মণিপুরী ভাষায় বাংলা হরফ বদলের প্রতিশ্রুতি ইরম শর্মিলার
মাছুম বিল্লাহ: শতাব্দী পুরনো বাংলা হরফ বদলের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনি বাজিমাত করতে চাইছেন ভারতের পিপলস রিসার্জেন্স অ্যান্ড জাস্টিস অ্যালায়েন্স (প্রজা)। মণিপুরে ৩২টিরও বেশি উপজাতি রয়েছে। বিভিন্ন উপজাতি গোষ্ঠীর সংস্কৃতির এই অপূর্ব মিলনভূমিতে সরকারি ভাষা লেখা হয় বাংলা হরফেই। ১৯৪৯ সালে ভারতের অঙ্গরাজ্য হিসেবে যুক্ত হওয়ার বহু আগে থেকেই এখানে বাংলা হরফের প্রচলন।
এবার শতাব্দী পরনো এই প্রথা বদলে মণিপুরের মসনদে বসতে চাইছে ইরম শর্মিলার প্রজা পার্টি। বিধানসভা নির্বাচনের ইস্তেহারে এবার সরকারি হরফকেই প্রধান ইস্যু করেছেন শর্মিলা। মণিপুরের সরকারি ভাষা আইন ১৯৭৯ সংশোধন করে বাংলার বদলে স্থানীয় কোনো হরফকে সরকারি স্বীকৃতি দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে প্রজা। সমাজের সবস্তরের মতামত নিয়ে বাংলার বদলে অন্য কোনো স্থানীয় হরফকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় প্রজার আহ্বায়ক এন্দ্রো লেইচোম্বাম জানান, মণিপুরী সংস্কৃতি রক্ষার এটাই একমাত্র বিকল্প। মণিপুরী হরফের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। আর এই হরফ চালু করতে দীর্ঘদিন ধরেই দাবি উঠছে রাজ্যে। আগামী প্রজন্মের জন্য ঐতিহাসিক মণিপুরী হরফ বাঁচিয়ে রাখতে এ ধরনের পদক্ষেপ নিতেই হবে। মণিপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তিবেতো-বার্মা ভাষার অধ্যাপক ড. যশবন্ত জানান, ১৬৭৫ সালে মণিপুরে হিন্দু আগ্রাসনের পর স্থানীয় মৈতেই হরফ নিষিদ্ধ করেন রাজা পামেইবা। এছাড়া, অসংখ্য নথিপত্রও পুড়িয়ে নষ্ট করা হয় তখন। পরবর্তীতে ১৫৬০ সালে মৈতেইকে সরকারি ভাষা ঘোষণা করেন রাজা খগেম্ব। অষ্টাদশ শতাব্দীতে আবার সরকারি মৈতেই ভাষা লেখার জন্য বাংলা হরফ গ্রহণ করা হয়।
শর্মিলা যতই অঙ্গীকার করুণ না কেন, প্রক্রিয়াটা মোটেই সহজ হবে না। আর এ ব্যাপারে সবাই প্রায় একমত। এই প্রক্রিয়ায় প্রধান সমস্যা হবে অন্তর্কোন্দল। অভ্যন্তরীণ সহিংসতায় এমনিতেই নাজেহাল মণিপুর। জন্মলগ্ন থেকেই এই অন্তর্কোন্দলের সূত্রপাত। ফলে ১৯৪৯ সালে ভারতের রাজ্য হিসেবে যাত্রার শুরুর পর থেকেই অশান্ত মণিপুর। আর এই পরিস্থিতিতে এবার নতুন করে হরফ চালু করতে গেলে কোনো গোষ্ঠীই অন্যের আধিপত্য মানবে না।
মণিপুরে মৈতেইদের আধিপত্য সবচেয়ে বেশি। মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশই মৈতেই মণিপুরী। রাজ্যের প্রধান ভাষাও মৈতেই। তবে হরফটা শুধু বাংলায় লেখা হয়। এবার এই পরিস্থিতিতে মৈতেই হরফকে অগ্রাধিকার দিলে অন্যান্য গোষ্ঠীগুলো বেঁকে বসবে। সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে, মতামতের উপর গুরুত্ব দিয়ে হরফ গ্রহণের কথা বলা হলেও সমস্যার সমাধানের সম্ভাবনা ক্ষীণ। সম্পাদনা: এনামুল হক