ঘরের মাঠে ক্রিকেট ফেরায় পাকিস্তানে স্বস্তি ও উচ্ছ্বাস
লিহান লিমা: দীর্ঘ ৭ বছরের কালো অধ্যায়ের পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নতুন করে প্রাণ পেয়েছে পাকিস্তানের মাটিতে। ২০০৯ সালে লাহোরে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট দলের ওপর সন্ত্রাসী হামলার পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নির্বাসন দেয় পাকিস্তানের মাটিকে। পাকিস্তান সুপার লীগ (পিএসএল) ফাইনালের মাধ্যমে সেই লাহোরেই খেলেছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকারা। দ্য নিউজ, জিও নিউজ, ডন, ডেইলি টাইমস
দীর্ঘদিন পর ঘরের মাঠে ক্রিকেট ফেরায় উচ্ছ্বাস ও স্বস্তি প্রকাশ করছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, রাজনীতিবিদ, মানবাধিকার কর্মী, ক্রিকেটারসহ সাধারণ নাগরিকরা। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ বলেন, ‘পাকিস্তান আরো শক্তিশালী, নিরাপদ, সক্ষম ও ঐক্যবদ্ধ। পিএসএলের ফাইনালেই সব ভয় দূর হয়ে গেছে। পাকিস্তান সব সংকীর্ণতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের শক্তি অর্জন করেছে। বিচ্ছিন্নতার অবসান হয়েছে, এটি বিশ্বের কাছে আমরা প্রমাণ করেছি। পিএসএল ফাইনাল পাকিস্তানের ক্রিকেটে ফেরার প্রথম ধাপ, ইতিবাচক ভবিষ্যত অপেক্ষমান।’ পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড এবং সুপার লিগের চেয়ারম্যান নিজাম শেঠি বলেন, ‘পিএসএল এর ফাইনাল পাকিস্তানের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের দরজা খুলে দিয়েছে। পিসিবি এই বছরের শেষের দিকে বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কান দলের পাকিস্তানে খেলার বিষয়ে আলোচনা করবে। বাংলাদেশ, শ্রীলংকা, অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ডের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা পাকিস্তানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রত্যক্ষ করেছেন।’
পাকিস্তানের নারী শিক্ষা আন্দোলন কর্মী ও নোবেল পুরস্কার বিজয়ী মালালা ইউসুফজাই ভবিষ্যতে পিএসএল এর সব ম্যাচ লাহোর, করাচি, পেশোয়ার, কোয়েটাসহ পাকিস্তানের সব শহরেই হবে বলে আশা প্রকাশ করেন। ভিডিও বার্তায় লন্ডন থেকে নিজাম শেঠিকে ধন্যবাদ জানিয়ে মালালা বলেন, ‘আমাদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দান করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।’ এসময় মালালা পাকিস্তানে আসা সব বিদেশি ক্রিকেটারদের স্বাগত এবং বিজয়ী পেশোয়ার জালমিকে শুভেচ্ছা জানান।
পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী মারিয়াম আওরাঙ্গজেব বলেন, ‘গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে আবার ক্রিকেট ফিরে এসেছে। আমাদের হৃদয় এখন ভালবাসা আর সাহসিকতায় পরিপূর্ণ, যা কাপুরুষত্ব এবং ঘৃণাকে পরাজিত করতে যথেষ্ঠ। পিএসএল আমাদের কাছে নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ ছিল। আমরা এটি ভালভাবে সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছি। পিএসএল আমাদের ঐক্য এবং প্রতিশ্রুতি রক্ষার প্রতীক।’ এমনকি বলিউড সুপারস্টার ঋষি কাপুরও পিএসএর এর বিজয়ী দলকে অভিনন্দন জানান, এবং বলেন, তিনি জালমি’র একজন ভক্ত।
খায়বার প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পাখতানখুয়া পারভেজ খাতাক এই বিজয়ে আশা প্রকাশ করেছেন। জাতিসংঘে পাকিস্তানের দূত মালিহা লোদি বলেন, ‘লাহোরে পিএসএল ফাইনাল পাকিস্তানের জন্য গর্বের বিষয়। কোন অপ্রীতিকর ঘটনা আর ঘটতে দেওয়া হবে না।’
পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ বলেছেন, ‘লাহোরে অনুষ্ঠিত পিএসএল ফাইনাল সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতির প্রমাণ। ২০১৭’র পাকিস্তান আরো নিরাপদ, সমৃদ্ধ এবং অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী।’
ফাইনাল ম্যাচের আগে পাকিস্তান জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক খেলোয়াড় এবং অধিনায়ক ইমরান বলেন, ‘হে আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করো। যদি খারাপ কিছু ঘটে তবে পরবর্তী কয়েক দশকের জন্য পাকিস্তান থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট হারিয়ে যাবে।’
দেশটির প্রবীণ রাজনীতিবিদ জাভেদ হাশমি পাকিস্তানের ক্রিকেট ফেরার এই মুহুর্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ক্রিকেটের প্রতি সমর্থন জানাতে ইমরান খানের স্টেডিয়ামে যাওয়া উচিত। তবে ফাইনালের দুই দল কোয়েটা গ্যাডিয়েটরস ও পেশোয়ার জালমির হয়ে খেলা কেভিন পিটারসন, টাইমাল মিলস, লুক রাইট, নাথান ম্যাককালাম, ক্রিস গেইল, কুমার সাঙ্গাকারা ও কাইরন পোলার্ডের মত তারকারা নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। পিএসএল এর মূল সম্প্রচার সংস্থা গাদ্দাফি স্টেডিয়াম থেকে খেলা সম্প্রচারে অস্বীকৃতি জানায়। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের টেস্ট ম্যাচ থাকায় দেশে ফিরে আসেন পেশোয়ার জালমির হয়ে খেলা বাংলাদেশের দুই ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল, কোয়েটার হয়ে খেলা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। উইকেটকিপার এনামুল হক বিজয় জালমির হয়ে পেশোয়ার খেলেন।
অবশেষে, অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে ১৫ হাজারেরও বেশি নিরাপত্তারক্ষীর কড়া পাহারায় শেষ হয় পিএসএল ফাইনাল। সম্পাদনা: রাশিদ