মাহমুদুল হাসান রতন, ময়মনসিংহ : চার ভাইবোনের মধ্যে তৃতীয় মোস্তফা কামাল। ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার পূর্ব পাগলী গ্রামের নিম্নবিত্ত এক পরিবারের সদস্য সে। পরিবারের সে-ই একমাত্র মাদ্রাসা-পড়ুয়া। নরসিংদীর শেখের চরের জামিয়া এমদাদিয়া মাদ্রাসার ছাত্র সে। মাদ্রাসায় পড়ার সুবাদে বাড়িতে যাতায়াত কমিয়ে দেয়। পড়াশুনার খরচা বাবদও প্রতি মাসে পরিবার থেকে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫শ টাকা বিকাশের মাধ্যমে নিতো।
গত ১০ ফেব্রুয়ারি মাদ্রাসা থেকে ছুটি নেয় সে। বাড়ি ফেরার কথা বলে যাতায়াত ভাড়া বাবদ বিকাশের মাধ্যমে বাড়ি থেকে আরো ৫শ টাকা দিতে বলে। বড় ভাই সেই টাকা পাঠিয়ে দিলেও বাড়ি ফেরেনি কামাল। শুধু বলেছিল, বন্ধুর বাড়িতে বেড়ানো শেষে ক’দিন বাদেই বাড়ি ফিরবে। কিন্তু এরপর তার আর কোনো হদিস ছিল না। মাদ্রাসা থেকে ছুটি নিয়ে বাড়ি ফেরার কথা বলেই জঙ্গি মিশনের জন্য লাপাত্তা হয়ে যায় কামাল। এর ২০ দিন পর প্রকাশ্যে আসে গাজীপুরের টঙ্গিতে প্রিজন ভ্যানে ককটেল ছুঁড়ে নিষিদ্ধঘোষিত হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের (হুজিবি) প্রধান মুফতি আব্দুল হান্নান ও তার সহযোগীদের ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টার নেতৃত্বদানকারী এ জঙ্গি। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। পুলিশ ও জনতার সম্মিলিত চেষ্টাতেই ধরা পড়তে হয়েছে তাকে। এ ঘটনায় হতবাক তার পরিবারের সদস্যরা।
গতকাল সকালে ময়মনসিংহ জেলা ও টঙ্গি থানা পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য।
ওসি মাজাহারুল হক বলেন, ‘কামালের পরিবার নিম্নবিত্ত। কামাল কীভাবে জঙ্গিবাদের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে ফেললো এবং বড় রকমের নাশকতার পরিকল্পনায় নেতৃত্ব দিলো তা বুঝে উঠতে পারছে না তার পরিবারের সদস্যরা। কামালের এমন অপকর্মে তারা স্তম্ভিত, অনুতপ্ত।’
পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জঙ্গি মোস্তফা কামাল জানিয়েছে, সে ‘আল্লাহ’র পথে’ বের হয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদের শুরু থেকেই সে তথ্য লুকানোর চেষ্টা চালায় বলে জানান টঙ্গি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ তালুকদার। তিনি বলেন, ‘কামালের ন্যাশনাল আইডি কার্ডে ছবি ঠিক থাকলেও ঠিকানা লিখিয়েছে কুষ্টিয়া। মাদ্রাসা থেকে নিখোঁজ হবার আগেই সে জঙ্গিবাদের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে ফেলে এবং সামরিক বিভাগে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ নেয়।’ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই তার সহযোগীদের নাম বেরিয়ে আসবে বলে মনে করেন ওসি ফিরোজ। সম্পাদনা: এনামুল হক