আসামির পক্ষে পুলিশের চূড়ান্ত প্রতিবেদন !
ইসমাঈল হুসাইন ইমু: এজাহারভুক্ত এক আসামিকে আটকের পর অজ্ঞাত কারণে ছেড়ে দেয় পুলিশ। অবশ্য ওই আসামি আদালতে জামিন নিতে গেলে তাকে জেলে পাঠানো হয়। কিন্তু জামিনে বেরিয়ে এবার পুলিশের কল্যাণে মামলা থেকেই অব্যাহতি পাচ্ছেন ওই আসামি। পুলিশের অব্যাহত অসহযোগিতায় মামলার বাদীর অবস্থা ‘ত্রাহি মধুসূদন” ঘটনাটি রাজধানীর বংশাল থানার।
জানা গেছে, গোলাম মোস্তফা আদর নামের এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ধার নেয়ার কথা বলে ২৫ লাখ টাকা নেন লুৎফর রহমান। কিন্তু টাকা ফেরত চাইলে না দিয়ে উল্টো মামলা করে হয়রানি করতে থাকেন তিনি। বর্তমানে পুলিশকে ম্যানেজ করে তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদনও করিয়ে নিয়েছেন।
গোলাম মোস্তফা আদর বলেন, প্রায়ই তাকে এবং তার বাবাকে বিভিন্ন হুমকি দিয়ে আসছিলেন লুৎফর। ধারের ২৫ লাখ টাকা না দেয়ার পাঁয়তারায় এসব করছেন তিনি। আদর অভিযোগ করেন, গতবছর ১৫ নভেম্বর বংশালের মোহরটুলি এলাকায় তার বাবা গোলাম মোহাম্মদ কালুর উপর হামলা চালায় লুৎফর ও তার সহযোগীরা। ওইদিন আহতাবস্থায় তাকে উদ্ধার করে মিটফোর্ড হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। গোলাম মোহাম্মদ কালু সুস্থ হয়ে এ বিষয়ে থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা না নিয়ে তালবাহানা করতে থাকে। পরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে অবশ্য মামলা নিতে বাধ্য হয় বংশাল থানা পুলিশ। এরপর ওই মামলায় ১৯ ডিসেম্বর দুপুরে বংশাল এলাকা থেকে লুৎফর রহমানকে আটক করে থানার এসআই অলোক কুমার। তবে অজ্ঞাত কারণে ওইদিন বিকালেই তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। আটকের পর মামলার বাদী গোলাম মোহাম্মদ কালু থানায় গেলে পুলিশ তাকে থানা থেকে বের করে দেয়। এরপর দিন চানখারপুল এলাকায় লুৎফর ও তার সহযোগীরা আবারও গোলাম মোহাম্মদ কালুর উপর হামলা চালায়। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। তাকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।
এদিকে লুৎফর থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে ছাড়া পেলেও পরদিন সিএমএম আদালতে জামিন নিতে গেলে আদালত তাকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। বর্তমানে জামিনে বেরিয়ে আদর ও তার বাবার বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছেন তিনি।
অপরদিকে পুলিশের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বংশাল থানার এসআই অলোক কুমার বিশ্বাস উল্লেখ করেন, লুৎফর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা তদন্তে নেমে তিনি বাদীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। ঘটনাস্থল ও আশপাশের লোকজনকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এছাড়া আলামতও জব্দ করেন তিনি। পরে মামলার রহস্য উদ্ঘাটনে গুপ্তচরও নিয়োগ করা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চূড়ান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখিত দাবি করলেও প্রকৃতপক্ষে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেননি তিনি। এছাড়া বাদীর সঙ্গেও যোগাযোগ করেননি।
চূড়ান্ত প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, এসআই অলোক লুৎফর রহমানকে গ্রেফতার করেন। কিন্তু প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের’ নির্দেশে জামিনে মুক্তি প্রদান করেন। মামলার এজাহারভুক্ত আসামিকে কিভাবে থানা থেকে জামিন দেয় পুলিশ এমন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে গোলাম মোহাম্মদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নাজমা খাতুন বলেন, এজাহারভুক্ত আসামিকে আটকের পর আদালতের নির্দেশনা ছাড়া কোনোক্রমেই ছেড়ে দিতে পারেনা পুলিশ। এটা আইনের পরিপন্থী। তাছাড়া ঘটনাস্থল পরিদর্শন না করা এবং বাদীর সঙ্গে কোনো প্রকার যোগাযোগ না করেই কিভাবে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হলো তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন তিনি। সম্পাদনা: আজাদ হোসেন সুমন