ছাত্রলীগ ভিসির কাছে নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক দাবি জানাবে ছাত্রদলের দাবি ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত করা ডাকসু নির্বাচনের উদ্যোগ নিচ্ছেন ভিসি
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী, কিরণ সেখ ও আল হেলাল শুভ: রাষ্ট্রপতি ডাকসু নির্বাচনের কথা বলার পর ছাত্রলীগের নেতাদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। তারা নির্বাচনের জন্য এখন তাদের দাবি নতুন করে আরও জোরালো করারও সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন। সেই সঙ্গে নির্বাচনের বিষয়টি নিয়ে তারা ভাইস চ্যান্সেলরের সঙ্গেও দেখা করবেন। তার কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনের দাবিও জানাবেন।
এদিকে রাষ্ট্রপতির তাগিদে ছাত্রদলের মধ্যে আশা তৈরি হলেও তারা সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ চাইছে। ছাত্রদলের নেতাদের দাবি, ছাত্রদল সব সময়ই ডাকসু নির্বাচনের কথা বলে আসছে। তারা মনে করছে, তারা হারবে কি জিতবে সেটা বড় কথা নয়। জয় পরাজয়ের বিষয়টি বড় কথা নয়। তারা চায় দীর্ঘদিনের জট দূর হোক। ডাকসুর কার্যক্রম আগের মতো শুরু করা হোক। এটা করা হলে ডাককু ছাত্রদের কল্যাণে কাজ করবে। তারা মনে করছেন, ক্যাম্পাস এবং ক্রিয়াশীল সকল ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। আর তা করেই ডাকসু নির্বাচনের বন্ধ দুয়ার খুলে দেয়া হবে। আর এটা নিশ্চিত হলেই ছাত্রদল সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে এবং নির্বাচনে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত।
ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিলে অবশ্যই অংশ নেব জানিয়ে ছাত্র ইউনিয়ন মনে করছে, নীতিমালা তৈরি করে সকল ছাত্র সংগঠনকে ঐকমত্যে আসতে হবে। এ জন্য কাজ করারও সুযোগ দিতে হবে। রাতারাতি যেন মনোনয়ন না দিয়ে বসে সেটাও দেখতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের তাগিদ দিয়েছেন শনিবার। বলেছেন, কাল বিলম্ব না করে নির্বাচন করার জন্য। ১৯৯০ সালে সবশেষ ডাকসু নির্বাচন হয়েছিল। এরপর বিভিন্ন সময়ে দায়িত্বপালনকারীরা নির্বাচনের উদ্যোগ নিলেও শেষ পর্যন্ত আর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। সকল চেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে। ২৬ বছর ধরে ঝুলে আছে নির্বাচন না করতে পারার বিষয়টি।
’৯০ সালের পর ডাকসুর আরও কোনো নির্বাচন না হওয়ায় ডাকসুর নেতারা আগে যেভাবে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছেন অতীতে, নতুন করে নেতা তৈরি না হওয়ায় গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ডাকসুর ছাত্রদের সেই রকম কোনো সাফল্য ছিল না। ওই সময়ের কমিটির নেতাদের অনেকেই আজ রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা। ডাকসুর নির্বাচন না হওয়ার কারণে নতুন করে তেমন কোনো ছাত্র নেতাও তৈরি হয়নি। সব কিছু মিলিয়ে ছাত্র নেতাদের যে অবদান ছিল সেই অবদানের কথা স্মরণ করে ও তাদের ভূমিকাকে সামনে রেখে রাষ্ট্রপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ডাকসু নির্বাচন করার তাগিদ দেন।
রাষ্ট্রপতির তাগিদের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ডাকসু নির্বাচনের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে। এই ব্যাপারে ভাইস চ্যান্সেলরও উদ্যোগ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ডাকসু নির্বাচন হতে যাচ্ছে এনিয়ে ছাত্র নেতাদের মধ্যে নতুন করে আশার সঞ্চার হয়েছে। ছাত্রলীগ, ছাত্রদল ও ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতিরাও এই ব্যাপারে প্রস্তুতি নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে তাদের প্রত্যাশাও রয়েছে অনেক।
তারা রাষ্ট্রপতির এই উদ্যোগকে সবাই স্বাগত জানিয়েছেন। এ বিষয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ বলেন, আমরাও দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছি নির্বাচনের কথা। আমরা শুধু ডাকসু নয়, সকল প্রতিষ্ঠানের ছাত্র সংগঠনের নির্বাচন চাই। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি ছাত্র সংসদ নির্বাচন প্রক্রিয়া চালু করে তবে অবশ্যই আমাদের সুপারিশ জানাবো। তিনি বলেন, এর মধ্যে আমাদের দাবির কারণে কয়েকটি কলেজের ছাত্র সংগঠনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ছাত্রদলের সভাপতি রাজিব আহসান বলেন, ডাকসু নির্বাচন হওয়া উচিত। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন না। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্র রাজনীতি ও নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করুক। তাহলে আমরা অবশ্যই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো। এরপর সাধারণ শিক্ষার্থীরাই ঠিক করবে তাদের নেতা কে হবে। কিন্তু এর ব্যত্যয় ঘটিয়ে যদি তারা ভিন্নমত দমন ও অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করে তাহলে এর জন্য ছাত্র, বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি ছাত্রলীগও ক্ষতির সম্মুখিন হবে।
ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি লাকি আক্তার বলেন, রাষ্ট্রপতিও বলেন নির্বাচন হওয়া উচিত। তবে তিনি কার কাছে চাইবেন। এটা আসলে নির্বাহী প্রধান হিসেবে প্রধান অতিথির দিকে আঙ্গুল নির্দেশ করে বলেই আমার ধারণা।
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, সকল ছাত্র সংগঠনই বলে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হওয়া উচিত। তবে হয় না কেন? তাহলে কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতার কোনো অভাব আছে কিনা এমন প্রশ্নও করেন তিনি।
ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিলে অবশ্যই অংশ নেব জানিয়ে সংগঠনের সভাপতি বলেন, এ জন্য আগে নীতিমালা তৈরি করে সকল ছাত্র সংগঠনকে ঐকমত্যে আসতে হবে। আর এ জন্য কাজ করারও সুযোগ দিতে হবে, রাতারাতি যেন মনোনয়ন না দিয়ে বসে। নির্বাচন নিয়ে তাদের কিছু সুনির্দিষ্ট সুপারিশ আছে বলেও এ সময় জানান তিনি।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, শিগগিরই ডাকসু নির্বাচনের উদ্যোগ নেয়া হবে। প্রশাসন সব সময়ই চায় ডাকসু নির্বাচন হোক। রাষ্ট্রপতি এবার ডাকসু নির্বাচনের উপর জোর দিয়েছেন। তার কথার গুরুত্ব দিয়েই এ নির্বাচনের উদ্যোগ নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেছেন, ডাকসু ইলেকশন ইজ মাস্ট, তা না হলে ভবিষ্যৎ নেতৃত্বশূন্য হয়ে যাবে। আমাদের সময়ের রাজনীতি আর আজকের ছাত্র রাজনীতির মধ্যে তফাৎ অনেক বেশি। ষাটের দশকে আমরা যারা ছাত্র রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল দেশ-জাতির কল্যাণ। দেশের মানুষকে পরাধীনতার নাগপাশ থেকে মুক্ত করে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীস্বার্থের কোনো স্থান ছিল না। ছাত্ররাই ছাত্র রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করত, নেতৃত্ব দিত। লেজুড়বৃত্তি বা পরনির্ভরতার কোনো জায়গা ছিল না। সাধারণ মানুষ ছাত্রদের সম্মানের চোখে দেখত। ছাত্র রাজনীতির বর্তমান হালচাল দেখে মনে হয় এখানে আদর্শের চেয়ে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীস্বার্থের প্রাধান্য বেশি। কিছু ক্ষেত্রে অছাত্ররাই ছাত্র রাজনীতির নেতৃত্ব দেয়, নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে ছাত্র রাজনীতির প্রতি সাধারণ মানুষের, এমনকি সাধারণ শিক্ষার্থীদের আস্থা, সমর্থন ও সম্মান হ্রাস পাচ্ছে। এটি একটি দেশ ও জাতির জন্য শুভ নয়।