সরাসরি সংসদ নির্বাচনে নারীরা এখনো পিছিয়ে রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও সরাসরি সংসদ নির্বাচনে নারীরা এখনো পিছিয়ে। বাংলাদেশে দ্বিতীয় সংসদে প্রথম একজন নারী সরাসরি একটি সংসদীয় আসনে নির্বাচিত হন। এই পর্যন্ত দশটি সংসদ নির্বাচন হয়েছে, এর মধ্যে কোনো সংসদেই নারী সংসদ সদস্যর সংখ্যা ১০০ উন্নীত হতে পারেনি। সংরক্ষিত আসনে ৫০ জন নারী পাওয়া গেলেও সরাসরি নির্বাচিত হতে পেরেছেন এমন সংখ্যা ২৫ পর্যন্তও উন্নীত হতে পারেনি। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ ছিল। ওই নির্বাচনে ৩০০ সাধারণ আসনের মধ্যে মোট ১৬ জন নারী সরাসরি নির্বাচিত হন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ ১২, বিএনপি ৩ আর জাতীয় পার্টি ১। যা ছিল গড়ে সাড়ে পাঁচ শতাংশ। আর ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি আসেনি। ওই নির্বাচনে ২১টি আসনে ২১ জন সংসদ সদস্য সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হন। যা শতকরা সাতভাগ। তবে সংরক্ষিত আসনসহ মোট ৭১ জন। যা শতকরা ২৩ শতাংশর বেশি।
প্রায় চার যুগ সময়ে সংসদে সরাসরি সাধারণ আসনে নির্বাচিত নারী সদস্যর সংখ্যা মাত্র ৭ শতাংশ। যেখানে বলা হচ্ছে একটি রাজনৈতিক দলে নারী নেত্রীর সংখ্যা ৩৩ শতাংশ করতে হবে। সরাসরি পুরুষ প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় জয়ী হয়ে আসতে পারবে কিনা পার্টি প্রধানদের মধ্যে এই ধরনের চিন্তা-ভাবনাও কাজ করে। এই জন্য সরাসরি আসনে প্রার্থীও দেওয়া হয় তুলনামূলকভাবে কম।
সংসদ সচিবালয়ের সূত্রে জানা গেছে, প্রথম সংসদে কোনো সরাসরি নির্বাচিত কোনো নারী সংসদ সদস্য ছিল না। তবে সংরক্ষিত আসনে ১৫ জন নারী ছিলেন। বংলাদেশের ইতিহাসে ১ম সরাসরি কোনো আসনে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয় লাভ করেন ১৯৭৯ -১৯৮২ সালের সংসদে। সেখানে খুলনা-১৪ আসন থেকে বেগম সৈয়দা রাজিয়া ফয়েজ এমপি হন। ওই সংসদে তিনিই ছিলেন একমাত্র সরাসরি নির্বাচিত এমপি। তবে তার বাইরে আরও ত্রিশ জন ছিলেন সংসদে সংরক্ষিত আসনে।
সংরক্ষিত নারী আসনে সংসদ সদস্য থাকলেও সাধারণ আসনে নারী কখনোই তেমন উল্লেখ ছিল না। তবে ১০ম জাতীয় সংসদে ৩৫০টি আসনের মধ্যে পুরুষ ২৭৭ আর নারী ৭১। এর মধ্যে সরাসরি নির্বাচিত হয়েছেন ২১ জন আর সংরক্ষিত আসনে ৫০ জন।
এর মধ্যে আওয়ামী লীগ ও তাদের জোট মোট ২৭৪ আসনে জয়লাভ করে। এর মধ্যে ২১৫ জন পুরুষ ও নারী ৫৯ জন। এর মধ্যে সরাসরি নারী ১৭ জন ও সংরক্ষিত আসনে ৪২ জন। ওয়াকার্স পার্টির ছয় জন সংসদ সদস্য এর মধ্যে ১ জন সংরক্ষিত আসনে। জাসদ এর সংসদ সদস্য চারজন। এর মধ্যে ২ জন নারী। ১ জন সরাসরি ও ১ জন সংরক্ষিত আসনে। তরিকত ফেডারেশনে ২ জন পুরুষ সংসদ সদস্য রয়েছেন তবে নারী নেই।
জাতীয় পার্টির মোট সংসদ সদস্য ৩১। এর মধ্যে নারী ৯ জন। সরাসরি ৩ সংরক্ষিত আসনে ৬ জন। জাতীয় পার্টির জেপির ২ জন সংসদ সদস্য। কোনো নারী নেই। বিএনএফ এর একজন পুরুষ সংসদ সদস্য। স্বতন্ত্রতে ১৬ জন পুরুষ নির্বাচিত হয়েছেন। তবে কোনো নারী নেই। দুটি আসন শূন্য রয়েছে।
এদিকে সংসদ সচিবালয়ের সূত্র জানা গেছে, বাংলাদেশের প্রথম সংসদ নির্বাচনে কোনো নারী সরাসরি ছিলেন না। তবে ১৫ জন পরে সংরক্ষিত আসনে সাংসদ হন।
১৯৭৯-১৯৮২ সালে প্রথম বেগম রাজিয়া ফয়েজ এমপি নির্বাচিত হন। ওই সংসদে সংরক্ষিত আসন ৩০টি করা হয়।
এরপর আস্তে আস্তে নারী সংসদ সদস্যর সংখ্যা বাড়তে থাকে। তৃতীয় সংসদে মহিলা চারটি আসনে জয়ী হন। এর বাইরে ৩০ জন ছিলেন সংরক্ষিত আসনে। তৃতীয় সংসদে শেখ হাসিনা ঢাকা-১০ আসন থেকে জয় লাভ করেন। রাজনীতিতে তিনি যুক্ত হয়ে প্রথম সংসদ সদস্য হন।
শেখ হাসিনা তৃতীয় সংসদ থেকে চতুর্থ সংসদ ছাড়া ও ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন ছাড়া ষষ্ঠ সংসদ ছাড়া অন্য সকল সংসদে ছিলেন। বেগম খালেদা জিয়া রাজনীতিতে যুক্ত হন ১৯৮২ সালে। এরপর তিনি নির্বাচনে অংশ নেননি এবং তিনি ১৯৯১ সালে প্রথম ৫ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন। ওই নির্বাচনে অংশ নিয়ে তিনি প্রথমবার এমপি হন এবং প্রধানমন্ত্রী হন। তিনি দশম সংসদেই প্রথম ঘটনা যে তিনি নেই।
শেখ হাসিনা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জনের পর ১২ জানুয়ারি শেখ হাসিনা তৃতীয়বারের মতো গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন তিনি প্রথম বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন। তার নেতৃত্বধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সে বছরের ১২ জুনের সংসদ নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছিল। ২০০১ সালে শেখ হাসিনা বিরোধীদলের নেতা নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর ৯ম সংসদীয় নির্বাচন হয়। এই নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। শেখ হাসিনা ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এর আগে ১৯৮৬ সালে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে শেখ হাসিনা ৩টি সংসদীয় আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির কিছু শীর্ষ নেতার একটি অনুরোধ সঙ্গে জানুয়ারি ৩ এ যোগদান করেন ১৯৮২। তিনি ১৯৮৩ সালে বিএনপির সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। খালেদা জিয়া বিএনপির চেয়ারপারসন হন ১৯৮৪ সালের ১০ মে। বিচারপতি সাত্তার রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার পর তিনি দলকে এগিয়ে নিয়ে যান। তার নেতৃত্বে বিএনপি একটি বৃহত্তম রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়। খালেদা জিয়া ১৯৯১, ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালে সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর তিন দফায় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ফোর্বস ম্যাগাজিনের মিসেস জিয়া বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ১০০ নারীর তালিকায় ২০০৬ ও ২০০৫ সালে ৩৩ এবং ২৯তম স্থান করে নেন।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য রওশন এরশাদ এখন সংসদের বিরোধী দলের নেতার দায়িত্ব পালন করছেন। তার রাজনৈতিক চলার পথ স্বামীর হাত ধরেই। তিনি ১৯৮৩ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত দেশের ফাস্ট লেডি ছিলেন। বিরোধী দলের নেতা হন ২০১৪ সালে। সম্পাদনা: এনামুল হক