৭ মার্চ ও শেখ হাসিনা
ওয়ালিউর রহমান
আমরা ৭ মার্চের কথা শুনে বঙ্গবন্ধুর কথা চিন্তা করি। কারণ বঙ্গবন্ধু না থাকলে ৭ মার্চের ভাষণ হত না। ৭ মার্চের ভাষণ না হলে আমরা মুক্তিযুদ্ধের দিকে ধাবিত হতাম না। ৭ মার্চ বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। মার্চ বাঙালি জাতিকে পথ দেখিয়েছে। সেই ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলে দিয়েছেন কিভাবে পথে এগোতে হবে। সেই ভাষণেই বাঙালি জাতিকে সঠিক দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধু সেই ভাষণেই দেখিয়ে দিয়েছেন কিভাবে বাঙালি জাতির স্বাধীনতার দ্বার খুলে যাবে। ৭ মার্চের ভাষণে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করা থেকে বিরত থাকেন। কারণ সেটা হতো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী। কিন্তু তিনি তখন একটি কথা উচ্চারণ করেছিলেন সেই ঐতিহাসিক ভাষণে, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ সেদিন আমি সুইজারল্যান্ডের শহর জেনেভায় চাকরিরত। ভাষণটি আমরা সেখানে রেডিওতে শুনলাম। জর্জ ওয়াশিংটন ১৭৭৬ সালে যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা ঘোষণা করলেন তখন অনেক সমস্যার মাঝেই তিনি স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। যেহেতু অনেক আপত্তি ও অসুবিধা ছিল সেহেতু স্বাধীনতার পরে একটি সংবিধান রচনা করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এগারো বছর সময় পার হয়ে গেল। কিন্তু তিনি সজাগ ছিলেন কিভাবে আমেরিকাতে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে বাঁচিয়ে রাখা যায়।
বঙ্গবন্ধুর ভাষণে তিনি সবকিছু বলেছেন। আমেরিকা থেকে প্রকাশিত একটি গ্রন্থে বঙ্গবন্ধুর ভাষণকে পৃথিবীর মধ্যে একটি শ্রেষ্ঠ ভাষণ বলা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের মিত্রশক্তির সাহায্য নিয়ে বাঙালি জাতি পাকিস্তানের কাপুরুষ সামরিক বাহিনীকে পরাজিত করেছিল। ইতিহাস খুঁজলে অনেক কিছুই পাওয়া যায়। অনেকেই বলেন যে বাংলাদেশ আগেও স্বাধীন ছিল। সেন বংশ, পাল বংশ বহু বছর বাংলাদেশে রাজত্ব করেছে। কিন্তু তারা বাঙালি ছিল না। তারা ছিল উর্দু ভাষাভাষী। মূলত বাঙালির প্রথম স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু।
বঙ্গবন্ধুকে ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালে নির্মমভাবে হত্যার পরে বাংলাদেশ পতিত হয়েছিল অন্ধকারাচ্ছন অবস্থায়। সেটা ছিল বাঙালি জাতির অমানিশার সময়। বাংলাদেশ ২১ বছর কাটিয়ে দিল সেই অমানিশায়। বাঙালি জাতি রাগ করেছে, অভিমান করেছে, গোস্বা করেছে, চেষ্টা করেছে বিভিন্নভাবে সেই অমানিশাকে দূর করতে। ২৩ জুন ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর ৭ মার্চকে তিনি বাঙালির সামনে আবার নিয়ে আসলেন। ৭ মার্চকে ২১টি বছর লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। শেখ হাসিনা সেই ঐতিহাসিক ৭ মার্চকে আবারও বাঙালির সামনে নিয়ে এলেন।
যখন সেইন্ট অগাস্টিন ইতালিতে খ্রিস্ট ধর্ম প্রচার করেছিলেন, তারপর ইংল্যান্ড ও ইউরোপে তিনি তখন একটি কথা বারবার বলতেন যে পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা ও জেসাস ক্রাইস্ট, তাদের কথা প্রচারের জন্য উপাসনালয় পর্যন্ত পৌঁছাতে হবে না। আপনারা যেখানে রয়েছেন সেখান থেকেই তা প্রচার করতে পারেন। শেখ হাসিনা ৭ মার্চের ঐতিহ্য ও ইতিহাস প্রতিটি বাঙালির কাছেই সহজ ও বোধগম্য করে তুললেন। বাঙালির মানসে ৭ মার্চকে গেঁথে রাখার জন্য শেখ হাসিনা প্রতিবছর একই জায়গায় একই সময়ে ৭ মার্চ এর জনসভায় বঙ্গবন্ধুর মূল দর্শনকে বাঙালির সামনে নিয়ে আসেন। গোটা জাতির অগ্রভাগে এসে শেখ হাসিনা বাঙালি জাতিকে আবারও ঐক্যবদ্ধ করেন ৭ মার্চ। তিনি বিচ্ছেদ ভুলে এগিয়ে চলার অনুপ্রেরণা দেন নতুন করে সকলকেই। স্বাধীন বাংলাদেশ হলো আমাদের ভবিষ্যৎ।
বাংলাদেশ আজ পদ্মা সেতু নির্মাণ করছে নিজস্ব অর্থায়নে। নেপাল ও ভুটানে বাংলাদেশ অর্থ বিনিয়োগ করছে। খুব ক্ষুদ্র পরিসরে বেশকিছু বিষয় আমাদের মনে হলো যে শেখ হাসিনার আদর্শ ও নেতৃত্বেই এগিয়ে যাবে। ফরাসি বিপ্লবের অনেক পরে যখন দ্বিতীয় বিপ্লব শুরু হলো ১৮৪৮ সালে সেই বিপ্লবে রাজার পতন হলো, এম্পেররের পতন হলো আর সাধারণ জনগণ চেয়েছিল সেদিন মুক্তি আর স্বাধীনতা। ফরাসি কবি লামারতিন তখন লিখলেন খরনবৎঃু রং ঃযব ভরহবংঃ ষড়াব ংড়হম.
আজকের সেক্যুলার বাংলাদেশে শেখ হাসিনারই প্রয়োজন, তার নেতৃত্বের প্রয়োজন। তিনিই পারবেন বাংলাদেশীদের উন্নতির শিখরে নিয়ে যেতে। তিনি গণতন্ত্রকে রক্ষা করেছেন এবং আগামীতে রক্ষা করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। বিভিন্নভাবে বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তা হলো শেখ হাসিনার আদর্শ ও ভিশনের প্রতিফলন। নিশ্চয়ই বাংলাদেশ এভাবেই উন্নয়নের শীর্ষে পৌঁছে যাবে। উন্নয়নের পথে শেখ হাসিনার নেতৃত্বই পরিপূর্ণতা পাবে আমাদের স্বপ্নের যাত্রা।
লেখক: গবেষক, যুদ্ধাপরাধী বিচারের ট্রাইব্যুনালের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সহায়ক
সম্পাদনা: উম্মুল ওয়ারা সুইটি