বিজিএমইএ ভবন ভাঙার আদেশ দুশ্চিন্তায় অন্য ফ্লোরের মালিকরা
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: বিজিএমইএ ভবনের চারতলার মালিক তারা। আর বাকি সব ফ্লোর বিক্রি করা হয়েছিল বিভিন্ন ক্রেতাদের কাছে। এখন এই ভবনটি ভেঙ্গে ফেলতেই হবে এর কোনো বিকল্প না থাকার কারণে ওই সব ক্রেতা বিপাকে পড়েছেন। তারা এখন অনেকটাই বিপদের মুখে। এই অবস্থায় তারা চাইলেও সঙ্গে সঙ্গে কোথাও স্থানান্তর করতে পারছেন না নিজেদের অফিস। আবার বিজিএমইএ-এর কাছ থেকে সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতিপূরণও পাচ্ছেন না। বিজিএমইএ তাদেরকে ক্ষতিপূরণ দিবে কিংবা তাদের কাছে যে টাকায় ফ্ল্যাট বিক্রি করা হয়েছিল ওই টাকা ফেরত দেওয়ারও কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়নি। তবে এটাও অনেকেই বলেছেন, বিজিএমইএ অনেক আগে থেকেই জানে যে তাদেরকে এই ভবন ভেঙ্গে ফেলতে হবে। এই অবস্থায় তারা এখন অফিস অন্যত্র স্থানান্তরের কথা বলে সময় নিয়ে কালক্ষেপণ করতে চাইছে। আবার সরকারের কাছে প্লট পাওয়ার চেষ্টা করতে চাইছে। সরকারের একজন মন্ত্রী বলেছেন, যখন আদালতের রায় হয়েছিল ওই ভবন ভাঙ্গার ব্যাপারে। তখন থেকে তাদের অন্যত্র সরে যাওয়ার এবং প্লট পাওয়ার চেষ্টা করার দরকার ছিল। আর এই ব্যাপারে সব প্রস্তুতি নেওয়ার দরকার ছিল। তারা তা নেয়নি। রিভিউর সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেছে। এখন রিভিউ খারিজ হওয়ার পর তারা বলছে এখন সময় চায়। এটা তাদের কালক্ষেপণ করা ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ বিজিএমইএ ভবন হওয়ার পর থেকেই এই ভবন ভাঙ্গার ব্যাপারে কথা উঠে। তারা অন্যায়ভাবে ভবন তুলেছে। আদালত ওই ভবন ভাঙ্গার নির্দেশ দিয়েছে। তারা দেশের আইনি প্রক্রিয়ার সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। এখন আবার রিভিউ খারিজ হওয়ার পর তারা সময় নিতে চাইছে। আদালতের আদেশের প্রতি তাদের সম্মান দেখানো উচিত। এছাড়াও তাদের কারণে যারা ফ্ল্যাট কিনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদেরকেও ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত।
আদালতের আদেশ ৯০ দিনের মধ্যে ভবন ভাঙ্গতে হবে। এখন তারা চায় সময়। তাদের সময় দেওয়ার প্রয়োজন আছে কিনা এই ব্যাপারে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, তাদেরকে সময় দেওয়া হবে কি হবে না এটা সম্পূর্ণ আদালতের ব্যাপার। আদালত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিবে।
বিজিএমইএ এর দাবি তাদেরকে সময় না দিলে পোশাক রপ্তানি খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এই বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই ব্যাপারে আমার কোনো মন্তব্য নেই। কারণ এই ঘটনাতো নতুন নয়। অনেক দিন ধরেই চলছে। আমি মনে করি এই ব্যাপারে আদালতের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। কারণ আদালতের আদেশেই কাজ হবে। তারা যেভাবে নির্দেশনা দিবেন সেইভাবে কাজ করা হবে।
বিজিএমইএ’এর নেতারা বলেছেন, তারা নতুন করে যে ভবনে স্থানান্তরিত হবে ওই ভবনে তাদেরকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। তবে তাদেরকে কি বিনা টাকায় অর্থাৎ আগের টাকায় নতুন ফ্ল্যাট দেওয়া হবে নাকি আগে তারা বিজিএমইএ ভবনের ফ্লোর যে টাকায় কিনেছিলেন সেই টাকা ধরা হবে। এখন নতুন করে যে ভবনে যাবে সেখানে নতুন দাম দিতে হবে, নতুন করে কিনতে হবে, এইসব বিষয় স্পষ্ট নয়। এই কারণে যারা বিজিএমইএ এর ফ্লোর কিনেছে তারা বিপাকে পড়েছেন। অনেকেই দিশেহারা।
এদিকে বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিজিএমইএও সহসাই তাদের অফিস স্থানান্তর করতে পারবে না। তাদের কমপক্ষে তিন বছরের সময়ের প্রয়োজন। বৃহস্পতিবার এই ব্যাপারে তারা তিন থেকে পাঁচ বছরের সময় চেয়ে আদালতের কাছে আবেদন জমা দিতে পারে। আর এই সময়ের মধ্যে তারা তাদের নতুন ভবন তৈরি করে সেখানে চলে যাওয়ারও অঙ্গীকার করবে বলে আদালতকে জানাতে পারে। বিজিএমইএ এখন কত দিনের সময় চাইবে, কি কি সুবিধা চাইবে সেই সব বিষয় নিয়ে আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করেই সিদ্ধান্ত নিবে।
এদিকে বিজিএমইএর সূত্র জানায়, তারা উত্তরা কিংবা পূর্বাঞ্চলে প্লট পাওয়ার জন্য চেষ্টা করছে। সেখানে প্লট পেলে সেখানে প্লট নিবে ও নতুন ভবন তৈরি করবে। এরপর সেখানে যাবে। জায়গা না পেলে তাদের আরও সময় লাগবে। এরমধ্যে তারা নতুন ভবন তৈরি করার জন্য সরকারের কাছেও প্লট চাইবে। সরকার তাদেরকে একটি প্লট দিবে বলেও তারা আশাবাদী।
এদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, বিজিএমইএকে তাদের কার্যালয় স্থানান্তরের জন্য সময় দেওয়া যেতে পারে। কারণ এখনই তাদের ভবন ভেঙ্গে ফেললে এতে করে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখিন হবেন। এছাড়াও বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার বেশিরভাগ আসে পোশাক রপ্তানি খাত থেকে। এখনই ভবনটি ভাঙ্গা হলে একটা অস্থিরতা তৈরি হতে পারে। এতে করে ওই খাতেও এই ব্যাপারে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এই অবস্থায় তাদেরকে সময় দেওয়ারও প্রয়োজন মনে করছেন তিনি।
আদালতে রিভিউ খারিজ হয়ে যাওয়ার পর এই ব্যাপারে সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী ও শিল্পমন্ত্রী এখনও তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেননি। তারা কি চাইছেন। তবে সরকারের ইচ্ছে সবদিক বিবেচনা করেই সেইভাবে আদালত ব্যবস্থা নিবে। আদালত যে সিদ্ধান্ত দিবে সেই অনুযায়ী কাজ করবে সরকার। যদিও গণপূর্তমন্ত্রী এর আগে বিজিএমইএ ভবন ও এর আশপাশে হাতিরঝিল এলাকা পরিদর্শন করেছেন। আদালতের চূড়ান্ত আদেশ হলে বিজিএমইএ ভবন ভেঙ্গে ফেলা হবে বলেও মন্তব্য করেছিলেন। বিজিএমইএ না ভাঙ্গলে রাজউক দিয়েও ভাঙ্গা হবে, সেই প্রস্তুতি রয়েছে তাও জানিয়েছিলেন। বলেছিলেন, তারা ৯০ দিনের মধ্যে না ভাঙ্গলে আমরা ভেঙ্গে দিব। সকল খরচ বিজিএমইএকে দিতে হবে। আর ভাঙ্গার জন্য র্যাঙ্গস ভবনের মতো পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে না। কোনো ক্ষতি ও প্রাণহানির কোনো ঘটনা ছাড়াই যাতে ভবনটি আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে ভাঙ্গা সম্ভব হয় সেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখনও তার পরিকল্পনা রয়েছে বিজিএমইএ ভবনটি নিজ দায়িত্বে ভাঙ্গবে। আর না ভাঙ্গলে তারা রাউজক দিয়ে ভেঙ্গে দিবে। তবে আদালত শেষ পর্যন্ত কি সিদ্ধান্ত দিবে তা দেখার জন্য অপেক্ষা করছেন। সম্পাদনা: রাশিদ