মুক্তিযুদ্ধে নারীর অবদান সঠিকভাবে স্থান পায়নি
উম্মুল ওয়ারা সুইটি: স্বাধীনতা যুদ্ধের ৫০ বছর পূর্ণ হতে আর কয়েক বছর বাকি। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী অনেকেই এরমধ্যে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। দফায় দফায় মুক্তিযুদ্ধের তালিকা হচ্ছে। অথচ নারীদের বিষয়টি অবহেলিতই রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসেও নারীদের শুধু নির্যাতিতা হিসেবে দেখানো হয়েছে। কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রে নারীরা অংশ নিয়েছে এবং দেশের ভেতরে খাবার সংগ্রহ, অস্ত্র সংগ্রহসহ বিভিন্নভাবে নারীদের অংশগ্রহন রয়েছে। সেখানে নারীর কথাই উল্লেখ নেই। মুক্তিযুদ্ধে নারীর অবদান ইতিহাসে যথাযথভাবে তুলে ধরার আহ্বান জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্টজনরা। তারা বলেছেন, বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার। মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা তিনি বাড়িয়েছেন। কিন্তু নারী মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান স্পষ্ট হয়নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি অধ্যাপক মাহফুজা খানম বলেন, উনিশ শতকে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনেও নারীরা সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন। এরপর থেকে বঙ্গভঙ্গ, ভাষা আন্দোলনসহ ৫০ ও ৬০ এর দশকের সবগুলো আন্দোলন সংগ্রামে নারীর অংশগ্রহণ ছিল অগ্রভাগে। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেছে এমন নারী খুঁজে পাওয়া যায় না। ভারতের বিভিন্ন ক্যাম্পে নারীরা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। অথচ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নারীর স্থান নেই ইতিহাসে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধে নারীর বিষয় মানেই হলো নির্যাতিত হয়েছেন নারী। তারপর একটা নাম জুড়ে দেওয়া হয়েছে বীরাঙ্গনা। এই শব্দটি বাদ দিয়ে নারীকে মুক্তিযোদ্ধা বলতে সমস্যা কোথায়? ছেলেরাও অনেকেই ট্রেনিং করেছেন-কিন্তু সশস্ত্রযুদ্ধে অংশ নেওয়ার সুযোগ পায়নি। প্রস্তুতি নেওয়ার সময়েই দেশ স্বাধীন হয়ে গেছে। তারা প্রত্যেকেই মুক্তিযোদ্ধা। আর যেসব মেয়ে ট্রেনিং নিয়েছেন তারা কেন মুক্তিযোদ্ধা হতে পারবে না। আমি মনে করি নারীর অবদানকে পাশকাটিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পূর্ণ করা যাবে না।
মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ডা. হাসান মাহমুদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে নারীকে তার যোগ্য স্থানে বসানোর সময় এখনই। ইতিহাসকে পূর্ণরূপ দিতে হলে এই খুঁতটুকু মুছে দিতে হবে। ইতিহাসে নারী মুক্তিযোদ্ধা ও এ দেশের নারী সমাজের অনবদ্য অবদানের কথা থাকতে হবে। সরকারি উদ্যোগে প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধের ১৬ খ- গ্রন্থেও নারী মুক্তিযোদ্ধাদের কোন তথ্য নেই। সেখানেও নারীর ভূমিকা চিত্রিত হয়েছে শুধু নির্যাতিতা হিসেবে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে নারীর ভূমিকা সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে।
বিশিষ্টজনরা বলেন, সহযোগী হিসেবে কোথাও নারীরা মুক্তিযোদ্ধাদের রান্না করে খাইয়েছে, অস্ত্র লুকিয়ে রেখেছে, আশ্রয় দিয়েছে, তথ্য সংগ্রহ করে দিয়েছে এর বেশি কিছু নয়। এ দেশের নারী মুক্তিযোদ্ধারা স্বাধীনতার ইতিহাসে যেমন উপেক্ষিত, রাষ্ট্রীয় এবং সমাজ জীবনেও তাদের কেউ যথাযথ সম্মান দেয়নি। শুধু মুক্তিযুদ্ধই নয়, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে প্রতিটি ধাপে ছিল নারীর সরব উপস্থিতি ও সাহসী পদচারণা। অনেক নারী মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে খেতাবপ্রাপ্ত মাত্র দু’জন নারী মুক্তিযোদ্ধা। তাদের একজন (তারামন বিবি) তার খেতাব প্রাপ্তির কথা জেনেছেন প্রায় ৩০ বছর পর। অথচ স্বাধীনতা অর্জনে দেশের তৃণমূল পর্যায়ের মানুষ ও আমাদের নারী সমাজেরও ছিল বিশাল অবদান। সম্পাদনা: রাশিদ