দুই বাংলার লোকগানের জনপ্রিয় শিল্পী কালিকাপ্রসাদ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত
রাশিদ রিয়াজ: ভারত ও বাংলাদেশে জনপ্রিয় লোকশিল্পী কালিকাপ্রসাদ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় গানের দল দোহারের এই শিল্পী বীরভূমের সিউড়িতে অনুষ্ঠান শেষে কলকাতায় ফেরার পথে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বর্ধমানের গুড়াপ এলাকার কাছে সড়ক দুর্ঘটনায় পড়েন।
সদ্য মুক্তি পাওয়া ‘ভুবন মাঝি’ চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন কালিকাপ্রসাদ। গত ৩ মার্চ বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে ছবিটি মুক্তি পায়। তার
এ মৃত্যুসংবাদে দুই বাংলার সঙ্গীত ভূবনে শোকের ছায়া নেমে আসে। ‘ভুবন মাঝি’ সিনেমার মুক্তি উপলক্ষে ১ মার্চ ঢাকার বসুন্ধরা স্টার সিনেপ্লেক্সে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কালিকা। সে সময় তিনি কথা বলেছিলেন বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে। আর এখন তিনি প্রয়াত তা যেন কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না তার শুভাকাঙ্খিরা।
বীরভূমের সিউড়িতে অনুষ্ঠান শেষে কালিকা ও তাঁর দলের ৫ সদস্য কলকাতায় ফিরছিলেন। তাঁদের বহনকারী গাড়িকে পেছন থেকে আরেকটি গাড়ি ধাক্কা দিলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তাঁদের গাড়ি উল্টে যায়। কালিকাপ্রসাদ ও বাকি পাঁচজনকে স্থানীয় এলাকাবাসি ও গুড়াপ থানার পুলিশ উদ্ধার করে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর কালিকাপ্রসাদ মারা যান। বাকি পাঁচজনের অবস্থাও গুরুতর। এরা হলেন, নীলাদ্রি রায়, অর্ণব রায়, সন্দীপন পাল, সুদীপ্ত চক্রবর্তী ও রাজীব দাস। আহতদের মধ্যে তিন জনের অবস্থা সঙ্কটজনক।
কালিকাপ্রসাদের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার বিকেলে কালিকাপ্রসাদের মরদেহ নিয়ে আসা হয় তাঁর সন্তোষপুরের বাড়িতে। পথে নবান্নের সামনে তাঁকে শ্রদ্ধা জানান মুখ্যমন্ত্রী। এরপর তাঁর দেহ রবীন্দ্রসদনে নিয়ে আসা হয়। সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত কালিকাপ্রসাদের দেহ সেখানে রাখা হয়। মঙ্গলবার রাতেই তাঁর শেষকৃত্য হয় কেওড়াতলা শ্মশানে। পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে হুগলির গুড়াপের কাছে টিম-দোহারের গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি নয়ানজুলির ভিতর উল্টে যায়। সকলকে উদ্ধার করে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা কালিকাপ্রসাদকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
সোমবার সন্ধ্যায় বাগুইআটিতে অনুষ্ঠান ছিল দোহারের। সেখানে গান গেয়েছিলেন কালিকাপ্রসাদ। একই দিন বীরভূমের সিউড়িতে তাঁদের অনুষ্ঠান ছিল। সকাল সাতটা নাগাদ কলকাতা থেকে বেরিয়েছিল টিম-দোহার। পুলিশের দাবি, পথে গুড়াপের কাছে রাস্তার ধারে পুঁতে রাখা লোহার বিমে দোহারের গাড়িটি গিয়ে ধাক্কা মারে। এর পর প্রায় গাড়িটি ৯০ ফুট পর্যন্ত ছিটকে যায়। তারপর রাস্তার ডান দিকে ডিভাইডারের লোহার পাতে কোনও ভাবে গাড়ির সামনের ডান দিকের চাকার টায়ার ফেঁসে যায়। পরে সেই চাকা খুলে গাড়িটি নয়ানজুলির ভিতর উল্টে যায়। যে জায়গায় দুর্ঘটনা হয়েছে, সেখান থেকে মাত্র কুড়ি কিলোমিটার দূরে মাস কয়েক আগে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ভয়াবহ সেই দুর্ঘটনাতেও তাঁর গাড়ি উল্টে যায়। সে যাত্রায় প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন অভিষেক। অসমের শিলচরে কালিকাপ্রসাদের জন্ম ১৯৭০-এ। সেখানেই স্কুল-কলেজের পাঠ সেরে কলকাতার যাদবপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা। ১৯৯৯তে গানের দল দোহার গড়ে তোলেন। লোকগানই গাইতেন কালিকাপ্রসাদ। তার আকস্মিক মৃত্যুর খবর বিশ্বাস করতে পারেনি তাঁর পরিবার এবং সংস্কৃতি জগৎ। শোকপ্রকাশ করেছেন কবীর সুমন, শ্রাবণী সেন, উষা উত্থুপ, রূপঙ্কর, সুরজিৎ চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ।