্য একান্তই অনুগ্রহ ও মানবতার পরিচায়ক হবে। এমনকি নিজের সন্তানের দুধপানের ব্যাপারেও যদি স্ত্রী বলে আমি ওকে দুধপান করাতে পারবো না, কোনো ধাত্রীকে বলো। তখন স্বামীর ওপর সেই দায়িত্ব বর্তাবে। তবে মমতাময়ী মায়ের জন্য অকারণে এমনটা করা ঠিক নয়। দুধ পান করালে মায়ের সঙ্গে সন্তানের সম্পর্কটা গভীর হয়। এরপরও যেসব কাজ স্ত্রীর দায়িত্বের মাঝে পড়ে না, সেসবই এখন ঘরের আসল কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর যেসব কাজ করা আসল দায়িত্ব এ ব্যাপারে কারই খবর নেই। যা তার দায়িত্ব ও কর্তব্য নয়, তাই তার ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। পরিণামে ঘরে ঘরে চলছে স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া, কলহ। স্বামী বলে, ‘তুমি আমারও কাজ করবে, আমার মা-বাবারও সেবা করবে। আমার ভাইদের এবং পুরো বাড়ির সবার দায়িত্বও তোমার। তোমায় আনাই তো হয়েছে সেজন্য।’ কিছু স্বামী রয়েছেন, যারা রাগারাগি করে নয়, বরং কৌশলে স্ত্রীদের থেকে এসব আদায় করে নেন। এটা বোঝেন না, তার সাধ্যে আছে কিনা বা তার শরীরে সহ্য ক্ষমতা বহাল থাকবে কিনা। যেটা তার দায়িত্ব ছিলো, সেটা না বুঝেছে তার বাপ, না তার মা বুঝেছে, না তার স্বামী বুঝেছে, না বুঝেছে তার শশুর-শাশুড়ি। কারোরই কি জানা নেই, আল্লাহ তায়ালা নারীপুরুষের, স্বামী-স্ত্রীর এই যুগলকে কেনো বানিয়েছেন? যদি একজন আরেকজনকে না বুঝি, তাহলে একটা পরিবার কীভাবে গোছালো ও সুখের হবে! যেসব দায়িত্ব-কর্তব্য আসলে স্ত্রীর ছিলো না, সমাজ-সংসার সেগুলি তার ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে। অথচ সেসব দায়িত্ব থেকে আল্লাহ তায়ালা নারীকে ভারমুক্ত করেছেন। আর যেসব দায়িত্ব তাকে দিয়েছেন, সেটা এতোই গুরুত্বপূর্ণ ও গুরুভার, পাহাড়কেও তার স্থান থেকে সরানো সম্ভব হতে পারে; কিন্তু সে দায়িত্ব যথাযথ পালন করা বড়ই কঠিন। তা হলো সন্তানের লালন-পালন; প্রজন্মের প্রতিপালন। এই সন্তানের লালনের দায়িত্ব তার ওপর আরোপ করেছেন বলেই আল্লাহ তায়ালা নারীদের ঘর থেকে বেরোবার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করেছেন।
সঙ্গে পর্দার বিধান কঠোরভাবে আরোপ করেছেন। তাই পুরুষদের উচিত, যেনো তারা নারীদেরকে তাদের সন্তান পালনসহ ঘরের প্রয়োজনীয় কাজে তাদের সহযোগিতা করে। আর নারীদেরও উচিত, নিজ দায়িত্বে ঘরের সব কাজ আঞ্জাম দেয়। পাশাপাশি যতোদূর সম্ভব ঘরের পুরো দেখভাল নিজের কাঁধে নেয়। রোজ রোজ ঝগড়াবিবাদ কোনো মীমাংসা নয়।