সাগর-রুনী, তনু ও মিতু চাঞ্চল্যকর ৩ মামলার রহস্য উদঘাটন হলনা আজও
আজাদ হোসেন সুমন: দেশের বিভিন্নস্থানে ঘটে যাওয়া চাঞ্চল্যকর ৩ টি ঘটনা। এগুলো হচ্ছে, সাগর-রুনী, তনু ও মিতু হত্যা। এই ৩টি ঘটনায়ই দেশব্যাপী চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছিল। টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হওয়া বহুল আলোচিত এ তিনটি হত্যা মামলার তদন্তই আলোর মুখ দেখেনি। জন সাধারণের ব্যাপক কৌতূহল আর আগ্রহ থাকলেও সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তারা এই তিনটি ঘটনার মোটিভ উদঘাটন করতে সক্ষম হননি।
সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনী হত্যা:
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ভোরে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের একটি পাঁচতলা ভবনের পঞ্চম তলার ফ্ল্যাট থেকে মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রুনির ক্ষতবিক্ষত লাশ পাওয়া যায়। ঘটনার পর থেকে এ পর্যন্ত ৩ জন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বদল হয়েছেন। তারা প্রত্যেকেই হত্যা রহস্য উদঘাটনে আসামিদের গ্রেফতারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। এ পর্যন্ত মামলার ছেচল্লিশ বার সময় নিয়েও সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দিতে ব্যর্থ হওয়ায় তদন্তের দায়িতপ্রাপ্ত র্যাব কর্মকর্তা এএসপি মহিউদ্দিন আহমেদকে তলব করেছে আদালত। সেই সঙ্গে এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য ২১ মার্চ দিন ধার্য করেছেন আদালত। ওই বাসায় বাবা-মায়ের লাশের সঙ্গে শুধু তাদের শিশু সন্তান মাহির সরওয়ার মেঘকেই পাওয়া গিয়েছিল।
সেই শিশু সন্তান মেঘ দিন দিন বড় হচ্ছে গত ১১ ফেব্রুয়ারি মামা নওশের আলম রোমানের সঙ্গে মেঘ মা-বাবার কবর জিয়ারত করে বিদেহী আত্মার শান্তির জন্য দোয়া করেছে। শিশুটির প্রশ্ন মা-বাবার হত্যাকারীরা কি ধরা পড়বে না। তাহলে কি এই হত্যাকা-ের বিচার হবে না। তার প্রশ্নের কোনো জবাব নেই সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ তদন্ত কর্মকর্তা বা সরকারের কাছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, এ মামলায় গ্রেফতার ছয়জন বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। এরা হলেন-সাগর-রুনি যে বাড়িতে থাকতেন ওই বাড়ির নিরাপত্তারক্ষী এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কবির, রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু ওরফে মাসুম মিন্টু, কামরুল হাসান অরুণ ও আবু সাঈদ। অন্যদিকে তানভীর রহমান ও ওই বাড়ির দারোয়ান পলাশ রুদ্র পাল সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া জামিনে রয়েছে। গ্রেফতার এই আসামিদের একাধিকবার রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও কেউ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি। চাঞ্চল্যকর এ সাংবাদিক দম্পতি হত্যা নিয়ে জনমনে সন্দেহ ও সংশয় রয়েছে। সাংবাদিকরাও এ নিয়ে প্রতিনিয়ত নানা মহল থেকে প্রশ্নের মুখে পড়ছেন। কিন্তু ঘটনার ৫ বছর পেরিয়ে গেলেও কোনো কুল কিনারা হচ্ছে না। অনেকেই বলছেন, এই ঘটনায় ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা কারো হাত রয়েছে। যে হাতের ইশারায় রহস্য উদঘাটন বন্ধ রয়েছে। তাদের প্রশ্ন দেশের তদন্তকারীরা ইনডোরে ঘটে যাওয়া ক্লুলেস মার্ডারের মোটিভ উদঘাটন করতে পারেনা এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়।
কলেজছাত্রী তনু হত্যা:
২০১৬ সালের ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনুর লাশ ময়নামতি সেনানিবাস এলাকার একটি ঝোপে পাওয়া যায়। প্রথমে থানায় মামলা হলেও পরবর্তী সময়ে মামলার তদন্তভার সিআইডি পুলিশকে দেয়া হয়। সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক গাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম এ মামলার তদন্ত করছেন। তনুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় বলেও একাধিক ময়নাতদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু কারা সেই ধর্ষণকারী বা হত্যাকারী। এটার কোনো কুল কিনারা বের করতে পারেনি পুলিশ। তনুর মা আনোয়ারা বেগম একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে পাগল প্রায়। তনুর বিষয়টিও টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয়। কুমিল্লা ও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে এ নিয়ে মানববন্ধন হয়েছে। কিন্তু হত্যা রহস্য অনুদঘাটিতই রয়ে গেছে। সিআইডি পুলিশ বরাবরই বলছে “আমরা চেষ্টা করছি”। কিন্তু এ নিয়ে সাধারণ মানুষের আগ্রহের কমতি নেই। অনেকেই বলছেন, এটা সেন্সেটিভ ব্যাপার। তাই তদন্তকারীরা ধরি মাছ ছুই ভূমিকায় অবতীর্ন হয়েছে।
মিতু হত্যা:
গত বছরের ৪ জুন বিকালে চট্টগ্রামের ওআর নিজাম রোডে পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এই ঘটনাটি এখনো রহস্যের আবর্তে। কারণ ইতিপূর্বে এ হত্যাকা-ে অংশ নেয়া কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হলেও কি কারণে এবং কার নির্দেশে হত্যা করা হয় এই গৃহবধূকে সেটা এখনো বের করতে পারেনি পুলিশ। কারণ বের করতে হলে হত্যায় মূল দায়িত্ব পালনকারী মুসাকে ধরতে হবে। মুসার স্ত্রীর দাবি মুসাকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। কিন্তু পুলিশ বরাবরই বলছে মুসাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। মুসাতেই হত্যা রহস্য আটকে আছে। কারণ একমাত্র মুসাই জানেন হত্যার কারণ ও নির্দেশ দাতার নাম। বাকি সব ক্লিয়ার হত্যাকারী দলের ২ সদস্য হত্যার কথা স্বীকার করে ইতিপূর্বে আদালতে স্বাীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীও দিয়েছে। এখন তদন্ত কর্মকর্তা এ নিয়ে আবার তদন্ত শুরু করেছেন। মিতুর স্বামী পুলিশ সুপার বাবুলের চাকরি হারাতে হয়েছে এই ঘটনায়। শ্¦শুর-শাশুড়ির সাথে সোনায় সোহাগা সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে বাবুলের। বিষয়টি মাঝেমধ্যে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসছে। কিন্তু মূল বিষয়ের কোনো খবর নেই। আর সেটা হচ্ছে হত্যার মোটিভ। হত্যার মোটিভ নিয়ে এখনো রহস্যাবৃত। হয়তো এ হত্যা রহস্য উদঘাটিতই হবেনা কোনোদিন। কারণ মুসা আছে মুসা নেই। সম্পাদনা: এনামুল হক