ইউনূসের প্রশংসা করায় অর্থমন্ত্রীর সমালোচনায় প্রধানমন্ত্রী
উম্মুল ওয়ারা সুইটি: ড. ইউনূসকে নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের প্রশংসার সমালোচনা করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমার দুঃখ লাগে যে, তিনি (মুহিত) এমন একজনের প্রশংসা করে ফেললেন যার কারণে আমার পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধ করে দিলো ওই বিশ্ব ব্যাংক। বারবার আমাকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল ওই আমেরিকা থেকে অথচ তিনি তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
গতকাল শনিবার রাজধানীর খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনিস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্থমন্ত্রীর এই সমালোচনা করেন। উল্লেখ্য, সম্প্রতি ঢাকায় সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের (এসডিএফ) এক অনুষ্ঠানে দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুদ্র ঋণ, গ্রামীণ ব্যাংক, ব্র্যাকের প্রশংসা করে মুহিত বলেছিলেন, একসময় এদেশে ৭০ শতাংশ মানুষ দরিদ্র ছিল। সেখান থেকে এখন ২২ শতাংশে নেমে এসেছে। গ্রাামীণ ব্যাংক এ ভূমিকাটি সাফল্যের সঙ্গে পালন করেছে। হতদরিদ্র লোকের ঋণ পাওয়ার অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে গ্রামীণ ব্যাংক। দারিদ্র্য কমাতে অবদান রাখা আরেকটি সংস্থা ব্র্যাক। ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্মানিত ব্যক্তি। তাকে সম্মান দিতে হবে। একই সঙ্গে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের জন্য ব্র্যাক ও ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদেরও প্রশংসা করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী মুহিতের এ বক্তব্যের সমালোচনা করে বলেন, দারিদ্র্য বিমোচন যদি তার (ইউনূস) জন্যই হতো, তাহলে আর ওই ৬০ ভাগের মতো দারিদ্র্য থাকে কেন? আর আজকে ২২ ভাগে নেমে এসেছে কবে?
প্রধানমন্ত্রী অর্থমন্ত্রীর প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন, তিনি যেন একটু হিসেব নেন, এই যে ২২ ভাগে নেমে এসেছে কাদের আমলে? আওয়ামী লীগ সরকার আসার পর। ক্ষুদ্র ঋণের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষুদ্র ঋণে দারিদ্র্য লালন পালন হয়। আর যারা ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবসা করে তারা সম্পদশালী হয়। তারা ধনশালী হয়। কারণ সপ্তাহে সপ্তাহে উচ্চহারে সুদ ওই গরিবের মেয়েরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যে টাকা কামাই করে সে টাকা সুদ হিসেবে চলে যায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ঋণের সুদ দিতে দিতে একজন মানুষের জীবনে আর কিছুই থাকে না। সে কোনো মতে খেয়ে পরে বেঁচে থাকতে পারে। কিন্তু দারিদ্র্যের হাত থেকে উঠে আসতে পারে না। আর যারা এই ব্যবসা করে তারা চায়ও না যে, এরা দারিদ্র্য থেকে উঠে আসুক। তাহলে তাদের ব্যবসা করবে কে?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, উনি (ড. ইউনূস) পদ্মা সেতু নিয়ে আমাকে এবং আমার পরিবারকে বিপদে ফেলতে চেয়েছিলেন। মুহিত সাহেব কিভাবে তা ভুলে গেলেন। আর দারিদ্র্য দূর করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। পদ্মা সেতুতে যে কোনো দুর্নীতি হয়নি সেটা কানাডার ফেডারেল কোর্ট রায় দিয়েছে এবং আজকে এটা প্রমাণিত। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের লক্ষ্য কোনো মানুষ দরিদ্র থাকবে না। দারিদ্র্যের হাত থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে হবে। রাজনীতি করতে এসেছি জনগণের জন্য। নিজের ভাগ্য গড়ার জন্য নয়, আর ব্যবসা করার জন্যও নয়। মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আশরাফুননেসা মোশাররফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী দারিদ্র্য বিমোচনে তার সরকারের সাফল্য তুলে ধরেন। সম্পাদনা: এনামুল হক