প্রশাসনের উচ্চ পদে মাত্র সাড়ে ১১ ভাগ নারী
আনিসুর রহমান তপন : প্রশাসনের সর্বোচ্চ সচিব বা সচিব পদমর্যাদার পদ রয়েছে ৭৮টি। এসব পদের মধ্যে মাত্র নয়টি পদে রয়েছে নারী সচিব কর্মকর্তা। যা মোট পদের শতকরা মাত্র সাড়ে ১১ ভাগ। বর্তমান সরকার নারীকে সামনে দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে। সেই সঙ্গে নারীর উন্নয়নেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন উদ্যেগ নিয়েছেন। তবে এই সব উদ্যোগ নিলেও প্রশাসনের উচ্চ পদে এখনও এর তেমন প্রভাব পড়তে শুরু করেনি। কেবল সেখানে নারীদের অবস্থান ধীরে ধীরে তৈরি হচ্ছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীলরা মনে করছেন, বর্তমান সরকার জে-ার বৈষম্য দূরীকরণে অঙ্গীকারাবদ্ধ। সরকারের সকল ক্ষেত্রে যাতে নারীর অংশ গ্রহণ নিশ্চিত করা যায় সেজন্য সরকারি বিভিন্ন নিয়োগে কোটা পদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে নিয়োগ দিতে তৎপর রয়েছে প্রশাসন।
প্রশাসন সূত্র জানায়, পুরুষের পাশাপাশি প্রায় সব ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে নারী। মাঠে কৃষি কাজসহ সামরিক-বেসামরিক কর্মক্ষেত্রে রয়েছে নারীর সক্রিয় অংশ গ্রহণ। বর্তমান সময়ে সরকারের নেয়া বিভিন্ন কর্মসূচির কারণে কর্মক্ষম নারীর সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে নারীর অর্থনৈতিক সক্ষমতা। আর এতে এগিয়ে যাচ্ছে নারী সঙ্গে বাংলাদেশ। তারপরও কর্মক্ষেত্রে নারীর অধিক অংশ গ্রহণের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার নিয়েছে নানামূখী উদ্যোগ। পাশাপাশি একই উদ্যোগ নিয়েছে বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা (এনজিও)। তবে রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতে নারীর অংশ গ্রহণ আগের থেকে বেশি হলেও প্রশাসনে এখনও নারীর অংশ গ্রহণ তেমনটি ঘটেনি। ফলে প্রশাসনের সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর অংশগ্রহণও কম।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এখন প্রশাসনের সর্বোচ্চ সচিব বা সচিব পদমর্যাদার পদ ৭৮টি। এসব পদের মধ্যে মাত্র নয়টি পদে রয়েছে নারী সচিব কর্মকর্তা। এদের মধ্যে সিনিয়র সচিব সুরাইয়া বেগম প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে, ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব পদমর্যাদা) মুশফেকা ইকফাত, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসিমা বেগম, জাতীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমির মহাপরিচালক (সচিব পদমর্যাদা) কানিজ ফাতেমা, প্রবসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব বেগম শামছুন নাহার, গভ. এমপ্লয়ী ওয়েলফেয়ার বোর্ড এর মহাপরিচালক (সচিব পদমর্যাদা) শিরিন আক্তার, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমশিনের সচিব আকতারী মমতাজ, বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (সচিব পদমর্যাদা) হোসনে আরা বেগম ও প্ল্যানিং কমিশনের সদস্য (সচিব পদমর্যাদা) হিসেবে কর্মরত আছেন জুয়েনা আজিজ। এছাড়াও প্রশাসনের শীর্ষ পর্যয়ে অতিরিক্ত সচিব পদে কর্মরত আছেন আরো ৭৬ জন নারী কর্মকর্তা।
তবে প্রশাসনে এখনও পুরুষ কর্মকর্তার তুলনায় নারী কর্মকর্তার অংশ গ্রহণ অপর্যাপ্ত রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন সচিব ড. মোজাম্মেল হক খান আমাদের অর্থনীতিকে জানান, বর্তমান সরকার জে-ার বৈষম্য দূরীকরণে অঙ্গীকারাবদ্ধ। সরকারের সকল ক্ষেত্রে যাতে নারীর অংশ গ্রহণ নিশ্চিত করা যায় সেজন্য সরকারি বিভিন্ন নিয়োগে কোটা পদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে নিয়োগ দিতে তৎপর রয়েছে প্রশাসন। রষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদে যেমন. প্রধানমন্ত্রী, স্পীকার, বিরোধী দলীয় নেত্রী, সংসদ উপনেতাসহ মন্ত্রীসভায়ও কয়েক জন নারী সদস্য নিয়োগ দিয়েছে বর্তমান সরকার। চাকুরী ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতি পূর্ণ অনুসরণ করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত যত সরকার ছিল তাদের মধ্যে বর্তমান সরকার নারীর ক্ষমতায়নে অধিকতর আন্তরিক। এসব কারণেই প্রশাসনের শীর্ষ পদে সচিব হিসেবে আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে নারী কর্মকর্তা অনেক বেশি। সচিব পদে বর্তমান সময়ের তুলনায় পূর্বে কখনই এত নারী কর্মকর্তা প্রশাসনে কর্মরত ছিলেন না। বর্তমান সরকার নারীর ক্ষমতায়নে অনেক বেশি কাজ করছে। একারণে প্রশাসনে নারী কর্মকর্তার অবস্থান আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। সম্পাদনা: নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী