নারী দিবসে বিমান ঢাকা-সিলেট-ঢাকা রুটে ডানা মেলবে ক্যাপ্টেন তানিয়া রেজার নেতৃত্বে
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষে ৮ মার্চ নারী পাইলট, ফার্স্ট অফিসার, কেবিন ক্রু, ইঞ্জিনিয়ার ও গ্রাউন্ড স্টেশনের হ্যান্ডেলিং সব কিছুই নারীদের দিয়ে করাতে চাইছেন। এই জন্য আজ বিমানের ঢাকা-সিলেট-ঢাকা রুটের ফ্লাইটি নারী কর্মীদের দ্বারা পরিচালতি হবে। ফ্লাইট চালিয়ে সিলেটে নিয়ে যাবেন বিমানের পাইলট ক্যাপ্টেন তানিয়া রেজা। তিনি জনপ্রিয় নায়ক ফেরদৌসের স্ত্রী। তিনি বিমানের একজন সফল পাইলট হিসাবে নিজেকে ইতোমধ্যে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন। একজন নারী হিসাবে পেশাগত ক্ষেত্রে নানা প্রতিকূলতা কাটিয়ে এই পর্যন্ত এসেছেন। তবে বিমান কর্তৃপক্ষ তাকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিয়েছেন বলেই বিমান তাকে এই দায়িত্ব দিয়েছে। বিমানের এই উদ্যোগকে বিমানের নারী কর্মীরা স্বাগত জানিয়েছেন। আগামী দিনে নারীরা আন্তর্জাতিক রুটের ফ্লাইটেও এককভাবে ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারবেন বলে আশাবাদী।
বিমানের সূত্র জানায়, ঢাকা-সিলিট-ঢাকা রুটের ফ্লাইটটি পরিচালিত হবে বোয়িং-৭৩৭ উড়োজাহজ দিয়ে। এর আসন সংখ্যা ১৭৭। ফ্লাইটে যাত্রী যাচ্ছেন ১৬২ জন। ফ্লাইট নম্বর বিজি ৬০৩। এর আগে বিমান কখনো এই ধরনের ফ্লাইট পরিচালনা করেনি। এবারই প্রথম। এটা বিমানের ইতিহাসে নতুন একটি অধ্যায় লিখতে যাচ্ছে। এই উপলক্ষে বিমানের তরফ থেকে আজ সকাল পৌনে দশটায় একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। ফ্লাইটটি ঢাকা থেকে সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে।
বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোসাদ্দেক আহমেদ গণমাধ্যমকে জানান, এভিয়েশন খাতে নারীদের আরও আগ্রহী করে তোলার এটি একটি চেষ্টা। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশের নারীরা যে এগিয়ে যাচ্ছে সেই বার্তা সবার কাছে পৌঁছে দিতে চাই। বিমানের নারী পাইলটরা সবসময় তাদের দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছেন। দেশের নারীরাও এভিয়েশন খাতে সফল। এটাও তুলে ধরার প্রয়াস এটি। সরকার নারীদের ক্ষমতায়নে বিশেষভাবে গুরত্ব দিচ্ছে। পুরুষ কর্মীদের পাশাপাশি নারীরাও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। বিমান নারীদের সুষ্ঠু ও সুন্দর কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করে। এটাও জানানো প্রয়োজন। সেই জন্য আমাদের এই প্রয়াস। আমরা আশা করছি দেশে ও বিদেশে সবার কাছে বাংলাদেশের নারীদের এই অবদানের কথা পৌঁছে যাবে।
বিমানের জেনারেল ম্যানেজার শাকিল মিরাজ বলেন, এই প্রথম নারী কর্মীদের দিয়ে পুরো ফ্লাইট পরিচালনার উদ্যোগ হলেও আমরা চেষ্টা করছি অত্যন্ত নিখুঁতভাবে ও সফলভাবে ফ্লাইটটি পরিচালনা করার জন্য। এটি এমনিতে সাধরণ ফ্লাইট হলেও বিমানের নারী কর্মীদের দ্বারা পরিচালিত হওয়ায় বিশেষ ফ্লাইটে পরিনত হয়েছে। ফ্লাইটটি পরিচালনা করবেন তানিয়া রেজা। ফার্স্ট অফিসার থাকছেন অন্তরা।
বিমানের নারী প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া কেবিন ক্রুও থাকবেন ছয়জন। তারা সবাই নারী। এর পাশাপাশি গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের দায়িত্বে থাকছেন নারীরা। ফ্লাইটটি ঢাকা থেকে যাত্রী পরিবহন করে নিয়ে যাওয়ার পর আবার সিলেট থেকে ঢাকায় ফিরে আসবে।
এদিকে, আজ বিকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাকার্তা থেকে দেশে ফেরার কথা রয়েছে। তিনি ফেরার কারণে বিমানবন্দরে নেওয়া হয়েছে বাড়তি সতর্কতা। এই কারণে বিমান নিরাপত্তাজনিত কারণেই যতখানি সম্ভব অনুষ্ঠানটি সীমিত পরিসরেই করছেন। তবে তারা মিডিয়া কর্মীদের উপস্থিতি কামনা করছেন।
শাকিল মিরাজ বলেন, বাংলাদেশে নারীরা অনেক এগিয়ে এসেছেন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের অবদান রয়েছে। বিমানেও রয়েছে। আর সেই নারীরা বিমানের সিলেটের ফ্লাইটটি পরিচালনা করবেন।। বিমানে ১৪০ জন পাইলট। এর মধ্যে নারী পাইলট ৯ জন। বিমানের গ্রাউন্ড সার্ভিস, প্রকৌশলসহ বিভিন্ন বিভাগে নারীরা দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন। তারা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলছেন। সেটা আমরা তুলে ধরতে চাইছি।
২০০০ সালে ক্যাপ্টেন তানিয়া রেজা বিমানে যোগ দেন। তিনি এফ ২৮, ডিসি-১০, এয়ারবাস-৩১০, বোয়িং-৭৭৭ উড়োজাহাজ চালিয়েছেন। ৬ হাজার ঘণ্টা উড়োজাহাজ চালানোর অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। এখন তিনি বোয়িং-৭৩৭ উড়োজাহাজের ক্যাপ্টেনের দায়িত্ব পালন করছেন। তার মামারা ছিলেন পাইলট। আর তাদের দেখেই ছোটবেলা নিজে পাইলট হওয়ার আর আকাশে উড়ার স্বপ্ন দেখতেন। সেই স্বপ্ন সফল করতে সক্ষম হয়েছেন পরিবারের কারণেই। তিনি মনে করেন, নারীদের এগিয়ে যেতে আগে নিজের ইচ্ছার প্রয়োজন। এর সঙ্গে পরিবারের সহায়তা। তা থাকলে পথচলা মসৃণ হয়। এদেশের এভিয়েশন খাতে নারীরা বাধার সম্মুখীন হয়নি। তারা অনেক আগে থেকেই দক্ষতার সঙ্গে এই খাতে অবদান রাখছেন।