সৌদি আরবের সঙ্গে পারস্পরিক নিরাপত্তা সহযোগিতা চান মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী
মারিয়াম ইসলাম: সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদের মালয়েশিয়া সফরকে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবেই দেখছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক।
সম্প্রতি আল আরাবিয়ার মহাব্যবস্থাপক তুর্কি আল দাখিল মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। সাক্ষাৎকারে রাজাক জানান, এই সফর মালয়েশিয়া ও সৌদি আরবের সম্পর্কোন্নয়ন ও নিরাপত্তা সহযোগিতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। আল আরাবিয়ার মহাব্যবস্থাপক তুর্কি আল দাখিল ও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের সাক্ষাৎকারটি নিচে তুলে ধরা হল:
তুর্কি আল দাখিল: দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদের এই সফর কি ভূমিকা রাখবে বলে আপনি মনে করেন?
নাজিব রাজাক: দুই পবিত্র মসজিদের রক্ষক সৌদি বাদশাহ সালমান মালয়েশিয়ায় তার রাষ্ট্রীয় সফর শেষ করেছেন। এশিয়ার মধ্যে মালয়েশিয়াতেই তিনি প্রথম সফর করেন। দীর্ঘ প্রতীক্ষার ওই সফরের গভীর মাত্রা ও প্রভাব রয়েছে।
দাখিল: সৌদি বাদশাহ সালমানের মালয়েশিয়া সফরের সময় আপনারা ঘনিষ্ঠভাবে তাকে দেখার সুযোগ পেয়েছেন, অপনি তার সঙ্গে সেলফিও তুলেছেন। তার নেতৃত্বকে আপনি কিভাবে দেখছেন?
রাজাক: সৌদি বাদশাহকে খুব কাছ থেকে জানতে পেরে আমি আনন্দিত। যে কোনো বিষয়েই তার সহজাত দক্ষতা ও আন্তরিকতা আমাকে মুগ্ধ করেছে। পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে তার ইচ্ছা মহান নেতৃত্ববাদের পরিচায়ক।
দাখিল: বৃহত্তর উপসাগরীয় সহযোগিতা কাউন্সিলও মালয়েশিয়া ও সৌদি আরবের মধ্যকার সহযোগিতার ক্ষেত্র কত বিশাল হবে?
রাজাক: মালয়েশিয়া ও উপসাগরীয় সহযোগিতা কাউন্সিলের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ হচ্ছে ৪৫ বিলিয়ন রিংগিত যা প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলারের সমান। বিনিময় বাণিজ্যের তালিকায় সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রথম ও সৌদি আরব দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। আমার বিশ্বাস অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের আরও উন্নতি হবে। সৌদি বাদশাহর সফর এবং পেট্রোনাস ও আরামকোর মধ্যে নতুন অংশীদারিত্বের চুক্তি স্বাক্ষরের ফলে এই সম্ভাবনা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও উভয় দেশে বেসরকারি খাতে ৯ বিলিয়ন রিংগিতেরও বেশি ব্যয় করা হবে।
দাখিল: অনেকের মতেই মালয়েশিয়া হচ্ছে সুশাসন ও উন্নয়নের সফল উদাহরণ। এই সফলতার পেছনের রহস্য কি?
রাজাক: ২০০৯ সালে যখন আমি ক্ষমতায় আসি তখন মালয়েশিয়া একটি মধ্যম আয়ের দেশ ছিল। এই অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য আমাদের একটি নতুন অর্থনৈতিক পরিকল্পনার প্রয়োজন ছিল। জাতীয় মুক্তি ও পরিবর্তন আনার জন্য অনেক সাহসের প্রয়োজন হয় এবং আমরা তাই করেছিলাম। ২০০৯ সালে আমাদের তেল নির্ভরতা ছিল প্রায় ৪১ শতাংশ, এখন এর পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ শতাংশে। আমরা অনেক সমালোচনারও শিকার হয়েছি কিন্তু হাল ছাড়িনি।
দাখিল: আরবের আর কোনো দেশের সঙ্গে কি মালয়েশিয়ার সমঝোতা চুক্তি ছিল?
রাজাক: অবশ্যই। ক্ষমতায় আসার পর আমি ‘বিমানডো’ নামের একটি ইউনিট তৈরি করেছি। এটি সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধনে কাজ করে। এই ইউনিটের সদস্যগণ উপসাগরীয় সহযোগিতা কাউন্সিলের অন্তর্ভুক্ত দেশ ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা জানাতেন।
দাখিল: মালয়েশিয়ার সফলতার পেছনে জাপান ও কোরিয়ার অবদান কতটুকু?
রাজাক: গত শতকের ৭০ ও ৮০ দশকে জাপান ও কোরিয়া অভূতপূর্ব উন্নতি সাধন করেছে। এই কারণে আমরা তাদের অর্থনৈতিক নীতি অনুসরণ করেছি। এমনকি আমরা অনেককে পড়াশুনা করতে জাপান ও কোরিয়া পাঠিয়েছি।
দাখিল: মালয়েশিয়ার শিক্ষার্থীরা কি এখনো জাপানে পড়াশুনা করতে যায়?
রাজাক: জি, আমাদের শিক্ষার্থীরা জাপান ও কোরিয়ার পাশাপাশি প্রায় সব দেশেই পড়তে যাচ্ছে।
দাখিল: মালয়েশিয়ার অর্থনৈতিক সাফল্যের পেছনে ধর্মীয় ও জাতিগত বৈচিত্রের অবদান কতটুকু?
রাজাক: মালয়েশিয়া বহু জাতি, ধর্ম ও সংস্কৃতির দেশ। সমস্যা কিছু হয়েছে অবশ্যই তবে সবকিছুর ঊর্ধ্বে ‘এক মালয়েশিয়া’ নীতিতে আমরা কাজ করেছি এবং সাফল্য অর্জন করেছি।
দাখিল: প্রধানমন্ত্রী, বর্তমানে মালয়েশিয়ায় দারিদ্র্যতা ১ শতাংশেরও কম। এই অর্জন কিভাবে সম্ভব হলো?
রাজাক: এই ব্যাপারটা আরও চমকপ্রদ। স্বাধীনতা অর্জনের পরে এই সংখ্যাটা ছিল ৬০ শতাংশেরও বেশি। ২০১৫ তে এটি ০.৬ শতাংশে নেমে আসে। সবাই যাতে সমভাবে সব সুযোগ সুবিধা পায় আমরা সেদিকে খেয়াল রেখেছি।
দাখিল: বেকারত্বের বিরুদ্ধেও আপনি সফলভাবে কাজ করেছেন। এর পেছনের রহস্য কি?
রাজাক: আমরা বেসরকারি খাতকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। আমরা অত্যন্ত দক্ষ নাগরিকদের জন্য চাকরির বাজারকে প্রসারিত করেছি।
দাখিল: সন্ত্রাসী হামলা থেকে নিজেদের কিভাবে সুরক্ষিত করছেন?
রাজাক: যে কোনো ধরনের চরমপন্থী ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমরা অত্যন্ত কঠোর অবস্থান নিয়েছি। কিছু নতুন আইনও পাস করানো হয়েছে। কিছু সক্রিয় নীতির কারণে একটি ছোট ঘটনা ছাড়া মালয়েশিয়ায় এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেনি।
দাখিল: কোন ঘটনার কথা বলছেন?
রাজাক: আইএসের নীতিতে উদ্বুদ্ধ হয়ে কিছু মানুষ একটি নাইট ক্লাবে গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। সামান্য হতাহত ছাড়া আর কোনো ক্ষতি হয়নি। আমরা প্রায় ২৭০ জনকে গ্রেফতার করি।
দাখিল: সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ার অবস্থান কি?
রাজাক: সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কাজ করা দেশগুলোকে আমরা সহযোগিতা করছি। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আমরা বিভিন্ন ধরনের গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় করে সহায়তা করছি। দক্ষিণ থাইল্যান্ডে শান্তি আনয়নে আমরা তাদের সরকারকে সহযোগিতা করছি। সিরিয়া ও ইরাকে আইএসের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়াও সামনে থেকে যুদ্ধ করছে।
দাখিল: প্রধানমন্ত্রী, কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতার কিম জং উনের সৎভাই কিম জং ন্যামের হত্যা রহস্য সমাধানে আপনারা কতদূর এগিয়েছেন?
রাজাক: কিম জং ন্যামকে হত্যা করতে ভিএক্স এজেন্ট নার্ভ নামের একটি রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়েছে। যা স্নায়ুতে আঘাত করে। এটি জাতিসংঘ নিষিদ্ধ ঘোষিত ও মারাত্মক রাসায়নিক উপাদান। মৃতের পরিচয় জানার জন্য আমরা একটি ডিএনএ পরীক্ষা করেছি। মৃতের পরিচয় সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা মৃতদেহ হস্তান্তর করতে পারছি না বলে রাখা ভাল, যে অপরাধটি মালয়েশিয়ায় করা হয়েছে এবং যে রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে তার ফলে আরও মানুষের জীবন যেতে পারতো। অতএব, দোষীকে খুঁজে বের করে এর যথাযোগ্য শাস্তি প্রদান করা হবে। আল আরাবিয়া, সম্পাদনা: রবিউল্লাহ