নিজেকে নারী হিসেবে দেখি না চেয়ারে বসলে দায়িত্বই বড় : কমিশনার কবিতা
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: দেশের প্রথম নারী নির্বাচন কমিশনার বেগম কবিতা খানম। তিনি বলেছেন, আমি যখন চেয়ারে বসি তখন নিজেকে নারী হিসেবে দেখি না। কারণ নিজেকে নারী হিসেবে ভাবার কোনো সুযোগ নেই। যখন কোনো চেয়ারের দায়িত্ব দেওয়া হয় তখন সেটা দেওয়া হয় ওই চেয়ারের জন্য ও কাজের জন্য। কিন্তু নিজেকে নারী মনে করে বসে থাকলে তো আর হবে না।
তিনি বলেন, আমি প্রথম নারী কমিশনার হতে পেরেছি এটা আমার জন্য অবশ্যই সম্মানের। এই জন্য আমি রাষ্ট্রপতির কাছে কৃতজ্ঞ। আমি যখন নারী কমিশনার হই তখন আমার চিন্তাও ছিল না কিংবা ভাবতেও পারিনি আমাকে নির্বাচন কমিশনার করা হবে। তবে মনে মনে আমার একটি সুপ্ত বাসনা ছিল দেশের জন্য আরও কিছু করার। চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর আমি সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের অপেক্ষায় ছিলাম। আর রাষ্ট্রপতি আমাকে সেই সুযোগ দিয়েছেন।
কবিতা খানম বলেন, আমি নির্বাচন কমিশনার হওয়ার পর দেশের প্রথম একজন নারী কমিশনার হলো এটা অবশ্যই নারী উন্নয়নের আরও এক ধাপ উন্নতি। কারণ এর আগে এই পদে কেউ দায়িত্ব পালন করেননি । কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এর আগে সেইভাবে হয়তো সরকার চিন্তাও করেনি। এবার প্রথম নারী কমিশনার দেওয়াতে আমি মনে করি আগামী দিনে আরও নারী কমিশনারও নিয়োগ পাবেন।
তিনি বলেন, নারীরা অনেক ক্ষেত্রেই সম্পৃক্ত হচ্ছেন। উন্নতি করছেন। নারীরা উন্নতি করার সঙ্গে সঙ্গে দেশ ও সমাজকেও উন্নতির দিকে নিয়ে যাচ্ছেন।
নারীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সংখ্যা আরও বাড়ানোর ক্ষেত্রে তিনি কি ভূমিকা নিবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, নারীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ বাড়ছে। কিন্তু এই সংখ্যা পর্যাপ্ত নয়। আগামী দিনে যাতে বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচনে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ে সেটা আমাদের সবাইকেই চেষ্টা করতে হবে। আর রাজনৈতিক দলগুলোও বেশি সংখ্যায় নারী নেত্রীদের মনোনয়ন দিতে হবে। সেই সঙ্গে নারীকে কেবল নারী মনে করে মনোনয়ন না দিয়ে পুরুষের পাশাপাশি তারাও যাতে রাজনীতিতে আরও বেশি সক্রিয় হতে পারেন ও ভূমিকা রাখতে পারবেন সেই ব্যাপারেও ব্যবস্থা নিতে বলে আশা রাখি।
তিনি বলেন, আমি নিজে যখন বিচারকের দায়িত্ব পালন করতাম সেখানে স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করেছি। একক সিদ্ধান্তই নিতাম বিচার করার ক্ষেত্রে। এখনো আমি যে দায়িত্ব পালন করছি সেখানে এককভাবে দায়িত্ব পালন করতে না পারলেও সম্মিলিতভাবেই আমাদেরকে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। আর আমরা সবাই আলাপ-আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। আগামী দিনেও নেব।
পুরুষ কমিশনারদের সঙ্গে কাজে কোনো সমস্যা বা জটিলতা তৈরির সুযোগ নেই বলেও তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, কাজ করাই বড় কথা। তাছাড়া আমি ব্যক্তিগত মত কারও উপর চাপিয়ে দিই না। আমি আমার মত দিই। যেকোনো বিষয়ে সবাই মিলেই আমরা সিদ্ধান্ত নিব। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীরা এগিয়ে যাচ্ছেন। এখনো অনেক ক্ষেত্রেই নারী বিচরণ পর্যাপ্ত নয়, আগামী দিনে সেটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এই জন্য এখনো যেসব সেক্টরে নারীর সংখ্যা কম ও নারী নেই সেখানে তাদেরকে যোগ্যতার ভিত্তিতে অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে।