ডাকসু নির্বাচন অবশ্যই দিতে হবে : রাষ্ট্রপতি
নিজস্ব প্রতিবেদক: ছাত্ররাজনীতিতে নিয়মিত ছাত্রদের অংশগ্রহণ থাকা উচিত। একজন যদি ৫০ বছর বয়সে ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্ব দেন, তাহলে যাদের বয়স ২০-২২-২৫ বছর, তাদের সঙ্গে অ্যাডজাস্টমেন্ট কীভাবে হবে? সুতরাং ‘ডাকসু নির্বাচন ইজ আ মাস্ট’। নির্বাচন না হলে ভবিষ্যৎ নেতৃত্বে শূন্যতার সৃষ্টি হবে। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রের খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত সমাবর্তনের প্রধান অকর্ষণ ছিল রাষ্ট্রপতির বক্তব্য। এ সময় তিনি নির্ধারিত লিখিত বক্তব্যের পাশাপাশি স্বভাবসুলভ স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজের ছাত্র ও রাজনৈতিক জীবনের নানা দিক নিয়েও আলোচনা করেন।
উল্লেখ্য, সমাবর্তন অনুষ্ঠানে মোট ১৭ হাজার ৮৭৫ জন স্নাতক অংশ নিয়েছেন। এদের মধ্যে ৮০ জন কৃতি শিক্ষার্থীকে ৯৪টি স্বর্ণপদক এবং ৬১ জনকে পিএইচডি ও ৪৩ জনকে এমফিল সনদ দেওয়া হয়।
ছাত্ররাজনীতির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে আবদুল হামিদ বলেন, দেশ ও জাতির উন্নয়নে রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিকল্প নেই। গণতন্ত্র ও উন্নয়ন একে অপরের পরিপূরক। একটি ছাড়া অপরটি অচল। তাই গণতন্ত্রের ভিতকে মজবুত করতে হলে দেশে সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তুলতে হবে। আর সেই নেতৃত্ব তৈরি হবে ছাত্ররাজনীতির মাধ্যমেই।
দুই যুগেরও বেশি সময় ডাকসু নির্বাচন না হওয়ায় নিজের হতাশা ব্যক্ত করে রাষ্ট্রপতি ছাত্ররাজনীতির অতীত ও বর্তমান নিয়ে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করেন। এ সময় তিনি বলেন, আমাদের সময়ের আর আজকের ছাত্ররাজনীতির মধ্যে অনেক তফাত। ষাটের দশকে আমরা যারা ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম, তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল দেশ-জাতির কল্যাণ সাধন। সে সময়ের ছাত্ররাজনীতির ধরন নিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, তখন ছাত্ররাই ছাত্ররাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করত, নেতৃত্ব দিত। লেজুড়বৃত্তি বা পরনির্ভরতার কোনো জায়গা ছিল না। তখন সাধারণ মানুষ ছাত্রদের সম্মানের চোখে দেখত আর বর্তমানে বেশির ভাগ ছাত্রনেতার বয়স ৪৫ থেকে ৫০ বছর উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, এ কারণে ছাত্র সংগঠনের নেতারা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ছাত্রদের সঙ্গে মিশতে পারে না। তাই ডাকসুর মাধ্যমে নেতা নির্বাচন করতে হবে। নেতৃত্ব নির্বাচনে অবশ্যই নিয়মিত ছাত্রদের বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে।
সমাবর্তনে উপস্থিত গ্রাজ্যুয়েটদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তোমাদের কাছে এ প্রত্যাশা করি যে, জীবনের সকল ক্ষেত্রে যেন সততা, নৈতিকতা বজায় রাখতে পার। সে ব্যাপারে সচেষ্ট হবে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যা অর্জন করেছ দেশ ও মানুষের কল্যাণে ভালোভাবে কাজে লাগাবে।
তরুণ প্রজন্মের কাছে সন্ত্রাসবাদ ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আহ্বান জানিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধে আমরা বিজয়ী হলেও পঁচাত্তরের হত্যাযজ্ঞের ফলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ও বিপক্ষের শক্তির লড়াই, প্রগতি ও প্রতিক্রিয়া, শুভ ও অশুভ এবং ধর্মপরায়ণতা ও ধর্মান্ধতার লড়াই আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে শেষ হয়ে যায়নি। এ লড়াইয়ে জিততে না পারলে অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অগ্রগতির চাকা মুখ থুবড়ে পড়বে। আজকের লড়াইয়ে শুভশক্তি জয়ী না হলে রাষ্ট্র হিসেবে, জাতি হিসেবে আমরা আবার পিছিয়ে পড়ব বলেও মন্তব্য করেন রাষ্ট্রপতি। সম্পাদনা: এনামুল হক