আগামী নির্বাচনে প্রাধান্য পেতে পারে নতুন মুখ, ফ্যাক্টর হবে তরুণ ও নতুন ভোটাররা
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ২০১৮ সালের শেষভাগে। ওই নির্বাচনের জন্য এখনই আগাম প্রস্তুতি শুরু হয়েছে রাজনৈতিক দলের মধ্যে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নির্বাচনি ইশতেহার তৈরি করছে। কোন দল কত বেশি প্রতিশ্রুতি দিতে পারবে জনগণকে ও ভোটারদেরকে এবং কাদেরকে আকৃষ্ট করতে পারে এনিয়ে চলছে প্রতিযোগিতাও। সবার লক্ষ্য ভোটারদের আকৃষ্ট করা। এদিকে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জোটও সুসংঠিত করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে নতুন জোটও গঠিত হতে যাচ্ছে। জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নতুন জোট গড়তে যাচ্ছেন। তিনি চাইছেন নির্বাচনের মাধ্যমে তার দলকে ক্ষমতায় নিয়ে যেতে। এমনটাই তিনি স্বপ্ন দেখছেন।
বিএনপি ও আওয়ামী লীগের জোটের কাছে তার জোট কতখানি কি করতে পারবে, এটা স্পষ্ট না হলেও তিনি জোট গড়তে যাচ্ছেন। শিগগিরই একটি জোট হবে। এই জোটের ঘোষণাও দিবেন তিনি। এখন তার দল বিরোধী দলে বসছে সংসদে। এই অবস্থায় তিনি আশাবাদী। তার জোট গঠনের পর তিনিও নির্বাচনি ইশতেহার তৈরি করা শুরু করবেন। এদিকে, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগাম নির্বাচনের আগে বেশ কিছু নতুন মুখের দেখা মিলবে। কারণ অনেক তরুণ নেতার ভাগ্য খুলে যাবে। ক্ষমতাসীন দলের যেসব সংসদ সদস্য জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন এবং জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারেননি ওই সব নেতাকে আগামী দিনে নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া নাও হতে পারে। সেখানে নতুন মুখ আনা হতে পারে। আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে ওই সব ব্যর্থ এমপিদের তালিকা করেছে। রিপোর্টও পেয়েছেন মাঠ পর্যায় থেকে। এই অবস্থায় পুরনোদের অনেকেরই জন্য আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে। আওয়ামী লীগেও কাউন্সিলের মাধ্যমে বেশ কয়েকজন নতুন মুখ এসেছে। তাদেরও অনেকেই মনোনয়ন পেতে পারেন।
বিএনপির সূত্র জানায়, বিএনপিতে নতুন মুখের পাশাপাশি পুরনোদের প্রাধান্য থাকবে। কারণ বিএনপির বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা মারা গেছেন। তাদের আসনে নতুন প্রার্থী দিতে হবে। এছাড়াও আগামী দিনে কোন নেতার বিরুদ্ধে আদালতে বিচারাধীন মামলায় কি রায় আসবে তা এখনও কেউ জানেন না। এই কারণে ওইসব নেতার আসনেও বিকল্প প্রার্থী বিবেচনায় রাখতে হচ্ছে। অন্যদিকে বিএনপির এবারের কাউন্সিলে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে অনেক নতুন মুখ এসেছেন। ওইসব নেতার অনেককেই আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়ার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে। এছাড়াও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও চান তরুণ প্রজন্মের নেতাদেরকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে। সেই জন্য যোগ্য ও সৎ তরুণ নেতাদের বিষয়টি তিনি ইতিবাচকভাবেই ভাবছেন।
এদিকে এরশাদের দল থেকেও তিনি ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার জন্য কাজ করছেন। এখন আবার জোট গঠন করছেন। সেখানেও নতুন মুখের প্রাধান্য পেতে পারে। জোট গঠন করতে পারলে জোটের সঙ্গে ৩০০ আসনে জোটের দলের সঙ্গে ভাগাভাগি করা হবে।
বিএনপি, আওয়ামী লী ও জাতীয় পার্টির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী নির্বাচনে বেশি আসনে জয় পাওয়ার জন্য বিতর্ক মুক্ত, সৎ, সাহসী ও ত্যাগী নেতা হিসাবে যারা দলের জন্য ভূমিকা রেখেছেন এমন নতুন মুখের বিষয়টি বিবেচনায় রেখেছেন স্ব-স্ব দলের হাইকমান্ডরা। এর পাশাপাশি তারা আগাম নির্বাচনে তরুণ ও নতুন ভোটারদের ভোটের বিষয়টিও প্রাধান্য দিচ্ছেন। কারণ যারা নতুন ভোটার হয়েছেন। তাদের ভোটও নির্বাচনের ফলাফল বদলে দিতে পারে। এই কারণে নতুন ভোটারদের ও তরুণ ভোটারদের পাশে টানার জন্য চেষ্টা রয়েছে সব দলের। সেই হিসাবে দলগুলো চেষ্টা করছেন নির্বাচনি ইশতেহারে তাদের জন্য বিশেষ প্যাকেজও রাখতে। তাদের জন্য শিক্ষাখাতে, চাকরি খাতে কি কি করা হবে স্ব-স্ব দল ক্ষমতায় যেতে পারলে সেই সব সুযোগ সুবিধার কথাও উল্লেখ থাকতে পারে।
বিএনপির সিনিয়র একজন নেতা বলেন, তরুণ ও নতুন ভোটাররা বরাবরই নির্বাচনে একটি বড় ফ্যাক্টর থাকে। কারণ তারা অনেক দিক বিবেচনা করে ভোট দেয়। সেই জন্য তাদেরকে প্রাধান্য দিতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। বিএনপি ২০১৪ সালের নির্বাচনে ছিল না। ২০০৮ সালে সর্ব শেষ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। দশ বছরে অনেকের বয়স ১৮ বছর হয়ে গেছে। তারা অনেকেই ভোটার হয়েছে। এই দশ বছরে যাদের বয়স আঠারো বছর হয়েছে তারা আগামী নির্বাচনে একটি বড় ভূমিকা পালন করবে। এই জন্য বিএনপিকে ওই ভোটারদের পাশে পাওয়ার জন্য চেষ্টা করতে হবে। তাদেরকে সুযোগ দিতে হবে বিএনপি না আওয়ামী কোন দল ক্ষমতাসীন হলে তাদের লাভ হবে। এই জন্য তাদের বিষয়টি মাথায় রেখেই ইশতেহারে তাদেরকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, আগামী নির্বাচন যথাসময়ে হবে। আর সেই নির্বাচনের জন্য আমাদের নেত্রী প্রস্তুতিও নিতে বলেছেন। সেই হিসাবে কাজও চলছে। আমরা ও আমাদের সরকার জনগণের উন্নয়নের লক্ষ্যে, দেশের উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করছে। আমাদের দল আশা করে জনগণ দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে আবারও আওয়ামী লীগকে ভোট দিবে। ২০৪১ সালের লক্ষ্য পূরণে ও বাংলাদেশকে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আবারও ভোট দিবে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আগামী নিবাচনে তরুণ ভোটাররা অবশ্যই একটি ফ্যাক্টর। তাদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলা দরকার। তাদেরকে বুঝতে হবে আজকে দেশের কী অবস্থা? আর আমরা কোথায় যাচ্ছি। দেশে এখন একনায়কতন্ত্র চলছে। এখন গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা দরকার। সেই জন্য দুর্বার আন্দোলন শুরু করতে হবে। আর জনগণের মধ্যে যে ক্ষোভ রয়েছে এর বহি:প্রকাশও ঘটবে। তারা যদি সবাই তাদের নিজেদের ঘরে ঘরে সচেতনতা তৈরি করে এবং ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে সুচিন্তিতভাবে ভোট দেয় এবং ভোটারবিহীন নির্বাচন করে, যারা ভোটারদের অধিকার কেড়ে নিয়ে ক্ষমতাসীন হয়েছে তাদেরকে বর্জন করে তাহলে দেশে আবার গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠা হবে। আমরা আশা করি আগামী নির্বাচনে সবাই সেটাই করবে।